কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের উলিপুরে কোন কিছুই তোয়াক্কা করছে না উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. মশিউর রহমান। স্থানীয় সংসদ সদস্যর সুপারিশেও কবিজন নেসার ভাগ্যে এবারও জোটেনি ভাতা কার্ড।
জানা যায়, বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইনে ”বয়স্ক দুস্থ বিধবা, তবু ভাতা পান না কবিজন নেসা” ও ”৭১বছরেও ভাতা পান না কবিজন নেসা” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে, কুড়িগ্রাম-৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক এম এ মতিন কবিজন নেসার খোঁজখবর নিয়ে তাঁর নিজস্ব প্রতিনিধির মাধ্যমে খাবার সমাগ্রী ও নগদ অর্থ পাঠিয়ে দেন এবং ভাতাভুক্ত করা হবে বলে জানান বৃদ্ধা কবিজন নেসাকে। এছাড়াও কবিজন নেসাকে দেখতে যান উলিপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবু সাঈদ সরকার। তিনিও খাবার সামগ্রী ও নগদ অর্থ প্রদান করে ভাতা কার্ড প্রদানের আস্বাস দিয়েছিলেন। এর প্রেক্ষিতে উপজেলা সমাজসেবা অফিসে ভাতা কার্ডের জন্য কবিজন নেসার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেন। এসময় সংসদ সদস্য অধ্যাপক এম এ মতিন কবিজন নেসাকে ভাতাভূক্ত করার জন্য সমাজসেবা অফিসারকে বলেন। সমাজসেবা অফিসার কবিজন নেসাকে ভাতাভুক্ত করবেন বলে আশ্বাস দেন প্রতিনিধিকে।
২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নে ৯৭ জন বয়স্ক ও ৮২ জন বিধবা ভাতা প্রাপ্তির জন্য তালিকাভুক্ত হয়। এই তালিকাতে ৭২ বছর বয়সী বৃদ্ধা কবিজন নেসার নাম নেই।
এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. মশিউর রহমান জানান, যখন মাঠ পর্যায়ে যাছাই-বাছাই করা হয় তখন তিনি মাঠে ছিলেন না। পরে আমাকে তার কাগজপত্র দিয়েছে বলে তাকে ভাতাভুক্ত করা হয়নি এবং নীতিমালার দোহাই দিয়ে বিষয়টি পাস কাটিয়ে যান তিনি।
উল্লেখ্য, একে তো দুস্থ বিধবা তার মধ্যে বয়স্ক ব্যক্তি। দুই ক্ষেত্রেই তিনি সরকারি ভাতা ও সুযোগসুবিধা পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু পান না একটিও। জাতীয় সনদ অনুযায়ী তার জন্ম ১৬ আগষ্ট ১৯৪৮ সাল।
হাতিয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ৭২ বছরের বৃদ্ধা কবিজন নেসা মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর স্বামী নটকু শেখকে হারান ৪৯ বছর আগে। দিনমজুর স্বামীর আয়েই চলত সংসার। সঞ্চয় বলতে কিছুই ছিল না তাঁর। উপায় না পেয়ে তিন সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে অন্যের বাড়িতে কাজ নেন কবিজন নেসা। সকালে সন্তানদের ঘরে রেখেই কাজে বের হতে হতো। সারা দিন কাজ করে বিকেলে খাবার নিয়ে ঘরে ফিরে সন্তানদের খাওয়াতেন। এভাবে খেয়ে না খেয়ে সন্তানদেরকে বড় করে বাড়ীর পাশে মেয়েকে বিয়ে দেন। ছেলেকে বিয়ে করান। ছেলের অভাবের সংসারে জীবন বাচাঁতে ফেরি করে গ্রামে গ্রামে রুটি বিক্রি করতেন একসময়।
বয়সের ভারে এখন কবিজন নেসা (৭২) লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটেন। কোন রকমে হাঁটাচলা করতে পারলেও তেমন কোনো কাজ করতে পারেন না। চোখে দেখেন কম, আবার কানেও শুনেন না। শরীরে আগের মতো শক্তি নেই। শরীরে বাসা বেঁধেছে বাধর্ক্যজনিত নানা অসুখ। কিন্তু ওষুধ কেনার সামর্থ্যও নেই। অনাহারে-অধার্হারে মেয়ের সংসারে দিন কাটছে তার।
মেয়ের অভাবের সংসারে খেতে হচ্ছে আর থাকতে হচ্ছে দিনমুজুর ছেলের ঘরের এককোনে।
Leave a Reply