ইমাম হোসেন জীবন চট্টগ্রামঃ
নৈরাজ্য নির্বিচারে অপরিকল্পিতভাবে অবৈধ বালি উত্তোলন,দখল,দূষণ ও মৎস্য সম্পদ ধ্বংসের হাত থেকে কর্ণফুলীকে বাঁচান-খোরশেদ আলম সুজন।
আজ শনিবার (১৩ নভেম্বর ২০২১ইং) সকালে কর্ণফুলী মৎস্য সম্পদ রক্ষা কমিটির নেতৃবৃন্দ সুজনের সাথে তাঁর উত্তর কাট্টলীস্থ বাসভবনে স্বাক্ষাত করতে গেলে তিনি এ আহ্বান জানান।
অবৈধ বালি উত্তোলন, দখল, দূষণ ও মৎস্য সম্পদ ধ্বংসের হাত থেকে কর্ণফুলী নদীকে বাঁচানোর উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।
কর্ণফুলী মৎস্য সম্পদ রক্ষা কমিটির নেতৃবৃন্দ কর্ণফুলী নদীতে অবৈধ বালি উত্তোলন, দখল, শিল্প, কল-কারখানার দূষণ, বর্জ্য নিক্ষেপ বন্ধ করা এবং মৎস্য সম্পদ রক্ষা বিষয়ে সুজনের সাথে মতবিনিময় করেন। নেতৃবৃন্দ এ ব্যাপারে সুজনের সহযোগিতা কামনা করেন এবং যে কোন কর্মসূচীতে পাশে থাকার অনুরোধ জানান।
এ সময় সুজন বলেন ভারতের মিজোরামের লুসাই পাহাড় থেকে কর্ণফুলীর উৎপত্তি হয়ে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় গিয়ে মিলিত হয়েছে এ নদী। এককালের কর্ণফুলীর যে মনমাতানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সকলকে আকর্ষণ করতো সে সৌন্দর্য কি এখন আর আছে সে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন কতোটা নির্দয় হলে একটি জলজ্ব্যান্ত নদীকে ধীরে ধীরে দখলে, দূষণে মৃতপ্রায় করে রাখা হচ্ছে।
অপরিকল্পিতভাবে কর্ণফুলী নদী থেকে নিয়মিত বালি উত্তোলন করে নদীটির গতিপথ পরিবর্তন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে নদীর দুইপাশে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়ে বিলীন হতে চলেছে নদীর দুই পাড়। অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের ফলে কতিপয় অর্থলিপ্সু গোষ্ঠী আর্থিকভাবে লাভবান হলেও দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিগ্রস্তের কবলে পড়তে পারে দেশ ও রাষ্ট্র। নিয়মিত হাজার হাজার টন বালি উত্তোলনের কারণে কর্ণফুলী নদীর উপর স্থাপিত কালুরঘাট এবং শাহ আমানত সেতু যে কোন সময় হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশংকা বিশেষজ্ঞদের।
এছাড়া অপরিকল্পিত বালি উত্তোলনের ফলে দেশের অর্থনীতির সোনার ডিম পাড়া রাজহাঁস খ্যাত চট্টগ্রাম বন্দরের পুরাতন জেটিগুলো প্রায় ভরাটের পথে। বন্দরের নিয়মিত চ্যানেলও পলিতে ভরপুর হতে চলেছে। তাই বাংলাদেশের অর্থনীতির স্বার্থে এসব অপরিকল্পিত বালি উত্তোলন বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধানতম আয়ের উৎস চট্টগ্রাম বন্দরের গতিপথ সুগম রাখতে হবে। পরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বন্দরের নাব্যতা বৃদ্ধি করতে হবে।
তাই নিজেদের হীন স্বার্থে এসব অপরিকল্পিত বালি উত্তোলন বন্ধ করে কর্ণফুলী নদীকে রক্ষায় সবাইকে সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন তিনি। তিনি আরো বলেন কর্ণফুলীর মোহনায় গড়ে উঠা শত শত অবৈধ স্থাপনা, প্রায় পাঁচ শতাধিক শিল্প, কল-কারখানা, অসংখ্য জাহাজ নৌযানের বিষাক্ত বর্জ্যে বিষিয়ে উঠেছে কর্ণফুলী নদীটি।
এছাড়া চিংড়ী পোনা আহরনের নামে নির্বিচারে লক্ষ লক্ষ দেশীয় মাছের পোনা ধ্বংস করা হচ্ছে। বিভিন্ন কলকারখানার দুষিত বর্জ্যের কারণে কর্ণফুলী নদীর অপার সম্ভাবনার মৎস্য সম্পদ আজ বিপন্ন প্রায়। যে নদীতে একসময় দেশীয় টেংরা, পাবদা, রিটা, কাচকি, ফাইস্যাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যেতো দখল, দূষণ এবং কতিপয় অর্থলিপ্সু ব্যক্তির লোভের কারণে সেসব মাছ আজ বিলুপ্ত। গবেষণায় জানা যায় কালুরঘাট ব্রিজের পর থেকে উজানে কয়েক কিলোমিটার মিশ্র পানির এলাকা বলে যে অঞ্চলটি কর্ণফুলীর বুকে চিহ্নিত; সেখানে এক সময় ৫৯ প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। এর বেশিরভাগ মাছই এখন নতুন প্রজন্মের কাছে অপরিচিত। একসময় কর্ণফুলী নদীর মাছের ইতিহাস কেবল বই পুস্তকে লিপিবদ্ধ থাকবে। অন্যদিকে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্টান কর্ণফুলী নদীকে গিলে খাচ্ছে। প্রতিনিয়তই ভরাট করে কর্ণফুলী নদীকে সংকুচিত করে ফেলা হচ্ছে। নদীর আশপাশে জেগে ওঠা চর দখল করে বস্তি, পাকা অবকাঠামোসহ নানা স্থাপনা গড়ে ওঠেছে।
অব্যাহত দখল, অবকাঠামো নির্মাণ, চর জেগে ওঠাসহ নানা কারণে কর্ণফুলী নদীর প্রস্থ কমেই চলেছে। এছাড়া নদীর প্রায় ২৫ একর জায়গা ইজারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দিয়ে নদী সংকোচনে ভূমিকা রেখেছে চট্টগ্রাম বন্দর। এভাবে কর্ণফুলী নদী দখল করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
তাছাড়া কর্ণফুলী নদীতে বর্জ্য নিক্ষেপ, পয়ঃপ্রণালীর বর্জ্য মিশ্রণসহ বিভিন্ন দৃষিত পদার্থ নিক্ষেপ করে দূষণের মাত্রা বাড়ানো হচ্ছে। তিনি কর্ণফুলীর অবৈধ বালি উত্তোলন,দখল,দূষণ ও মৎস্য সম্পদ ধ্বংসের হাত থেকে কর্ণফুলী নদীকে রক্ষা করতে সকল বিবেকবান মানুষকে এগিয়ে আসার আহবান।
এছাড়া কর্ণফুলী রক্ষায় সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার উপরও গুরুত্বারোপ করেন সুজন বলেন নাগরিক উদ্যোগ সবসময় কর্ণফুলীকে রক্ষায় সচেষ্ট থাকবে এবং যে কোন কর্মসূচীতে পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কর্ণফুলী মৎস্য সম্পদ রক্ষা কমিটির আহবায়ক আলী রিয়াজ খান রক্সি, মিঠুন চৌধুরী, জসীম উদ্দিন, মো. আজম, রকি খান, মো. বাসেক, মো. ফখরুদ্দিন, মো. মনির, ইসতিয়াক হোসেন, মো. শাকিব প্রমূখ।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy