ইঞ্জিনিয়ার হাফিজুর রহমান খান, কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধিঃ
কক্সবাজারের পেকুয়া থানার তৎকালীন ওসি হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে ধর্ষণের অভিযোগ এনে আদালতে একটি মামলা করেছিলেন এক গৃহবধূ। অভিযোগ করা হয়, আইনী সহায়তার জন্য বাসায় গেলে তাকে ইচেছর বিরুদ্ধে ধর্ষণ করা হয়। এ মামলার পর ওসির শাস্তির দাবিতে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে স্থানীয়রা। এসবের নেতৃত্ব দেন উপজেলা ও স্থানীয় যুবলীগের কয়েকজন নেতা। এ ঘটনায় ওসি হাবিবকে শাস্তিমূলক বদলী করা হয়েছিল। এ ঘটনায় মনে কষ্ট নিয়ে এখন তিনি (ওসি) অবসরে।।
কিন্তু দীর্ঘ সাত বছর পর একটি অডিও রেকর্ড এ মামলার রহস্য উদঘাটন করে দিয়েছে। আন্দোলনকালীন সময় অভিযুক্ত ওসির দাবি ছিল, একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে অভিযোগ তুলে এ মামলাটি করিয়েছেন। অনৈতিক সুবিধা না দেওয়া ও কিছু সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের কারনে তাকে ফাঁসানো হয়েছে। এখন অডিও ফাঁসের পর ওসি হাবিবের দাবিই সত্যি হিসেবে উঠে এসেছে। ওই সময় ওসি হাবিবের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া যুবলীগ নেতাদের একজন জালাল উদ্দিনই ওই গৃহবধূকে ধর্ষণ করেছিলেন বলে ফাঁস হওয়া অডিওতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে।
জালাল উদ্দিনের ফাঁস হওয়া একটি অডিওতে তাকে বলতে শুনা যায়, আমি একা প্রশাসনের সঙ্গে মোকাবেলা করেছি। ওসির সঙ্গে বাড়াবাড়ি তাও আমি করেছি। যখন তারা কক্সবাজারে যায়, তখন অস্ত্রের ব্যাগ আমার হাতে থাকে। আর ওসি হাবিবের বিরুদ্ধে যেটি ধর্ষণ মামলা সাজিয়েছিলাম, যে মেয়েটাকে সাজিয়ে (বাদী বানিয়েছিলাম) তাকে আমি ধর্ষণ করেছিলাম। যাতে ঘটনা ফাঁস না হয়, সে কারনে বিশ্বস্ত কাউকে না পেয়ে ধর্ষণ আমি নিজেই করেছিলাম। মেডিকেল রিপোর্টে যাতে ধর্ষণের বিষয়টি উঠে আসে। অল্পের জন্য আমি বেঁচে গেছি। ডিএনএ টেস্ট হলে আমিই ফেঁসে যেতাম। আরও বলতে শুনা যায়, এসব তো সামান্য আরও অনেক বড় বড় কাজ আমি করেছি।
জালাল উদ্দিন পেকুয়া উপজেলা যুবলীগের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক এবং উজানটিয়া ইউনিয়ন বিএনপির নেতা আকতারের ছেলে।
ওসির বিরুদ্ধে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০১৪ সালের ১০ জুলাই জমির বিরোধ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ নিয়ে ওই নারী পেকুয়া থানায় গেলে দায়িত্বরত এক কনস্টেবল ওসির সঙ্গে দেখা করার জন্য তাকে বাসায় যেতে বলেন। ওই দিন রাত ১০টায় ওসির বাসভবনে গেলে ওই নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে ওসি হাবিবুর রহমান তাকে ধর্ষণ করেন। ১৪ জুলাই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন ওই নারী। বিজ্ঞ বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে তদন্তের নির্দেশ দেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, জালালের পুরা পরিবার বিএনপি জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তার পিতা বিএনপির নেতা ও ভাই শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কিন্তু জালাল তার অতীতের অপকর্ম ঢাকতে কৌশলে যুবলীগের আশ্রয় নেন।
অভিযোগ আছে, যুবলীগ নেতা জালালসহ পেকুয়া উপজেলায় একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। যারা নিয়মিত চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত। মূলত সে সিন্ডিকেটের কয়েকজন চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের আইনের আওয়াতায় আনায় এবং তাদেরকে অনৈতিক সুবিধা না দেওয়ার কারনে তৎকালীন ওসি হাবিবের বিরুদ্ধে মিথ্যা ধর্ষণের মামলাটি করা হয়েছিল। ওইসময় পেকুয়া থানায় কাজ করা একজন পুলিশ পরির্দশক জানান, জালাল অনেক পুলিশ সদস্যকে কৌশলে কক্সবাজারের হোটেলে এনে সুন্দরী নারীদের সাথে সময় কাটানোর ব্যবস্থা করেতন। এসব বিষয় ভিডিও ধারণ পরবর্তী পুলিশ অফিসারদের বø্যাকমেইল করে অনৈতিক সুবিধা আদায় করতেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ধর্ষণ মামলার বাদী ওই গৃহবধূ ওমরাহ হজ করে এসেছেন জানিয়ে বলেন, এসব বিষয়ে এখন কোন কথা বলতে চাই না।
তবে গৃহবধূর একজন আত্মীয় জানান, ওসি হাবিবের বিরুদ্ধে তাকে মিথ্যা ধর্ষণের মামলার বাদী হতে বাধ্য করেছিলেন জালাল। তার দাবি, বিভিন্ন সময় মামালার বাদী গৃহবধূকে জালাল জোরপূর্বক একাধিকবার ধর্ষণ করেছেন। মূখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন উল্লেখ করে প্রশাসন সহযোগীতায় এগিয়ে আসলে ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূ জালালের বিরুদ্ধে মামলা করতেও প্রস্তুুত বলে উল্লেখ করেন তিনি। অডিও এবং অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ফাঁস হওয়া অডিও বিষয়ে কোন মন্তব্য না করে যুবলীগ নেতা জালাল উদ্দিন বলেন, আমি ভিলেজ পলিটিক্স ও ষড়যন্ত্রের শিকার। এসময় তিনি নিজেকে সাংবাদিক দাবি করে এ বিষয়ে প্রতিবেদন না করার অনুরোধ করেন। যোগাযোগ করা হলে পেকুয়া থানার তৎকালীন ওসি হাবিবুর রহমান বলেন, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক ওই মামলায় আমি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছি। এ মিথ্যা ঘটনায় এতটা অপদস্থ হয়েছি যা ভাষায় প্রকাশ যোগ্য নয়। গত বছর চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, এ অভিযোগের বিষয়ে আল্লাহর বিচারের অপেক্ষায় রয়েছি।
বিষয়টি সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে, চট্টগ্রাম রেঞ্জর ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন আমাদের প্রতিনিধি ইঞ্জিনিয়ার হাফিজুর রহমান খানখান'কে বলেন, বিষয়টি অবগত ছিলাম না। একটি অডিওটি হাতে এসেছে। এ সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy