আনোয়ার হোসেন আন্নু:
করোনা ভাইরাস দুর্যোগে যেখানে ধনকুপের মালিকরা হাত-পা গুটিয়ে নিরাপদে বাঁচতে চইছেন। কোন রকম সহযোগিতা নিয়ে দরিদ্রদের পাশে দাড়ায়নি অথচ প্রতিবন্ধী ও অসহায় ২৮৮ টি পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী দিয়ে বিরল দৃষ্টান্ত রাখলেন বিএসবি গোল্ড মাইন্ড স্কুল এর অধ্যক্ষ ও বাঁধন সোসাইটি অফ বাংলাদেশ এর মহাসচিব প্রতিবন্ধী রাজা মারুফ নেওয়াজ। জানা যায় করোনা ভাইরাস মহামারী দর্যোগে মানুষ যখন কর্মহীন হয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। ঠিক তখনই ‘মানুষ মানুসের জন্য’ এই চেতনা নিয়ে ৫ই এপ্রিল থেকে ছয় ধাপে ২৮৮ টি পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী দিয়ে সহযোগীতা করছেন প্রতিবন্ধী রাজা মারুফ নেওয়াজ। একজন প্রতিবন্ধী হয়েও অন্যের বোঝা না হয়ে সমাজ সেবায় এগিয়ে এসেছেন তিনি। সাভারের এক নং ওয়ার্ডের জামশিং এলাকায় বিএসবি গোল্ডমাইন স্কুল প্রতিষ্ঠা করে শুরু থেকেই বেদে প্রতিবন্ধী এবং হতদরিদ্র শিশুদের ফ্রি শিক্ষা দান করছেন অধ্যক্ষ রাজা মারুফ নেওয়াজ।রাজা মারুফ নেওয়াজ বলেন আমি হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। ছয় মাস বয়সে পোলিওমাইলাইটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে আমি প্রতিবন্ধী হয়ে যাই। এমত অবস্থায় আমি সরকারি আজম খান বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ খুলনা হতে ম্যানেজমেন্ট অনার্স মাস্টার্স পাস করি। ২০১৫ ইংরেজি সালে সাভারের এক নং ওয়ার্ড এর জামশিং এলাকায় আমি বিএসবি গোল্ডমাইন স্কুল প্রতিষ্ঠা করি। এই স্কুল প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই বেদে প্রতিবন্ধী এবং হতদরিদ্র শিশুদের আমি ফ্রি শিক্ষা দান করি। এর জন্য আমি কোন ব্যক্তি বা সংস্থার নিকট হতে কখনোই আর্থিক কোন অনুদান পায়নি। এই স্কুলে মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত শ্রেণীর বাচ্চারা যারা পড়াশোনা করে, তাদের নিকট হতে প্রাপ্ত টিউশন ফি এবং আমার কিছু প্রাইভেট পড়ানোর টাকা দিয়ে আমি এই স্কুলটা পরিচালনা করে আসছি লাম। করোনা ভাইরাস এর শুরু থেকে অর্থাৎ মার্চ মাসের ১৭ তারিখ থেকে সরকারি নির্দেশনায় যখন সকল স্কুলের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হলো তখন দেখলাম অনেক রাজনীতিবিদ এবং সমাজকর্মীরা ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এরমধ্যে দেখলাম সাভার পৌর আওয়ামীলীগের সুযোগ্য সাধারণ সম্পাদক এবং সাভার পৌরসভার ১ নং প্যানেল মেয়র জনাব নজরুল ইসলাম মানিক মোল্লা কোভিট-১৯ এ ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে রাতদিন কাজ করে যাচ্ছেন। মাঝে মাঝে তিনি নিজে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সুযোগ্য সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা পরিষদের সম্মানিত চেয়ারম্যান জনাব মঞ্জুরুল আলম রাজীব এবং তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনম ফখরুল আলম সমর একইভাবে রাতদিন কাজ করে যাচ্ছেন। এই তিনজন ব্যক্তির কাজ দেখে আমি ১ নং ওয়ার্ডে বসবাসরত দরিদ্র হতদরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলাম।পাঁচই এপ্রিল শুরু হল আমার পথ চলা ৫০ টি প্যাকেট দিয়ে পাশে দাঁড়ালেন দুইজন হৃদয়বান বন্ধু প্রিয় মানুষ নজরুল ভাই এবং আসিফ ভাই। এই দুই ভাই ই হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি।
এই ৫০ টি প্যাকেট বিতরণ করার জন্য সেদিন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব নজরুল ইসলাম মানিক মোল্লা। সেদিন মানিক মোল্লা মামা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমাকে অনেক দোয়া করেন এবং ৮ ই এপ্রিল ৪০ টি পরিবারের জন্য ৪০ টি প্যাকেট অনুদান হিসেবে আমাদেরকে প্রদান করেন। এরপর যখনই আমরা ত্রাণ বিতরণ করেছি প্রত্যেকবারই মানিক মোল্লা মামা আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। এক কথায় বলতে পারি তিনি আমার অভিভাবক। আমাদের মতো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পাশে এমন নিঃস্বার্থভাবে দাঁড়ানোর মত মানুষ খুব কমই দেখা যায়। ২৯ শে রমজান যখন আমরা আড়াইশো পরিবারকে ত্রাণ বিতরণ এর জন্য মানিক মোল্লা মামাকে ডাকি সেদিন তিনি আমাদের শিক্ষিকা এবং স্বেচ্ছাসেবীদের নগদ ১৩০০০ টাকা আমাকে নগদ ৫০০০ টাকা এবং আমার জন্য উপহার সামগ্রী হিসাবে বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী আনেন। তাই বলতে পারি মানিক মোল্লা মামা একজন মানবিক, হৃদয়বান এবং প্রতিবন্ধী বান্ধব মানুষ।তিনি আরোও বলেন আমরা দ্বিতীয় পর্যায়ের কার্যক্রম যখন শুরু করি তখন আমাদের পাশে এসে দাঁড়ান আমাদের এক প্রিয় আপু নাম তার সীমা আপু সীমা আপুর অবদানটা অনেক এজন্য আমরা আমাদের এই ত্রাণ কার্যক্রমের নাম দিয়েছি সীমা আপুর মানবতার বাজার। সীমা আপুর এই মানবতার বাজারে অনেকেই সহযোগিতা করেছেন।তারা হলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর ইমরান জাহান স্যার, ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান ভাই,তৌহিদ ভাই,ডাক্তার খালেদা ইয়াসমিন, ডাক্তার সুফিয়া খাতুন, আমেরিকা প্রবাসী আমার মামা খালা, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন, সেভ মিশন বাংলাদেশ।সাভারের কন্যা মডেল নাজমি জান্নাত এবং গায়ক ইমরান ভাই আমাদের সহযোগিতা করেছেন।
১২ ই জুন থেকে আমরা পবিত্র কোরআন শরিফ খতম এর মাধ্যমে যারা আমাদেরকে সহযোগিতা করেছেন তাদের পরিবারবর্গের সুস্থতা কামনা করে বিশেষ দোয়া মাহফিলেরল আয়োজন করি। ১২ ই জুন ১২০ প্যাকেট খাবার দিয়ে আমাদের কার্যক্রম এর উদ্বোধন করেন মানিক মোল্লা মামা। এরপর ২০ শে জুন থেকে ২৩ শে জুন পর্যন্ত সীমা আপুর নিজস্ব অর্থায়নে ২৪০ প্যাকেট খাবার বিতরণ করা হয় । ২৪ শে জুন আমার নানার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ২৪ ও ২৫ শে জুন দুই দিনে ১৫৫ প্যাকেট খাবার বিতরণ করা হয়। আজ ২৬ শে জুন ডাক্তার সুফিয়া খাতুন এর সহযোগিতায় ৪৮ প্যাকেট খাবার বিতরণ করা হয়।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy