তিনি আরো বলেন, করোনাজনিত ক্ষয়ক্ষতি ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে সরকার সমন্বিত জনস্বাস্থ্য প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কৌশল গ্রহণ করেছে।
বুধবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে চট্টগ্রাম-১১ আসনের এমপি এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারি বিশ্ব স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ও অর্থনীতিকে এক অভূতপূর্ব সংকটের সম্মুখীন করেছে। উন্নত দেশগুলো এ ভাইরাস মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাস মোকাবিলায় কোনো কার্যকর টিকা বা চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি। তাই এ রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ এবং বিস্তার রোধে মাস্ক ব্যবহার, কাশি শিষ্টাচার, শারীরিক দূরত্ব, হোম কোয়ারেন্টাইন, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন মেনে চলা ও সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থাকেই মূল কৌশল হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনা বিস্তার রোধে লকডাউন (অবরুদ্ধ) কার্যকর কৌশল হলেও এই পরিস্থিতি দীর্ঘকাল অব্যাহত থাকলে কর্মসংস্থান, অর্থনীতি, মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামাজিক শৃঙ্খলার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ দৈনিক মজুরির ওপর নির্ভরশীল। এই পরিস্থিতিতে কর্মহীনতা ও দরিদ্রতা লাগামহীন হারে বাড়ার সঙ্গে আরো কিছু কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই ক্ষয়ক্ষতি ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় এ দু’য়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে সমন্বিত জনস্বাস্থ্য প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে।
ভোলা-২ আসনের এমপি আলী আজমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে সৃষ্ট দুর্যোগে আমরা বিস্তৃত পরিসরে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছি। এ পর্যন্ত সারাদেশে দুই কোটি ৩৫ লাখ ৫৩ হাজার ৫৫টি পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছি। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় দুই লাখ ১১ হাজার ১৬৭ মেট্রিক টন চাল এবং ২৫ কোটি ৮৬ লাখ ৭২ হাজার ২৬৪ টাকা নগদ বরাদ্দ দিয়েছি। এতে উপকারভোগী জনসংখ্যা ১০ কোটি ৪৩ লাখ ৬৫ হাজার ৮০০ জন মানুষ। শিশু খাদ্য বিতরণে ২৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। এতে উপকারভোগী শিশুর সংখ্যা ১৪ লাখ ২৭ হাজার ৭৮ জন।
বগুড়া-৫ আসনের এমপি হাবিবর রহমানের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের সংকট নিরসনে সরকার বহুপক্ষীয় বিভিন্ন কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশি শ্রমিক ও অভিবাসীদের অধিকার সুনিশ্চিত করার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি তাদের খাদ্য চাহিদা নিশ্চিত ও অন্তত ছয় মাস চাকরিচ্যূত না করতে জাতিসংঘ মহাসচিবকে অনুরোধ করেছি। অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগীকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসার অনুরোধ করা হয়েছে।
যশোর-৩ আসনের এমপি কাজী নাবিল আহমেদের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, করোনার কারণে বিভিন্ন দেশে কর্মহীন হয়ে পড়া বাংলাদেশি কর্মীরা যেন করোনা পরবর্তী সময়ে ফের কাজে যোগ দিতে পারে, সেজন্য সরকার কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।
তিনি জানান, করোনার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে (১২ জুন পর্যন্ত) ১৪ হাজার ৯৫৭ জন প্রবাসী শ্রমিককে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। অধিকাংশ প্রবাসী শ্রমিক মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ ও সিঙ্গাপুরের।
মানবপাচারের অভিযোগে কুয়েতে গ্রেফতার হওয়া লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম পাপলু সম্পর্কে সরকারের অবস্থান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি (পাপলু) কুয়েতের নাগরিকত্ব প্রাপ্ত কিনা সে বিষয়ে কুয়েত সরকারের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা দেখবেন বলে জানিয়েছেন। সেক্ষেত্রে ওই সিট হয়তো খালি করে দিতে হবে। যেটা আইন আছে সেটাই হবে। তার বিরুদ্ধে এখানেও তদন্ত চলছে।
বিএনপি দলীয় এমপি হারুনুর রশীদ পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে পাপুল সম্পর্কে জানতে চাইলে সংসদ নেতা এ জবাব দেন।
পাপুল সম্পর্কে তিনি বলেন, যে এমপির কথা বলা হয়েছে সে কিন্তু স্বতন্ত্র এমপি। সে কিন্তু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য নমিনেশন চেয়েছিলো আমি দেইনি। সে স্বতন্ত্র এমপি। নির্বাচনে ওই সিট জাতীয় পার্টিকে দিয়েছিলাম। জাতীয় পার্টির নোমান নমিনেশন পেয়েছিলো সে নির্বাচন করেনি ওই লোক জিতে আসে।
রিজেন্ট হাসপাতাল নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তোলার পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকেই ধরেছি। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে এবং অনিয়মগুলো খুঁজে বের করেছি। এরইমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। ওই হাসাপতালের এই তথ্য কিন্তু আগে কেউ দেয়নি, জানাতে পারেনি। অন্য কেউ জানায়নি।
তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকেই খুঁজে বের করেছি, ব্যবস্থা নিয়েছি। র্যাব গেছে সেখানে, সেখান থেকে খুঁজে বের করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy