শাহীন মির্জা
প্রবাদ আছে কচু কাটতে কাটতেই ডাকাত হয়। আজকের কিশোর গ্যাং তাদের অন্ধকার রাস্তা পরিবর্তন করতে না পারলে এরাই হবে আগামী দিনের জন্য গ্যাং ষ্টার।
নিজস্ব সংস্কৃতি ভুলে পশ্চিমা অপসংস্কৃতি বুকে ধারণ করে আজকের তরুন সমাজ বিপদ গামী হচ্ছে। এ কারনেই দেশের তরুনদের শিষ্টাচার, নৈতিকতা, মনুষ্যত্ব আত্ত¥মর্যাদা বোধ সার্বিক ব্যবস্থায় বিপর্যস্ত ঘটছে।
করোনা কালীন সময় দীর্ঘদিন স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় কিশোর গ্যাং এর উৎপাৎ আসংখ্যা জনক হারে বেড়ে গেছে। অনেক সময় সিনিয়র জুনিয়র পদবী নিয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ বাধে। তবে ওরা যেখানেই ঝামেলার গন্ধপাউক ঐ জায়গায়ই এই কিশো গ্যাংয়ের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়্ কিশোর গ্যাং এদের নাকি বড় ভাই আছে? বড় ভাই ও রাজনৈতিক আশ্রয়ে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে এই কিশোর গ্যাং রা ব্যবহ্নত হচ্ছে। ওদের দাপটে ও দেশীয় অস্ত্রের ভয়ে অনেকে দেখে ও না দেখার ভান করে। যে খানে নতুন বিল্ডিং তৈরী নতুন লোকদের নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্বামী স্ত্রী ঝগড়া, এলাকায় নতুন ছেলে মেয়েদের আগমন, প্রেম করে বিয়ে করা যে ঘটনাই ঘটুক ওদের কানে গেলে ওদের কমিশন দিতে হয়, এরা এলাকার রাজনৈতিক কর্মির বড় ভাইদেরর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এই কিশোর গ্যাং এর আচরন দেখলে মনে হবে এরা ক্রাসের রাজত্ব করছে। ওরা বড় বা মুরব্বি বলে কাউকে সম্মান করে না। শিষ্টাচার বলতে কিছু নেই। ওদের পোষাকের বাহার দেখলেই বুঝা যায় এরা অন্ধকার নেশার জগতে ভাসছে, শরীরে রক্ত গরম হাতে দেশীয় অস্ত্র বাহাদুরীর শেষ নেই- তাই চুল কাটে তিনচার রকম করে অর্ধেক লাল, কারো ঝাকরা বাবরিচুল, দাড়ি কিছু কাটে কিছু রাখে, মাথায় ঝুটি বাধে ছিড়া প্যান্ট, ইত্যাদি অদ্ভুত ড্রেস পরে গুরুপ বেধে চলে।
কিশোর গ্যাং এখন ঢাকায় সবত্র ছড়িয়ে পড়েছে উত্তরা, আব্দল্লাপুর, দক্ষিনখান, টঙ্গী ষ্টেশন রোড, নিকুঞ্জ-০২, বাড্ডা, ভাটারা সহ প্রায় প্রতিমহল্লায় কিশোর গ্যাং এর উপস্থিতি দেখা যায়।
এদের কোন কর্ম নাই ব্যবসা নাই তবু নতুন নতুন বাইক এ চড়ে দামী সিগারেট ফুকায় সন্ধ্যার পর আবার নেশার আড্ডায় মত্ত হয়ে যায়।
তদন্ত করে দেখা গেছে নেশার টাকা জোগার করতে চাঁদাবাজি ছিনতাই করে রাজনৈতিক বড় ভাইদের কোন অবৈধ কাজ উদ্ধার করে দিলে সেখান থেকে টাকা আসে ঐ টাকায় নেশা করে। প্রতিটি কিশোর গ্যাং গ্রæপ কোন না কোন অপরাধের সাথে জড়িত
। কয়েক মাস আগে উত্তরা নিকুঞ্জে দুই কিশোর গ্যাং আধিপত্য নিয়ে দ্বন্ধ হয় অবশেষে চৌদ্দ বছরের এক কিশোরকে ছুরি দিয়ে পাড় দিয়ে মেরে ফেলে। কিশোর গ্যাংয়ের অত্যাচারে মান সম্মান নিয়ে মুরব্বিরা রাস্তায় হাটতে কষ্ট হচ্ছে। চায়ের দোকানে বাপ দাদার বয়সী ব্যাক্তির সামনে গাজা ভর্তি সিগারেট টানে।
কিশোর গ্যাং টাকার উৎসের মধ্যে অন্যতম মাদক ব্যবসা এরা বেশীর ভাগ ভাড়াটিয়া। ঢাকা উত্তরে প্রায় মহল্লায় কিশোর গ্যাংয়ের আলাদা গ্রæপ আছে। নব্য কিছু গডফাদার এদেরকে লোভ লালসা ও বেশী সুবিধা দিয়ে নিজেদের ধলে ভিড়ায় নিজেদের পাল্লা ভারি করে। গডফাদারদের চাঁদা উঠানো কিছু দখল করার কিছু সাইড থাকে এই কিশোর গ্যাং দিয়ে তা পরিচালোনা করে, দেশীয় অস্ত্র ও নেশা কোনটাই অভাব হয় না গডফাদারদের কথা মতো চললে।
এই কিশোর গ্যাং ইভটিজিং করে এলাকার মেয়েদের উক্তপ্ত করে অনেক মেয়ে পরিবার লজ্জায় থানায় যায় না। অনেক পরিবার বাবা মা দুইজনই টাকা উর্পাজনে ব্যস্ত তাদের ধারনা সন্তান বিশাল বিদ্যান হচ্ছে কিন্তু একবারও খবর নিয়ে দেখলো না তার সন্তান অন্ধাকার জগতে জিপিএ ৫ পেয়েছে। জৈনক ব্যাক্তি (বাবা) ফেরি করে চা পাতা বিক্রি করে মা মোবাইলের দোকানে কাজ করে। অথচ ৫২ হাজার টাকায় ছেলেকে মোবাইল কিনে দিয়েছে, প্রশ্ন করতেই উত্তর দিল ছেলে ভালো কলেজে পড়ে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হয় তাই কিনে দিয়েছি।
কিশোরদের অন্ধকার জগৎ থেকে আলোর জগতে ফিরিয়ে এনে সুনাগরিক সভ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব সকলের মা, বাবা, শিক্ষক প্রশাসন, গনমাধ্যম ও সমাজের। অনেক কিশোর ছেলেরা পারিবারিক হতাশা, কষ্ট, প্রেমে ব্যর্থ, অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারে টানাপোড়ন বাবা মার সংসার জীবন বিচ্ছেদ, ছেলে মেয়েরা মানষিক বিষন্নতায় ভোগে অনিশ্চিয়তার দিকে নিজেকে ঠেলে দেয়। আবার বাবা মার দ্বিতীয়, তৃতীয় বিয়ে সন্তান স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারে না, ফলে সন্তানের হৃদয়ে স্থায়ী ক্ষতের সৃষ্টি হয় তখন কিশোর গ্যাংয়ের সাথে জড়িয়ে পড়ে। যে
কারনেই অপরাধ ঘটাউক না কেনো কেউ অপরাধের পক্ষ নিতে পারে না, অপরাধকে সমর্থক করা কারোই উচিৎ নয়। কিশোর জীবন, সমাজ জীবন, পারিবারিক জীবন, ছাত্র জীবন, সুন্দর করার জন্য কিশোর গ্যাং বিষয়ে গোয়েন্দা রিপোটের মাধ্যমে প্রশাসন এখনই কঠোর নজর দারির মাধ্যমে কিশোর গ্যাং প্রতিহত করতে হবে, নয়তো বা অকালে প্রান যাবে মায়ের চোখে লোনা জলে ভাসবে। ঘৃনা করে দূরে সরিয়ে দিলে অপরাধ কখনো কমবে না।
