চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওয়ার্ড বয় এবং দালালদের দৌরাত্ন্য বন্ধের অনুরোধ জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর ১৪ দলের সমন্বয়ক এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। আজ সোমবার (১৬ অক্টোবর ২০২৩ইং) সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ শামীম আহসান এর মুঠোফোনে ফোন করে তিনি এ অনুরোধ জানান।
এসময় সুজন বলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ চট্টগ্রামের রোগীদের জন্য একমাত্র বৃহৎ সরকারি হাসপাতাল। শুধু চট্টগ্রাম জেলা নয় চট্টগ্রাম বিভাগের রোগীরাও চিকিৎসার প্রয়োজনে এ হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী হাসপাতালের বর্তমান শয্যা সংখ্যা ২২শ হলেও প্রতিনিয়ত প্রায় তিন হাজার রোগী ভর্তি থাকছে। জরুরি ও বহির্বিভাগ মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে তিন হাজার রোগী এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। এতো বিপুল সংখ্যক রোগীদের কাছে আতংকের নাম হচ্ছে কতিপয় ওয়ার্ড বয় এবং বিভিন্ন প্যাথলজি দালালরা। যাদের দাপটে অসহায় হয়ে পড়েছে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগী এবং তাদের আত্নীয় স্বজনগণ। এসব ওয়ার্ড বয় এবং দালালরা প্রতিনিয়ত রোগীদের উপর জুলুম করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। টেস্ট, এক্স-রে কিংবা চিকিৎসার প্রয়োজনে রোগীকে এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার সময় রোগীরা বিভিন্নভাবে হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। এক্ষেত্রে গরীর রোগীরা বেশি অবহেলার শিকার হন এসব ওয়ার্ড বয় দ্বারা। তাছাড়া রোগীর বিভিন্ন টেস্টের ক্ষেত্রে প্যাথলজি দালালরা চমেক হাসপাতালে টেস্টের পরিবর্তে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে রোগীদের নিয়ে যেতে জোরাজুরি করে। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়রাও এসব অনৈতিক কাজে দালালদের সহযোগিতা করে। এসব ওয়ার্ড বয় এবং দালালরা জোর করে রোগীদের কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। দিতে না চাইলে ক্ষেত্র বিশেষে রোগীর স্বজনদের শারিরীক নির্যাতনও করে থাকে। এতে করে প্রায়শই রোগী এবং রোগীর স্বজনদের সাথে এসব ওয়ার্ড বয় এবং দালালদের ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকে। এতে করে হাসপাতালের স্বাভাবিক চিকিৎসার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। সরকার হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করছে কিন্তু এসব ওয়ার্ড বয় এবং দালালদের জন্য সরকারের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। সুজন আরো বলেন চট্টগ্রামের প্রায় ১ কোটি জনগনের স্বাস্থ্যসেবার ভরসার স্থল হচ্ছে এ হাসপাতালটি। এতো বিপুল সংখ্যক জনগনের বিপরীতে হাসপাতালের রোগীর ধারণ ক্ষমতা নিতান্তই কম বলা চলে। চিকিৎসার জন্য অনেক রোগীই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পর্যাপ্ত সীট কিংবা চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না। এতে করে বাধ্য হয়েই রোগীদের বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে। এতে করে সাধারন রোগীদের অর্থের অপচয় হচ্ছে। তাই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ধারণ ক্ষমতা উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) এর আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন খোরশেদ আলম সুজন। চমেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ শামীম আহসান অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে সুজনের বক্তব্য শুনেন। তিনি বলেন হাসপাতালের কিছু সংখ্যক আউটসোর্সিং কর্মচারী এ ধরণের কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত বলে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। আমরা এ ধরণের কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশনা প্রদান করেছি। পাশাপাশি আমরা রোগীদের বিভিন্ন অভিযোগ বিষয়ে স্পেশাল মনিটরিংয়ের ব্যবস্থাও চালু করেছি। তিনি বলেন প্রতিদিন চমেকে চিকিৎসা নিতে আসেন গড়ে সাড়ে তিন হাজার রোগী। তবে শয্যা সংখ্যা বাড়লেও হাসপাতালের জনবল বাড়েনি। তুলনামূলক কম বাজেট ও জনবলসহ বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার মাঝেও রোগীদের চিকিৎসাসেবার মান বাড়াতে চেষ্টা করছেন বলে জানান তিনি। হাসপাতালের সেবার মান আরো উন্নত করতে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান।