ডেস্ক রিপোর্ট | শুক্রবার, ১৫ অক্টোবর ২০২১ | প্রিন্ট
২০১৪ সালে ফলাও করে গণমাধ্যমে প্রচার হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে হতে যাওয়া দণ্ডিত বন্দি বিনিময় চুক্তির বিষয়। সেই সময় দেশটির বিভিন্ন জেলে প্রায় হাজারখানে বাংলাদেশি কারাবন্দি থাকার খবরও গণমাধ্যমে উঠে আসে। সাত বছর পেরিয়ে গেলেও আদতে এগোয়নি বন্দি বিনিময়ের সেই চুক্তিটি। বাংলাদেশ দূতাবাস ও বাংলাদেশ কনস্যুলেট বলছে, এখনও ৫ শতাধিক বাংলাদেশি দেশটির বিভিন্ন জেলে কারাভোগ করছে। তবে তুলনামূলকভাবে আগের চেয়ে অনেকাংশেই কমেছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অপরাধ প্রবণতা। আপাতত এটিকেই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা
জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশিদের অপরাধ প্রবণতা ও কারাগারে অপরাধীর সংখ্যা বৃদ্ধির ইস্যুতে ২০১২ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয় দেশটির নতুন শ্রমিক ভিসা। টানা নয় বছর বাংলাদেশের শ্রমবাজার বন্ধ থাকায় অন্যান্য দেশের শ্রমিকরা একচেটিয়া দেশটির শ্রমবাজারে প্রভাব বিস্তার করছে। এতে করে বাণিজ্য সম্প্রসারণে যেমন বাধাগ্রস্ত হয়েছেন বাংলাদেশিরা, তেমনি বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। এ কারণে মধ্যপ্রাচ্যের কারাগারগুলো থেকে অপরাধীর সংখ্যা কমাতে ২০১২ সালের শেষের দিকে আরব আমিরাতসহ চার দেশের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তির প্রক্রিয়া শুরু করে বাংলাদেশ। আমিরাত ছাড়াও চুক্তির পরিকল্পনায় ছিল কুয়েত, ওমান ও কাতারের নাম। এরপর ২০১৪ সালে আমিরাত সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতা, দণ্ডিত বন্দি বিনিময় চুক্তি হওয়া বিষয়টি গণমাধ্যমে উঠে আসে। অথচ সাত বছরেও তা আর আলোর মুখ দেখেনি।
তবে দেশটিতে ধীরে ধীরে কমছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অপরাধ ও অভিযোগের মাত্রা। বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতারা অভিযোগ করে বলছেন, স্থানীয় গণমাধ্যমে ভিনদেশিদের আধিপত্য থাকায় তারা বাংলাদেশের অপরাধগুলো বেশি প্রচার করত। যাতে করে বাংলাদেশের শ্রমবাজারের ওপরে এর একটা প্রভাব পড়ে।
আমিরাত প্রবাসী সিআইপি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ২০১০ সালের পর থেকে বাংলাদেশ কমিউনিটির অবস্থান শক্তিশালী হচ্ছে। এর আগেও স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশিদের ছোটখাটো অপরাধকে ব্যাপক আকারে প্রচার করত। যে কারণে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশিদের অপরাধ বেশি মনে হত।
আবুধাবি দূতাবাসের লেবার কাউন্সিলর আবদুল আলিম মিয়া সমকালকে জানান, বর্তমানে আমিরাতে বাংলাদেশিদের অপরাধ প্রবণতা কমেছে। আবুধাবির কিছু জেলে মাত্র একশ’ জনের মতো বাংলাদেশি কারাবন্দি রয়েছে। তবে করোনার জন্য সরাসরি জেল পরিদর্শনের সুযোগ না থাকায় কারাবন্দিদের সঠিক তথ্য জানানো যাচ্ছে না।
দুবাই বাংলাদেশ কনস্যুলেটের লেবার কাউন্সিলর ফাতেমা জাহান সমকালকে বলেন, করোনার কারণে বন্দিদের সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না। দুবাই ও উত্তর আমিরাতের বিভিন্ন জেলে হত্যা মামলা, মাদকের দায়ে অভিযুক্ত, চেক জালিয়াতি ও মানব পাচারের অভিযোগে কিছু বাংলাদেশি বন্দি রয়েছে। এর মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত ও বিচারাধীন রয়েছে অনেকগুলো মামলা।
ফাতেমা জাহান আরও বলেন, দেশটিতে ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশিদের অপরাধ প্রবণতা কমলেও ব্যবসা সংক্রান্ত টাকা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আইনগত কোনো ভিত্তি না থাকায় ঝামেলা তৈরি হচ্ছে- এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে প্রচুর। সবকিছু মিলিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবাসীদের আরও বেশি সচেতন করে তুলতে উদ্যোগ নিতে হবে।
দুবাই বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল বিএম জামাল হোসেন বলেন, সবমিলিয়ে দুবাই ও উত্তর আমিরাতের বিভিন্ন জেলে পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশি বন্দি থাকতে পারে। বন্দি বিনিময়ের ব্যাপারে আমিরাতের সঙ্গে চুক্তির খসড়া নিয়ে আলাপও হয়েছিল। কিন্তু ফাইনালি চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়নি। কারণ, দুই দেশের বন্দির ওপর ভিত্তি করে চুক্তি হওয়ার কথা। আমিরাতে বাংলাদেশি বন্দি থাকলেও বাংলাদেশের জেলে আমিরাতের কোনো বন্দি নেই। যে কারণে চুক্তিটি আর এগোয়নি।