রেখা মনি, নিজস্ব প্রতিবেদক
মা বাবার কোল জুড়ে ২৮ বছর আগে জন্ম নেওয়া মেরিনা খাতুন এর শৈশব কেটেছে অনেকটা আনন্দে।তবে কিশোরী বয়সে মা _বাবাকে হারিয়ে শারীরিক ও প্রতিবন্ধী এই তরুণীকে ছাড়তে হয়েছে ঘরবাড়ি। সৎ মায়ের অবহেলা আর বঞ্চনা সইতে না পেরে এক সময় তার আশ্রয় হয় খালার বাড়িতে। সেই থেকে ১০ বছর ধরে খালার বাড়ির উঠানের টংগের নিচে বসবাস। প্রতিবন্ধী মেরিনা খাতুন এর ঝড় কিংবা রোদ সবই মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে তার। কনকনে ঠান্ডার সময়টা পার করতে হচ্ছে টংগের নিচে থেকে ।শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় বিয়ের পিঁড়িতে বসার সৌভাগ্য হয়নি মেরিনার ।আর যে খালা টংগের নিচে ঠাই নিচে দিয়েছেন ,তারাও সচ্ছল পরিবার নয় ।খালাতো ভাই রিকশাভ্যান চালান । দিন রোজগারে এমনিতেই অভাবের সংসার।তবুও দুবেলা দুমুঠো অন্ন তুলে দিচ্ছেন প্রতিবন্ধী খালাতো বোনের মুখে। মেয়েরা দুই পায়ে হাটা চলা বা কথা বলতে অক্ষম। তার খালা আর খালাতো ভাইয়ের দয়ায় টিকে আছেন এখানে। সরেজমিন গাইবান্ধার পলাশবাড়ি উপজেলার মন্দুয়ার গ্রামে দেখা মেলে মেরিনা খাতুনের। খালার বাড়ির উঠানে পুরানো কাপড়ে ঘেরা টংয়ের নিচে কোনমতে শুয়ে থাকে। খালা শালেহা বেগম নিজের মেয়ের মত দেখাশোনা করছেন। নিজের সন্তানের মত করে আহার তুলে দেয় মুখে ।খালা সালেহা বেগম বলেন ১০ বছর ধরে বসবাস করে আসছে মেরিনা।আমার নিজের সংসার চলে কোনমতে টেনেটুনে একটা ঘরের এক পাশের ছেলে থাকে অন্য পাশে আমি। বাকি ঘর না থাকায় কষ্ট করে টংয়ের নিচে থাকতে হচ্ছে মেরিনাকে ।এতে নিজের খারাপ লাগলেও কোন উপায় নেই। পৃথিবীতে আপন বলতে কেউ নেই মেরিনার।মা _বাবা ,দাদা -দাদি সবাই মারা গেছেন ।নিজের এখন ঢাকায় থাকলেও কোনদিনও খোঁজ করতে আসেননি।গত ১০ বছরে প্রতিবন্ধী ভাতা ছাড়া অন্য কোন সাহায্য সহযোগিতা জোটেনি মেরিনার কপালে। তিনি সরকার ,জনপ্রতিনিধিসহ সমাজের বিত্তবানদের কাছে মেরিনাকে মানসিক ভাবে বাঁচার জন্য একটি ঘর ও হুইল চেয়ারের আকুতি করেন। মেরিনার খালাতো ভাই সাদেকুল ইসলাম বলেন,এতিম ও প্রতিবন্ধী মেরিনার কোন আপনজন বেঁচে নেই ,নিজেদের সামর্থ্য না থাকায় বাধ্য হয়েই তাকে রাখতে হয়েছে টংয়ের নিচে।প্রচন্ড শীতের রাতগুলো কাটিয়েছেন তিনি টংয়ের নিচে থেকে ।তার দাবি সরকারি একটি ঘর পেলে অনন্ত ভালোভাবে থাকতে পারতেন মেরিনা।স্থানীয় এলাকাবাসী জানান ,আট-দশ বছর থেকে দেখছি দেখে আসছি মেরিনা খালার বাড়ির টংয়ের নিচে থাকে।তার খালা সালেহা তার খোঁজ-খবর নেয় ,খালার সংসারের অভাব থাকলেও তা তুলে দেন মেরিনার মুখে। একটা ঘরের ব্যবস্থা হলে অনন্ত টং ঘরে থাকা থেকে মুক্তি পেতে মেরিনা।তা মেরিনার জন্য সরকারি একটা ঘরের ব্যাপারে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন। পলাশবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান মোকছেদ চৌধুরী বিদ্যুৎ এই প্রতিবেদকের কাছ থেকে প্রতিবন্ধী মেরিনা খাতুনের অসহায়ত্ব ও টংয়ের নিচে বসবাসের কথা শুনে বলেন, দ্রুত মেরিনার জন্য একটি সরকারি ঘর দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিব। নিজের জমি না থাকলে প্রয়োজনে অন্যজনের কাছ থেকে এক শতক জমি নিয়ে ঘর করে দেব।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy