রাসেল চৌধুরী
ঈদে সবচেয়ে বেশি আনন্দ শিশুদেরই। নতুন জামা, সেলামি, বেড়ানো, পছন্দের খাবার ইত্যাদি নানা কাজে ব্যস্ত থাকে শিশুরা। তাদের আনন্দের যেন শেষ নেই। তাদের নেই স্কুলে যাওয়ার তাড়া । আবার শিশুদের ঈদ ভাবাই যায় না তা হলো ঈদী।
ঈদের চাঁদ উঠার সাথে সাথে শিশুরা মনের আনন্দে নেচে উঠে। এরিসাথে শিশুদের কচি কন্ঠের কোলাহল বাড়ায়। কচি কচি শুভ্র হাতগুলো সাজে নানান মেহেদী রঙে।
আবার ঈদ যার কাছে যেভাবেই ধরা দিক না কেন! তার পরেও ঈদের চাঁদের জন্যে শিশুরা প্রতিক্ষা করে। নিত্যদিনের রুটিন মাফিক চলতে চলতে হাঁপিয়ে উঠা শিশুরা একটু আনন্দ খোঁজতে মুখিয়ে থাকে ঈদের চাঁদ উঠার দিকে। এ জন্যেই ঈদ চির সুন্দর!
আনন্দ উৎসবের অন্যরকম মাত্রা নিয়ে শিশু জীবনে ঈদ আসে। ঈদ হলো খুশীর দিন।প্রতিবছর সবার জীবনে ঘুরে ঘুরে আসে ঈদ। শিশুর মাঝে ঈদ আসা মানে হরেক রকম আনন্দের পসরা বয়ে যাওয়া। ঈদের নানারকম বৈচিত্রতা আছে আমাদের ছোট বড় সবার জীবনে। গ্রামের ঈদ, শহুরে ঈদ। নানা বর্ণে নানা সাজে যুগ পরম্পরায় ঈদের পরিবর্তন ঘটেছে।
ঈদকে কেন্দ্র করেই শিশুদরা জানতে পারে পারিবারিক বন্ধনগুলো। ইট পাথরের শহরের চার দেওয়ালে আবদ্ধ শিশুরা ঈদে পরিবারের চাচা-চাচি ফুফু-ফুফাসহ অন্যদের পেয়ে আনন্দিত হয় এতে আন্তরিকতাপূর্ণ সুসর্ম্পক গড়ে ওঠে তাদের মাঝে।
মূলত একমাস রোজা রাখার যখন টিভিতে ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে/এলো খুশীর ঈদ আপনাকে তুই বিলিয়ে দে/শোন আসমানী তাগিদ গানটি দিয়ে ঈদের আগমন বার্তা প্রকাশ করে। শিশুদের মধ্যে শুরু হয়ে যায় ঈদের ধুম। শিশুরা মাতোয়ারা হয়ে এখানে সেখানে হৈ চৈ হট্টগোলে মাতিয়ে রাখে প্রকৃতিকে।
একমাস সিয়াম সাধনার পরে রোজাদাররা আনন্দের অপেক্ষায় থাকে সেই চাঁন রাত থেকেই পরদিন সকালে গোছল করে নতুন জামা কাপড় গায়ে জড়িয়ে সুগন্ধি আতর লাগিয়ে কখন ঈদগাহে যাবে।আর শিশুদের তো পোয়া বারো। নামাজ শেষে শিশুদের দল ছুটে চলে এ পাড়া ও পাড়া, এ বাড়ি থেকে ও বাড়িতে কিম্বা দূর গ্রামের কোন আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে। ঈদ সেলামীর পাশাপাশি সেমাই, ফিরনী রান্না করা ভালো খাবার দাবার তো থাকছেই। এছাড়া মজার ব্যাপার হলো এখনো গ্রামে ঈদের আয়োজনে থাকে নানা পণ্য ও খেলাধুলা সমাদৃত গ্রাম্য মেলা। এ মেলা বসে নদীতীরে, গ্রাম্য হাটে, বটতলায়, স্কুল মাঠে মেলার মধ্যে থাকে লোকজ হাতের তৈরি নানা সামগ্রী নকশী। করা পাখা, পুতুল, রঙিন হাঁড়ি, মিঠাই, বাঁশের বাঁশি ইত্যাদি। হা-ডু-ডু, ফুটবল, গোল্লাছুট, দাঁড়িয়াবাঁধা, ফুটবল-ক্রিকেট ইত্যাদি ম্যাচ আয়োজনে ঈদকে করে বড়োই প্রাণবত্ম।
