জমিরর উদ্দিন সুমন, লন্ডন :
মহামারি করোনা ভাইরাসে ধুকছে সারা ব্রিটেন। লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার । করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ব্রিটেনের বাংলাদেশি কমিউনিটির মানুষ।
গত মার্চ মাসে লকডাউনের পর থেকে বাংলাদেশি কমিউনিটি মানুষের জীবন বদলে দেয় করোনা ভাইরাস। করোনায় তছনছ হয়ে গেছে অনেক পরিবার। অনেকে হারিয়েছেন বাবা, মা, ভাই, বোন। পরিবারের প্রিয় মানুষগুলো কে হারিয়ে শত শত পরিবার নীরবে কাদঁছেন।
করোনায় এখন পর্যন্ত ডাক্তার, নার্স, আইনজীবি, টেক্সি ড্রাইভার, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবি সহ ২০০ জন ব্রিটিশ বাংলাদেশীকে হারিয়েছে কমিউনিটি। করোনায় ব্রিটিশ বাংলাদেশী ডাক্তার আব্দুল মামুদ চৌধুরী গত এপ্রিল মাসে মারা যান। আটারো বছর বয়েসি ছেলে ইনতিসার চৌধুরী বাবাকে হারিয়ে দিশেহারা। তিনি বলেন, এন. এইচ. এস ও সরকারী উদাসীনতার কারণে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাবা মারা যান। ফ্রন্ট লাইনে থাকার কারণে বাবার মৃত্যু হয়।
ইষ্ট লন্ডন বেতনাল গ্রীণ এলাকার বাসিন্দা ফরহাদ আহমদ খান গত জুলাই মাসে করোনা ভাইরাসে মারা যান। মৃত্যুর সময় তিনি ৩ বছরের এক মেয়ে ও ৫ বছরের এক ছেলে রেখে যান। তার স্ত্রী বলেন, বাবার জন্য ছেলে মেয়েরা আজও কাঁদে। বাইরের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করে বাবা কখন আসবে।
ব্রিটেনে করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশী মালিকানাধীন হাজার-হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পথে। অনেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছেন বাংলাদেশী অধ্যাষিত এলাকা ইষ্ট লন্ডন, বার্মিং হাম, লুটন, সান্ডারল্যান্ড, মিড্ওয়ে বেকবন সহ বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে অসংখ্য বাংলাদেশী গ্রোসারীসপ। এ গুলোতে তুলনামূলক ভাবে ব্যবসা না হওয়ায় সপের মালিকগণ স্টাফ কমিয়ে ফেলেছে। যার কারণে অনেকে জব হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছে।
সারা ব্রিটেনে বাংলাদেশী মালিকানাধীন ১২ হাজার্রেও বেশী রয়েছে ইন্ডিয়ান রেষ্টুরেন্ট ও টেকওয়ে। সেই কারী ব্যবসা বন্ধ হওয়ার পথে চিরতরে। দীর্ঘ দিন লক ডাউন ও সরকারী বিধি নিষেধের কারণে অনেক ব্যবসা বন্ধ হয়েছে। অনেকে রেষ্টুরেন্ট ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। যার কারণে হাজার-হাজার রেষ্টুরেন্ট স্টাফ জব হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন। এছাড়া আরো অনেকের জব চলে গেছে যাদের কাগজ পত্র ও ব্রিটেনে থাকার অনুমতি নেই, তারা কষ্টের মধ্যে দিন যাপন করছেন।
রাজপুত রেষ্টুরেন্ট সত্বাধিকারী সিরাজ মিয়া বলেন, লক ডাউননে করোনা ভাইরাসের কারণে ব্যবসা নেই বললেই চলে। কিছু টেকওয়ের অর্ডার আসে। আগে যেখানে ১২ জন কর্মচারী ছিল, এখন সেখানে ৭ জন কর্মচারী দিয়ে ব্যবসা চালাতে হচ্ছে।
সোহেল আহমদ চৌধুরী ইষ্ট লন্ডনের হোয়াইট কাপেলে বসবাস করেন কথা হয় তার সাথে, তিনি বলেন দীর্ঘ ২০ বছর যাবত শেফের কাজ করছি। গত মার্চ মাসে লক ডাউনে রেষ্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে যায়। আমার জব চলে যায়। এখন পর্যন্ত জব পাইনি। ২ ছেলে ২ মেয়ে নিয়ে অনেক কষ্টের মধ্যে দিন যাপন করছি। সরকার যা দেয়, তা দিয়ে ঘর ভাড়া হয় না। ছেলে মেয়েদের আবদার মেটাতে পারছি না। এই বলে তার চেহারা মলিন হয়ে যায়।
ফরেষ্ট গেইট এলাকার মিনি-ক্যাব ড্রাইভার হিফজুর রহমান বলেন, টেক্সি ব্যবসা একবারেই নেই। তাই তিনি ক্যাব ছেড়ে উবার ইট ফুড ডেলীভারী করেন।