''মোক দেখার কাও নাই বাবা, মোক একটা কম্বল দিমেন। একনা ঘরের ব্যবস্থা করি দিলে আল্লাহ তোমাক ভাল করবে। মুই মইলে ( মারা গেলে) লাস দাফন করিবার মামুষও মোর নাই, কথাগুলো এক নিশ্বাসে শেষ করে চোখ মুচেন- রমিচা বেওয়া। তার এই আবেগ মাখা আর্ত্ননাদ হয়তো সমাজপতিদের মনকে নারা দিবে না, পৌচ্ছাবেনা সরকারী কোন কর্মকর্তার কান পর্যন্ত।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দক্ষিন গড্ডিমারী এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা বাজারের পশ্চিম পার্শ্বে বাঁশের বেড়া দিয়ে তৈরি ঘর, আর পলিথিনের ছাউনি দিয়ে বানানো ছোট একটি চালা ঘরে বাস করছেন রমিচা বেওয়া। বৃষ্টি এলে ঘরের এক কোণে গুটিসুটি মেরে নির্ঘুম রাত কাটে তার। দুর্দশাগ্রস্ত আর ভাগ্য বিড়ম্বিত নারী রমিচা বেওয়া (৫৫) । অনেকেই সরকারি-বেসরকারি সাহায্য পেলেও এ পর্যন্ত কিছুই জোটেনি তার ভাগ্যে।
নিত্য অভাব আর অসুস্থতাকে সাথে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে তার দিন কাটছে। রাতেও ঘুমাতে পারেন না নিশ্চিন্তে। বৃষ্টি এলে ঘরের এক কোণে গুটিসুটি মেরে নির্ঘুম রাত কাটে তার। নিজের জমি না থাকায় প্রায় ৭/৮ বছর ধরে বাহানত উল্ল্যাহ মেম্বারের দেয়া সামান্য জমিতে পলিথিন টিন দিয়ে চালা করে মানবেতর জীবনযাপন করছেন সে।স্বামী সন্তান হীন রমিচার চেহারায় বয়সের ছাপ স্পষ্ট হলেও এখন পর্যন্ত ভাগ্যে জোটেনি ভাতা, ভিজিডি কার্ড, বা সরকারী উল্লেখ যোগ্য কোন সাহায্য, কিংবা মাথা গোঁজার মতো একটা সরকারি ঘর। দিনমুজুরী ও মানুষের বাড়ীতে ঝিয়ের কাজ করে চলে এই অভাগীর সংসার। প্রচণ্ড শীতে ছিড়াফাটা কাপড় গায়ে জড়িয়ে শীত নিবারনপর ব্যার্থ চেষ্টা করেন। তবুও আজ পযন্ত তার ভাগ্যে একটি কম্বলও জোটেনি।
ভুমিহীন এই নারীর থাকার একটি ঘর গত ৬/৭ মাস আগে ঝড় ও প্রচুর বৃষ্টিতে ভেঙ্গে পড়ে। সেই থেকে এই ভাঙ্গা টিনের চালা ঘরে এই ঠান্ডায় বসবাস করছের কোন ভাবে। বিভিন্ন সময় স্থানীয় মেম্বার চেয়ারম্যান ও হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিসে গিয়ে টিনের জন্য আবেদন দিয়েও আজ পর্যন্ত টিন পাননি সে। টাকা পায়সা না থাকায় ভাঙ্গা ঘরে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
রমিচ বেওয়া উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের মৃত আহের উদ্দিন এর বড় মেয়ে। স্বামীর বাড়ী সিংগীমারী ইউনিয়নের কানিপাড়ায় হলেও স্বামী- আবুল কাশেম এর মৃত্যুর তার জায়গা জমি না থাকায় বর্তমানে দক্ষিন গড্ডিমারী এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা বাজারের ওদুরে পরিত্যাক্ত একটুকরো জমিতে চালাঘর করে বসবাস করছেন।
সরেজমি গিয়ে দেখা গেছে, কনকনে শীত আর ঠান্ডা বাতাসে ভাঙ্গা টিনের ঘরে প্লাস্টিক মুড়িয়ে কোন মতে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ঘরের সব টিন জং ধরে ভেঙ্গে পড়েছে। ঘরে থাকার কোন পরিবেশ নেই। স্বামী মারা গেছে ১০ বছর আগে। নিঃসন্তান হওয়ায় নেই খোজ নেয়ার কোন মানুষ। সরকারী ভাবে পায়নি কোন ভাতা। এ ভাবেই কষ্টে দিন কাটছে তার। প্রধান মন্ত্রীর কাছে একটি সরকারী বাড়ি পাওয়া দাবী তোলেন। যাতে করে জীবনের শেষ সময়ে একটু শান্তিতে মরতে পারেন।
রমিচা বেওয়া বলেন, আমি দীর্ঘ দিন ধরে মানুষের জমিতে বসবাস করছি। আমার তিন কুলে কেউ নেই। আমার ঘর ভেঙ্গে পড়েছে ঘরটি তোলার কোন উপায় নেই। আমি সরকারে কাছে একটি ঘর চাই। ইউএনও কাছে টিনের জন্য দরখাস্ত দিয়েছি অনেক বার জানিনা ইউএনও' আমার সেই আবেদন দেখেছেন কি না। কেউ যদি আমার ঘরটি মেরামতের জন্য টিন দিয়ে সাহায্য করতেন তাহলে প্রান ভরে দোয়া দিতাম।
ওই গ্রামের প্রতিবেশী কাঠ ব্যবসায়ী মোস্তফা জানান, রমিচা নিঃসন্তান তার থাকার ঘরটি ভেঙ্গে পড়েছে। টাকা পয়সা না থাকায় ভাঙ্গা ঘরটিতে রাত্রীযাপন করছেন। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে তার জন্য একটি সরকারী ঘর পাওয়া উচিৎ বলে মনে করি।
সিংগীমারী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন দুলু বলেন, তার বিষয়ে আমার জানা নেই তবে সরকারী ঘরের জন্য আবেদন দিলে বিষয়টি দেখা যাবে।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সামিউল আমিন জানান, ‘খোঁজখবর নিয়ে তাকে সহযোগীতা করা হবে।