ঈদের সময় রাজধানীসহ অন্যান্য শহর থেকে মানুষের গ্রামে ফেরা আমাদের ঐতিহ্যে রূপ নিলেও তাতে বাধ সেধেছে মহামারি করোনা। ঈদুল ফিতরের সময় বন্ধ ছিলো গণপরিবহন, চলাচলেও ছিলো নিষেধাজ্ঞা। স্বাভাবিকভাবে বাড়ি ফেরার সুযোগ ছিলো না শহরবাসীর। যদিও গত ঈদে ব্যক্তিগত গাড়িতে বাড়ি ফেরার সুযোগ ছিলো।
করোনা পরিস্থিতিতে আসন্ন ঈদুল আজহায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে ট্রেন চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। কিন্তু এবার পরিস্থিতি বিবেচনায় সীমিত পরিসরে যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা হচ্ছে। যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য অন্তত আরো সপ্তাহখানেক সময় নেয়া হবে।
ঈদের সময় বাড়ি ফেরা যাবে কি-না, সে বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এখন পর্যন্ত সরকারের অবস্থান এমনই যে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে মানুষ যেকোনো স্থানে চলাচল করতে পারবে। তবে ঈদের সময় বাড়ি যেতে কোনো বিধি-নিষেধ থাকবে কি-না তা ঈদের আগেই সরকারের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হবে বলে জানা গেছে।
তবে কেউ কেউ বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে এখন গণপরিবহন চলাচল করলেও ঈদের সময় তা অব্যাহত থাকলে করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। ঈদের সময় গণপরিবহন চলাচলের সুযোগ করে দিলে স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হবে না।
রেল মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রাখার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়। বর্তমানে চলাচল করা রেলের মতোই স্বাস্থ্যবিধি মেনে রেল চলাচলের প্রাথমিক পরিকল্পনা করা হচ্ছে। রেল চালানোর সিদ্ধান্ত হলে বাড়ানো হতে পারে অন্তত আরো ২০ জোড়া রেল। শতভাগ টিকিট বিক্রি হবে অনলাইনে। এরই মধ্যে ভিআইপি ছাড়া অন্য সব কোটায় টিকিট সংরক্ষণ পদ্ধতি তুলে নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। এবার ঈদেও অনলাইনে টিকিট কেনার ক্ষেত্রে সবাই সমান সুযোগ পাবেন।
আর ঈদকে সামনে রেখে ২০ থেকে ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে অগ্রিম টিকিট বিক্রির কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে সংশ্লিষ্টদের। তবে সবকিছু নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির ওপর।
রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ঈদে রেল সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্ভিস। কিন্তু আমরা সবচেয়ে জোর দিচ্ছি পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর। তাই এখনই ঈদের রেল সার্ভিস নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না। করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সরকারি নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে ৩১ মে থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে ১৯ দফা নির্দেশনা মেনে এসব ট্রেন পরিচালিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত রেলওয়ে প্রতিটি যাত্রী স্বাস্থ্যবিধি ও রেলওয়ের নির্দেশনা মেনে ট্রেনে ভ্রমণ করছেন। রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তাদের নিরাপত্তা সরঞ্জাম দেয়া হচ্ছে। তবে স্বাভাবিকের তুলনায় যাত্রীর উপস্থিতি কম।
তিনি বলেন, এসব বিষয় মাথায় রেখেই ঈদুল আজহায় রেল সার্ভিসের কথা ভাবা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত আমাদের ইচ্ছা- এ ঈদে রেল সার্ভিস চালু রাখা।
গত বছরের ঈদুল আজহায় সাড়ে ৩ লাখ যাত্রীকে সেবা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিলো বাংলাদেশ রেলওয়ের।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের এক সচিব বলেন, মানুষ নিজেরা যদি সচেতন থাকে তবে ঝুঁকিটা কম। মানুষকে তো আটকানো যায় না, পৃথিবীর কোনো দেশই তা পারেনি। তবে প্রত্যেকে সচেতন থাকলে নিরাপদ থাকা যাবে।
তিনি বলেন, প্রত্যেকে যদি সচেতন থাকে তবে মুভ করলেও খুব বেশি ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। ঈদে বাড়ি ফেরার বিষয়ে হয়তো কিছু নির্দেশনা থাকবে, সেটা ঈদের আগে জানিয়ে দেয়া হবে।
সচিব আরো বলেন, আমরা প্রত্যেককে স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য বলছি। মানুষ নিজেকে বাঁচানোর জন্য যদি সচেতন না হয় তবে আর কবে সচেতন হবে? সচেতনতাই এখন আমাদের একমাত্র বাঁচার উপায়।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy