কক্সবাজারের চকরিয়ায় সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় গৃহবধূকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ ঘটনায় চারজনের নাম উল্লেখ করে ৬ জনকে আসামী করে থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগী ওই নারী।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের মোরাপাড়ার হাপানিয়াকাটা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
মামলায় আসামী করা হয়েছে, চকরিয়ার বরইতলি ইউনিয়নের হাফালিয়া কাটা ( মোড়াপাড়া ) এলাকার বাসিন্দা জহির আহম্মদের ছেলে শওকত আলম (২৮), তার বাবা জহির আহম্মদ (৫০) ও মা সুফিয়া খাতুন (৫০) এবং শওকতের স্ত্রী শাহিনা আক্তার (২৩)। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরো দুইজনকেও আসামী করা হয়।
এ ঘটনায় অভিযুক্তের বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ এবং ওই গৃহবধূকে পুলিশি হেফাজতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
বুধবার ওই নারীকে নির্যাতনের একটি ভিডিওচিত্র ফেইসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ঘটনাটি জানাজানি হয়। তবে ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার বিকাল পৌণে ৩ টায় চকরিয়া উপজেলার বরইতলি ইউনিয়নের হাফালিয়া কাটা (মোড়াপাড়া) এলাকায়।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, কয়েক মাস আগে ওই নারী তার দিনমজুর স্বামীর চিকিৎসার জন্য অভিযুক্ত শওকত ওসমানের কাছ থেকে চার হাজার টাকা সুদে ধার নেন। ইতোমধ্যে ওই নারী সুদ ও আসলসহ মোট ৮ হাজার টাকা পরিশোধও করেছেন। মঙ্গলবার দুপুরের দিকে অভিযুক্ত যুবক আরও দুই হাজার টাকা দাবি করেন। পরে ওই নারী বৃহস্পতিবার (১৮ই মার্চ) তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে ও তা মানতে রাজি হননি অভিযুক্ত যুবক। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে ওই যুবক ভুক্তভোগীকে গাছের সঙ্গে শাড়ি দিয়ে বেঁধে মারধর ও নির্যাতন চালায়।
মঙ্গলবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটলেও ওই নারী এ বিষয়ে কাউকে কিছু না বলায় বিষয়টি কেউ জানতে পারেননি। পরে বুধবার সকালের দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ভাইরাল হলে তা জানাজানি হয়। পুলিশকে জানানোর পর পুলিশ ওই যুবকের বাবাকে আটক করে নিয়ে যায়।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, অভিযুক্ত শওকত ওসমান একটি গাছের সঙ্গে শাড়ির আঁচল দিয়ে বেঁধে রাখেন ওই নারীকে। এসময় ভুক্তভোগী তার বাঁধন খুলে দিতে বলে। কিন্তু, অভিযুক্ত ব্যক্তি খুলে না দিয়ে কিল-ঘুষি মারতে থাকে তাকে। এক পর্যায়ে ওই নারীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করা হয় এবং চুলের মুটি ধরে টান মারতে থাকেন। এছাড়াও, চুলের মুঠি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। স্থানীয় কয়েকজন নারী ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করতে গেলে তাদেরও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়।
ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, মঙ্গলবার বিকালে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ফেরার আমাকে পথরুদ্ধ করে শওকত। এক পর্যায়ে ক্ষুদ্ধ হয়ে টেনে-হিঁচড়ে আমার পরনের শাড়ি দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতন চালিয়েছে।
এ নিয়ে অভিযুক্ত শওকত আলমের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে একাধিক বার চেষ্টা করেও সংযোগ বন্ধ থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এদিকে ঘটনার নিন্দা জানিয়ে নির্যাতনকারি শওকত আলমসহ জড়িতদের শাস্তির দাবি করেছেন বরইতলি ইউপি চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার।
স্থানীয় এ ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, তার ইউনিয়নের এক নারীর উপর পাশবিক নির্যাতন চালানোর খবর শোনার পর ঘটনার ব্যাপারে পুলিশকে অবহিত করেছেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
সুদের টাকার জন্য এ ধরণের বর্বর নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও করেন জালাল আহমদ।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, এক নারীকে নির্যাতন চালানোর একটি ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার ঘটনাটি পুলিশের নজরে আসার পরপরই অভিযান চালানো হয়। এসময় অভিযুক্ত নির্যাতনকারি ওই যুবক পালিয়ে গেলেও তার বাবাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বুধবার রাতে ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে মূলহোতা শওকতকে প্রধান আসামী করে ৬ জনের বিরুদ্ধে দায়ের মামলাটি নথিবদ্ধ করা হয়েছে বলে জানান হাসানুজ্জামান।