তৌহিদ আহমদে রেজা
সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরা এলাকায় নাম সর্বস্ব একাধিক অন লাইন পোর্টালে ও একাধিক প্রিন্ট পত্রিকার কার্ড ব্যবহার করে অযোগ্য ,অশিক্ষিত , ফুটপাতের দোকানদার, গড়ির মেকার, অসামাজিক কাজে লিপ্ত নারীসহ অপেশাদার ব্যক্তিরা রাতারাতি সাংবাদিক বনে যাচ্ছেন।
অপরাধ অনুসন্ধানের নামে এরা নিজেরাই অপরাধ করে বেড়ায়।
ভুঁয়া খবর প্রকাশের হুমকি দিয়ে বা নানাভাবে ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করছে তারা। দলবদ্ধভাবে টার্গেট ব্যক্তি ও আশপাশের কিছু ছবি তুলে বলা হতো- ‘আপনার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আছে।’ এভাবে কিছুক্ষণ হম্বিতম্বি করার পর তারা যেত মূল প্রসঙ্গে।
মোটা অঙ্কের টাকা দিলে খবর প্রকাশ-প্রচার করবে না বলে জানাত। ভুক্তভোগী অনেকে বাধ্য হয়ে তাদের দাবি করা টাকা দিয়ে দিতেন। নামসর্বস্ব বিভিন্ন গণমাধ্যমের পরিচয়পত্র বহনকারী কথিত সাংবাদিকরা সম্পাদক সহ নিজেদের মধ্যে সেই টাকা ভাগ করে নিত।
দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর উত্তরা ও গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় এমন প্রতারণা করে আসছিল একটি ভুয়া সাংবাদিক চক্র। তাদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ এলাকার ব্যবসায়ী , রাজনীতিবীদসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ।
আর এই চক্রকে দীর্ঘদিন যাবৎ সার্বিকভাবে পৃষ্টপোষকতা করে আসছে ক্রাইম পেট্রোল বিডি নামের একটি অনলাউর পোর্টালের সম্পাদক ও প্রকাশক আলতাবুর রহমান চেীধুরী। তিনি তার স্বার্থ হাসিলের জন্য নিজের গাড়ি ব্যবহার করতে দিতেন এবং চাঁদাবাজী করার কোথায় কাকে কিভাবে গায়েল করা যায় সেই কলা-কৌশল শিখিয়ে দিতেন বলে সূত্রে জানা যায়।
সম্প্রতি ক্রাইম পেট্রোল বিডির স্টিকার যুক্ত আলতাবুর রহমান চৌধুরীর গাড়ি ব্যবহার করে সন্ত্রসী কার্যক্রম ও চাঁদাবাজী করার সময় সাধারন জনতার সহায়তায় সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের পাঁচ জনকে আটক করে উত্তরা পূর্ব থানা পুলিশ এবং ২ জন পালিয়ে যায় ।
এ ঘটনায় উত্তরা পূর্ব থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা হয়। মামলায় সাতজন আসামির মধ্যে ৪ জন আলতাবুর রহমানের পরিচালিত ক্রাইম পেট্রোল বিডির কার্ডধারী বলে থানা পুলিশ নিশ্চিৎ করে।
খোজ নিয়ে জানা যায়, আলতাবুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে নেশাখোর, সমাজের আবাশ্চিত নারী-পুরুষদের আইডি কার্ড দিয়ে দলবদ্ধ ভাবে বিভিন্ন এলাকায় পাঠাতেন ।
এরা মানূষকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে টাকা এনে আলতাবের হাতে দিতেন, বড় অংকের টাকা তিনি নিতেন বাকি টাকা হারা হারি ভাবে সদস্যদেও মধ্যে ভাগ করে দিতেন। অপকর্ম করার সময় মাঠে কেউ বিপদে পড়লে আলতাব চৌধুরী তিন মাস আগে তাকে চাকুরীচ্যুৎ করা হয়েছে বলে পল্টি মরেন বলে অনেকে জানান।
কয়েকজন মুক্তিযুদ্ধার নাম ব্যবহার করে প্রশাসন ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের চোখে সম্মানী ব্যক্তি সেজে অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন দেধারছে। নিজের নামের সাথে বীর মুক্তিযুদ্ধা ব্যবহার করলেও কোথায় যুদ্ধ করেছেন এ বিষয়ে কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।
ভুঁয়া সাংবাদিক তৈরির কারিগর আলতাবুর রহমানসহ কয়েকজন সম্পাদকের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।
সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর আবদুল্লাহপুরে হা-মীম গ্রুপের স্টাফ বাসে হামলা ও চাঁদা দাবির ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে তাদের নানা অপকর্ম। কিন্তু চক্রটির ব্যবহৃত গাড়িটি জব্দ না করায় জনমনে নানা প্রশ্নের সৃস্টি হচ্ছে।
পরিচয়পত্রের তথ্য অনুযায়ী আসামীরা হলো ঝর্ণা কথিত দৈনিক এই বাংলার স্টাফ রিপোর্টার, ফারুক সাপ্তাহিক উত্তরা বাণীর সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার, বিপ্লব ঢাকা টিভির ক্যামেরাপারসন, ক্রাইম প্যাট্রোল বিডির প্রতিনিধি ওজিউল্লাহ ও সাগর এবং একই প্রতিষ্ঠানের ইনভেস্টিগেটিভ করেসপনডেন্ট সুমি চৌধুরী ও মো. ইফতেখার নামে তাদের দুই সহযোগী পলাতক রয়েছে।
পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মো. শহিদুল্লাহ বলেন, সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের মতো ভুয়া সাংবাদিকদের তালিকাও পুলিশের কাছে রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
উত্তরা পূর্ব থানার ওসি মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, প্রাথমিক তদন্তে তাদের একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য বলে মনে হয়েছে। তাদের কথিত অফিসের ঠিকানায় গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। সাধারণত প্রতিটি গণমাধ্যম নিজস্ব পরিবহন ব্যবহার করে। অথচ এখানে দেখা যাচ্ছে, একটি গাড়িতে তারা সাত-আটজন ছিল, যারা বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মী বলে পরিচয় দিচ্ছে। নিজেদের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারেও তারা ঠিকঠাক তথ্য দিতে পারেনি।
তদন্ত সংশ্নিষ্টরা জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা আদৌ সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত নয়। তাদের কথিত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোও নামসর্বস্ব। তারা মূলত কিছু পরিচয়পত্র তৈরি করে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ায়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তি বা ব্যবসায়ীকে টার্গেট করে ভুয়া খবর প্রকাশের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করে। বেশিরভাগ মানুষ তাদের ব্যাপারে সম্যক ধারণা রাখেন না বলে দাবিকৃত টাকা দিয়ে দেন।
তবে মাঝেমধ্যে এমন চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারও করা হচ্ছে। এই চক্রটির পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এরই মধ্যে একজনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ধরনের আরও কিছু ঘটনার ব্যাপারে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে।
উত্তরা পূর্ব থানার পরিদর্শক (অপারেশন) নূর আলম মাসুম বলেন, তদন্তে প্রতারণার অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।