ডেস্ক: করোনাকালের দীর্ঘ ছুটি ও সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তান্ডবে বন্যার কবলে পড়া উপকূলীয় অঞ্চল খুলনার কয়রায় পড়া লেখায় আগ্রহ কমছে ছাত্রছাত্রীদের। অনেক দিন বাইরের আলো-বাতাসে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ না পেয়ে বরং ঘরবন্দী থাকায় অনেক শিক্ষার্থীর পাঠ্যবইয়ের প্রতি তৈরি হয়েছে অনীহা। এতে আশঙ্কা করা হচ্ছে, করোনা পরবর্তী ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে স্কুল-কলেজ খুললেও বেশ বড়সংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরে পড়তে পারে। তাই ঝরে পড়া রোধ এবং পড়ার টেবিলে শিক্ষার্থীদের ফেরাতে এখনি পরিকল্পনা নেয়া জরুরী এমনটাই বলছেন সচেতন অভিবাবক মহল স্থানীয় সুশীল সমাজ। শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা ও আম্পানের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠে পিতা-মাতার আর্থিক দৈন্যে প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার আশঙ্কাও প্রকট হবে। খরচ জোগাতে না পেরে অনেক অভিভাবকই সন্তানের লেখাপড়া চালাতে অপারগ হবেন। শিক্ষা গবেষকরা বলছেন, অভাবের তাড়নায় অনেক মা-বাবা তাদের মেয়েদের পরিণত বয়সের আগেই বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়ে দেন। আবার ছেলে সন্তানের হাত থেকে বই-খাতা সরিয়ে তুলে দেন সংসারের দায়িত্ব। করোনার দীর্ঘ প্রভাবে প্রাথমিক পর্যায়ে বাল্যবিয়ের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ারও আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা। সম্প্রতি উপজেলা ঘুরে শিক্ষক, অভিবাবক ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শিক্ষা প্রতিষ্টান ও সকল কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে পড়েছে। আগের চেয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সময় কমেছে ৮০ শতাংশ। অর্থাৎ স্বাভাবিক সময়ে ১০ ঘণ্টা পড়াশোনায় ব্যয় করলেও এখন ২ ঘণ্টার বেশি কেউই পড়াশোনা করছে না। কেউ কেউ একদম এই দীর্ঘ সময়ে পড়া লেখা ছেড়ে দিছে।
কয়রা উত্তর বেদকাশির কাটমারচর গ্রামের রবিউল জানান, করোনা ও আম্পানে আমাদের একে বারে সর্বশান্ত করে দিয়েছে। আমাদের ছেলে মেয়েরা এত কষ্টের মধ্যে পড়া লেখার প্রতি অনিহা চলে আসছে। কয়রা কপোতাক্ষ কলেজের অধ্যাক্ষ আদ্রিশ আদিত্য মন্ডল বলেন, করোনা ও আম্পানের এই সঙ্কটের সময়ে বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে উপকূলীয় এই অঞ্চলে শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়বে বেশি হারে।প্রত্যন্ত অঞ্চলের এ অভিভাবকদের মধ্যে এক দিকে যেমন সচেতনতার অভাব অন্য দিকে তাদের আর্থিক সঙ্গতিও নেই।একই সাথে করোনা ও আম্পান এই দুর্যোগে তারা সন্তানদের কাজে দিয়ে সংসারের জন্য বাড়তি আয়ের চেষ্টা করছেন কেউ কেউ।
কয়রা সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক রেজাউল ইসলাম আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, করোনার এই মহামারী কেটে গেলেও আর্থিক অনটনের কারণে ও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অন্তত্ব বিশ শতাংশ শিক্ষার্থীর স্কুলে ফিরে আসা কঠিন হবে। উপকূলে শিক্ষার্থী ছেড়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ চলমান মহামারীর ফলে অনেক গরিব পরিবার আরো বেশি অসহায় হয়ে পড়বে। সে ক্ষেত্রে তাদের অনেকেই সন্তানদের স্কুলে না পাঠিয়ে কাজে পাঠাতে চাইবেন। এ ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই পরিবারগুলো চিহ্নিত করে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। কয়রা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাসিন আলী জানান, আমরা শিক্ষকদের মাধ্যমে অভিবাবক ও ছাত্রছাত্রীদের সব সময় সচেতন করছি। আর্থিক অনটনে ছেলেমেয়েদের শিক্ষা গ্রহণে যাতে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয় সে জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উপবৃত্তির প্রকল্পের মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে।নিয়মিত মোবাইলে বকেয়া টাকাও দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া নতুন করে অতি দরিদ্র শিক্ষার্থীদের তালিকা করে সহায়তা ও অনলাইনে ক্লাস করার জন্য মোবাইল ফোন দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সুবিধাভাগীদের সংখ্যা ও টাকার পরিমাণও বাড়ানো হচ্ছে। চেষ্টা করা হচ্ছে কোনোভাবেই যাতে একজন শিক্ষার্থীও ঝরে না পড়ে।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy