তানভীর আহাম্মেদ সোনারগাঁও প্রতিনিধি :
নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও পৌরসভার আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশি বেশকজন নেতা মাঠে নেমেছেন।
যাদের মধ্যে এবারও দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা নিয়ে মাঠে নেমেছেন গাজী মজিবুর রহমান। ১১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার পৌর এলাকায় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে গাজী মজিবুর রহমানের প্রতি সমর্থনের ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত।
জানাগেছে, শুক্রবার বিকেলে টিপুরদি এলাকায় কর্মীসভায় গাজী মজিবুর রহমানকেই আগামী পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে সমর্থন দেন কায়সার হাসনাত। তবে গত নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট এটি ফজলে রাব্বীর পক্ষে কাজ করেছিলেন। মনোনয়ন প্রাপ্তির শুরু থেকেই কায়সার হাসনাত ফজলে রাব্বীকে নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন। তবে এবার সেই ফজলে রাব্বীকে তার বলয় থেকে আউট করে দিয়ে গাজী মজিবুর রহমানকে নিয়ে মাঠে নেমেছেন কায়সার হাসনাত।
ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর আত্মীয় অ্যাডভোকেট এটি ফজলে রাব্বী পৌর নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পান। ওই সময় এমপি নজরুল ইসলাম বাবু ও সাবেক এমপি কায়সার হাসনাত রীতিমত মনোনয়ন যুদ্ধে নেমেছিলেন। তুমুল লড়াইয়ের পর ফজলে রাব্বীর হাতেই নৌকা প্রতীক ওঠলেও নির্বাচনে জয়ী হয় আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাদেকুর রহমান ভুঁইয়া।
ওই নির্বাচনে স্থানীয় জাতীয় পার্টির এমপি লিয়াক হোসেন খোকার পরোক্ষ সমর্থনে ছিলেন সাদেকুর রহমান ভুঁইয়া। একই সঙ্গে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালামও ছিলেন সাদেকুর রহমানের দিকেই। তারা প্রত্যক্ষভাবে নৌকার পক্ষে থাকলেও পরোক্ষভাবে সাদেকুর রহমানের পক্ষেই ছিলেন বলে সে সময় অভিযোগ ওঠেছিল। কারন কালাম ও তার লোকজন নির্বাচনী প্রচারণায় নৌকার পক্ষে জোড়ালোভাবে ছিলেন না। নির্বাচনের দিন কালামের লোকজন সরাসরি সাদেকুর রহমান ভুঁইয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। নির্বাচনের দিন অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছিলেন নৌকার প্রার্থী রাব্বী। আওয়ামীলীগের বৃহত অংশের নেতারা নির্বাচনের দিন পল্টি মারেন।
এর আগে ২০১১ সালের নির্বাচনেও আওয়ামীলীগের সমর্থিত প্রার্থী গাজী মজিবুর রহমানের বিরোধীতা করেছিলেন আওয়ামীলীগের বৃহত্তর অংশের নেতাকর্মীরা। নির্বাচনে অনেক সম্ভাবনা জাগিয়েও তিনি নির্বাচিত হতে পারেননি। দলীয় কোন্দলে সেই সময় বিএনপি জামাতের সমর্থিত প্রার্থী সাদেকুর রহমান নির্বাচিত হোন।
২০১৫ সালের নির্বাচনে অ্যাডভোকেট এটি ফজলে রাব্বীর নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত ছিল স্থানীয় ও জেলা পর্যায়ের রাজনীতি। যে কারনে দুটি পক্ষ সরাসরি পক্ষে বিপক্ষে লড়াইয়ে নেমে যান। অনেকের শক্তির লড়াইয়ে পরাজিত হয়ে যায় নৌকার প্রার্থী।
পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয় সাদেকুর রহমান ভুঁইয়ার ভাই ফারুক ভুঁইয়া ও এটি ফজলে রাব্বীর ভাই আবু নাঈম ইকবাল। ওই নির্বাচনে ইকবালের পক্ষে অবস্থান নেন স্থানীয় এমপি। ফারুক ভুঁইয়ার পক্ষ নেন কায়সার হাসনাত। এই নির্বাচনে সমান ভোট হলে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে লটারির মাধ্যমে পরাজিত হন ইকবাল। নির্বাচনের পর ফজলে রাব্বী কায়সার হাসনাত বলয় ছেড়ে কায়সার হাসনাতের বিরোধী বলয় কালামের বলয়ে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন রাব্বী।
গত জাতীয় নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী লিয়াকত হোসেন খোকার পক্ষে কাজ করেন কালাম। কালামের সঙ্গে ছিলেন রাব্বী। বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন কায়সার হাসনাত। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী ছিলেন মোশারফ হোসেন। আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হোন কালাম। নির্বাচনে কালামের পক্ষেই ছিলেন রাব্বী। উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর এসব নেতারা এক কাতারে এসে ঐক্যবদ্ধ হোন। কায়সার কালাম বলয় ঐক্যবদ্ধ হলেও এবার পৌর নির্বাচনের শুরুতেই গাজী মজিবুর রহমানকে নিয়ে নেমেছেন কায়সার হাসনাত। এখন দেখার বাকি রাব্বীকে নিয়ে কালামের কি অবস্থান। রয়েছে উপজেলা আওয়ামীলীগের সমর্থিত প্রার্থী কে হন? আবার রয়েছে স্থানীয় জাতীয় পার্টির কোন প্রার্থী থাকবে কিনা বা এমপির সমর্থিত প্রার্থী কে হতে যাচ্ছেন। এসব বিষয় নিয়ে আগামী নির্বাচনে পৌর নির্বাচনটি হবে আরো জটিল সেটা অনুমেয়।