
কামাল উদ্দিন, চকরিয়া-পেকুয়া(কক্সবাজার) প্রতিনিধি:
সময়টা বৈরিতার ও আপনজন হারানোর বেদনার। চারপাশে মৃত্যুর মিছিল। তবু থেমে নেই জীবন। প্রকৃতি চলছে তার নিজস্ব গতিতে। বৈরী এ সময়েও তাই নিয়ম মেনে ঠিক ফুটেছে কৃষ্ণচূড়া! কক্সবাজার জেলার চকরিয়া-পেকুয়ার বিভিন্ন রাজপথে, গ্রামে, মাঠে এখন ঝলমলে রঙিন শোভা। অবিরাম সৌন্দর্য। কিন্তু উপভোগ করবে কে! অপেক্ষায় কৃষ্ণচূড়া। হয়তো তারও অপেক্ষা, মহামারি কেটে স্বাভাবিক জীবনের।
করোনার সংক্রমণ রোধে গত ১৪ এপ্রিল থেকে চলছে গৃহবন্দি থাকার কাল। বিষণ্ন এ কালে রঙিন হয়ে ধরা দিচ্ছে কৃষ্ণচূড়া। কক্সবাজারের চকরিয়া-পেকুয়ার বেশিরভাগ সড়কের পাশে, গ্রামে, মাঠে দৃশ্যমান কৃষ্ণচূড়া ফুল। গত কয়েকদিন চকরিয়া-পেকুয়ার বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা যায় থোকায় থোকায় ফুটেছে ফুলটি।নিসর্গবিদ মোকারম হোসেন কৃষ্ণচূড়ার বর্ণনা দিতে তার ‘মজার ফুল মজার গাছ’ বইয়ে লিখেছেন, কৃষ্ণচূড়া সবার প্রিয় একটি ফুল। লাল টুকটুকে উজ্জ্বল রঙের এই ফুলটি অনেক দূর থেকেই আমাদের চোখে পড়ে। তবে গ্রীষ্মের ফুল হলেও আমাদের কবিরা ভুল করে বসন্তের নানান উপমায় কৃষ্ণচূড়ার কথা বলেছেন।
সে যাই হোক, কৃষ্ণচূড়া গ্রীষ্মকালজুড়েই আমাদের চারপাশ রাঙিয়ে রাখে। গাছের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, গাছ মাঝারি আকারের, মাথার দিকটা এলোমেলো আর ডালগুলো নিচের দিকে নুয়ে থাকে। পাতাগুলো খুবই সুন্দর, বড় একটা ডাটার ডালে চিকন চিকন সব পাতা, দেখতে ঝালরের মতো। শীতে সবগুলো পাতা ঝরে যায়। তখন ন্যাড়া গাছে ঝুলতে থাকে কালচে রঙের চ্যাপ্টা ফলগুলো।
কিন্তু গরমের শুরুতে একপশলা বৃষ্টি হলেই মরা ডালে নতুন পাতার আগেই ফুলের কুঁড়িগুলো উঁকি দিতে শুরু করে। তখন গাঢ় লাল, লাল, কমলা, হলুদ এবং হালকা হলুদ রঙের ফুলে ফুলে ভরে ওঠে গাছ। দূর থেকে গোটা গাছটাকেই একটি বিশাল ফুলের তোড়া মনে হয়। উদ্ভিদবিদদের তথ্য অনুযায়ী,
কৃষ্ণচূড়ার বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিক্স রেজিয়া। এটি ফাবাসিয়ি পরিবারের অন্তর্গত। অনেকে এর ফলকে গুলমোহর নামেও ডাকেন। কৃষ্ণচূড়ার আদি নিবাস আফ্রিকার মাদাগাস্কার। ১৮২৪ সালে সেখান থেকে প্রথম মরিসাস, পরে ইংল্যান্ড এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিস্তার ঘটে। এখন আমেরিকা, ক্যারিবিয়ান অঞ্চল, হংকং, তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন, ভারতসহ বিশ্বের বহু দেশে দেখা যায়।
জানা যায়, কৃষ্ণচূড়ার আদি নিবাস মাদাগাসকারে। ক্যারিবিয়ান অঞ্চল, আফ্রিকা, হংকং, তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন, বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশে এটি জন্মে। কৃষ্ণচূড়ার নানা প্রজাতি রয়েছে। প্রজাতি ভেদে এদের ফুলের রঙ হয় ভিন্ন। হলুদ, সিঁদুর লাল, কমলা ইত্যাদি রঙের ফুল বিশিষ্ট কৃষ্ণচূড়া গাছ দেখা যায়। হলুদ ফুলের গাছকে আমাদের দেশে রাধাচূড়াও বলা হয়ে থাকে। এ প্রজাতি অনেক দেশেই বিলুপ্তির পথে।
আমাদের দেশে কৃষ্ণচূড়ার ফুল ফোটার সময়কাল এপ্রিল থেকে জুন মাস। যারা এখন গৃহবন্দি তারা বন্দিদশা পেরিয়ে কৃষ্ণচূড়া দেখতে যাবেন, সেটিরই প্রত্যাশা হয়তো গাছটির। কৃষ্ণচূড়া ফুলকে দেখলে মনে হয় যেন আগুনের একটি জ্বলন্ত শিখা জ্বলছে।
বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে চারপাশে যখন প্রচণ্ড গরম তখনই কৃষ্ণচূড়ার ডাল থোকা থোকা লাল ফুলে ভরে ওঠে। শুধু বসন্ত আর গ্রীষ্মেই নয়, বর্ষায়ও কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে ফুল ফোটে। ফুলের জগতে কৃষ্ণচূড়ার মতো এমন উজ্জ্বল ফুল বেশ দুর্লভই বলা চলে।
এ জাতীয় আরো খবর..
Leave a Reply