কিশোর গ্যাং এ সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু নয় এ সমাজের আমাদের আপনাদের সন্তান তাই এদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে ফিরিয়ে আনতে হবে। ওদের জন্য আলোকিত ভবিষৎ অপেক্ষা করছে কিন্তু বাবা মার অবহেলায় আর সমাজের ঘৃনায় যদি অংকুরে আলোকিত পথ অন্ধকারে নেমে আসে তবে এই কিশোর গ্যাং থেকেই এক সময় গ্যাং ষ্টার হয়ে যাবে। অর্ধশিক্ষিত রক্ত টগবগে বাতাশের সাথে উত্তাল হাওয়ায় উড়ে বেড়ানো কিশোরাই বলির পাঠা হয়- টকবগে অগ্রগামী কিশোর এদের কে নিকৃষ্ট ব্যাক্তি স্বার্থন্বেষী মহল তাদের স্বার্থে ব্যবহার করে। চাঁদাবাজ, ভুমি দস্যু, সন্ত্রাসী ক্যাডার, রাজনীতির কিছু অন্ধকার জগতের নেতা সবাই তাদের শক্তি তাদের দলভারী করার জন্য এই কিশোর গ্যাংদের সবসময় গৃহপালিত পশুর মতো লালন পালন করে। কিশোর অপরাধ এর কঠিন কোন শাস্তির বিধান নাই, কিশোর সংশোদনাগারআছে তাই অনেকে এই অপরাধকে মনে ভয় জাগায় না সহজে অপরাধ করার উৎসাহ পায়।
কিশোর অপরাধ পরিবার থেকেই শুরু হয় ধর্মীয় শিক্ষা, নৈতিক শিক্ষা, পারিবারিক শিক্ষা, সামাজিক শিক্ষা আজ বিলুপ্তির পথে। ঘরে বাবার অপরাধমূলক নীতিবিবর্জিত কাজ থেকে শিক্ষা নেয়, অবৈধ পন্থায় সন্তানকে বড় বিদ্যালয়ে দিলেও যত বিদ্যানই হউক না কেনো ওর মাঝে দুর্নীতির রক্ত প্রবাহিত তাই ওই শুরু থেকেই অপরাধ মূলক কর্মকান্ডে ঝুকেপড়ে শুরু হয় কিশোর অপরাধ থেকে অপরাধের যাত্রা।
আমরা যখন পরিবার নিজ ধর্মীয় অনুশাসন থেকে দূরে সরে যাই বিধর্মী অনুশাসন থেকে দূরে সরে যাই বিধর্মী অনুশাসন রীতি নীতি কালচার বুকে ধারন করি তখন ছোট বড় সব অপরাধ আমাদের জীবনে বাসা বাধে। নেতার ছেলে মেয়েরা বিদেশে গিয়ে লেখাপড়া করে দেশে এসে বড় নেতা পদ পদবীর অধিকারী হয় অর্থের পাহাড় বানায়। আর মাঠের তৃণমূল সংগ্রামী কর্মীর ছেলে মেয়েরা অভাব অনটনে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয় ঐ হাইব্রীড নেতাদের হুকুমের গোলাম হয়ে যায়। কুট কৌশলী বুদ্ধির বেড়াজালে সন্তা জনপ্রিয়তা বোগলে ছরি মুখে হাসি দিয়ে উঠতি বয়সি ছেলেদেরকে ভবিষ্যতের লোভনীয় স্বপ্ন দেখিয়ে কিশোরদের দিয়ে অপকর্ম করে পেশী শক্তি প্রদর্শন করে নেতাদের উদ্দেশ্য সফল করে এরাই এক সময় কিশোর গ্যাং লিডার গ্যাং ষ্টার মাফিয়া ডন।দিন দিন যে হারে কিশোর অপরাধ বাড়ছে তাতে কিশোর গ্যাং সভ্য সমাজের জন্য আতংক হয়ে দাড়িয়েছে।
লেখক ঃ সাংবাদিক, নাট্যকার, কলামিষ্ট