আরো আছে নাগরদোলা, ঘোড়ার দৌড়, নৌকা বাইচ মারফতি ও মুর্শিদি গানের জমজমাট আসর। তবে, নগর সভ্যাতার ছোঁয়া পেয়ে আজকাল গ্রামের সেইসব ঐতিহ্যবাহী দৃশ্যাবলী অনেকটা কমতে শুরু করেছে।
শহুরে ঈদ মানে ফাঁকা নগর, যানজট কোলাহল মুক্ত সুনসান পরিবেশ।আর এ ফাঁকা নগরীর ঈদের দিনটির জন্য অপেক্ষমাণ থাকে বিলাসিতার আষ্ট্রে পৃষ্ঠে জড়ানো বিত্তশালী বাবার ছেলেমেয়েরা। তারা বিলাশ বহুল পোশাক পরে ছুটে যায় পার্ক কিংবা রেস্টুরেন্টে।
আবার অনেক শিশু ঈদে দল বেঁধে ছুটে চলে সেলামী সংগ্রহে। শহুরে ঈদে প্রত্যেক বাড়িতে পোলাও,কোরমা, কাচ্চিবিরিয়ানি, ফিরনী, পায়েস, জর্দা, চিকেন ফ্রাই,পিৎজা, মোগলাই, কোপ্তা নানাজাতের মিষ্টিসহ উপাদেয় মসলায় হরেক রকম আধুনিক বিলাসী খাবারের সমাবেশ থাকে। সেলামীর আয়োজন সর্বত্র আছে বিধায় নগরের শিশুরাও ব্যতিক্রম থাকে না।
ছেলেমেয়েরা সেলামী সংগ্রহের জন্য দল বেঁধে ছুটে, বিলাসবহুল গাড়িতে, নাহলে ভাড়া করা গাড়িতে চলে অভিযান।
ঈদের আনন্দ নিয়ে শিশুদের কাছে জানতে চাইলে তারা জানায় তাদের আন্দের কথা, ফাউজিয়া উর্বি চতুর্থ শ্রেনীর ছাত্রী জানায়, ঈদের চাঁদ উঠলে আমাদের খুব আনন্দ লাগে। আমার হাতে মেহেদি পড়তে অনেক মজা করি। আর সকাল বেলা ভোরে ঘুম থেকে উঠে নতুন জামা কাপড় পড়ে বড়দের সালাম করি আর নতুন নতুন টাকায় ঈদ সেলামি নিতে এক বাসা থেকে আরেক বাসায় যায়। ঈদের মত এত খুশি আমি কখনও হয়নি। ঈদ আসলে ঈদের আনন্দে আমার ঘুম আসেনা ঈদের আগের রাত থেকে। আম্মুকে বিরক্ত মেহেদী লাগিয়ে দিতে।
শিশু কিশোরদের ঈদের আনন্দ শেষ হতে চায় না কোনভাবে। রমজানের রোজা শেষে এক ভিন্ন সুখের মাত্রায় শিশুরা খুঁজে পায় ভ্রাতৃত্বের এক অনুপম চেতনা। যেখানে সবাই একযোগে মেতে ওঠে আনন্দের সওগাতে। সাম্য ও মিলনের আনন্দের সেই সুর শিশু কিশোরসহ সবার মাঝে বিলিয়ে দিতে পবিত্র ঈদুলফিতরের চাইতে বড়ো উৎসব কী করা যায়? ঈদের খুশি ও আনন্দে কাটে যেন আগামীর প্রতিটি মুহূর্ত। ঈদের খুশি ছড়িয়ে পড়ুক প্রত্যেক শিশুর মাঝে।