কুপির আলোয় চলছে গ্রামবাসীর জীবন, এক যুগেও জোটেনি বিদ্যুৎ !
রেখা মনি, নিজস্ব প্রতিবেদক
Facebook Twitter share
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়িতে গুচ্ছগ্রাম (আবাসন প্রকল্প) নির্মাণের এক যুগ অতিবাহিত হলেও ভাগ্যে জোঁটেনি বিদ্যুৎ সংযোগ। শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা ঘোষণা হলেও চরগোরকমন্ডল খোকার চরের পাঁচটি পরিবারসহ চরগোরকমন্ডল গুচ্ছগ্রামে আবাসনের প্রায় ৪০টি পরিবারের ভাগ্যে এখনো জোটেনি বিদ্যুৎ সংযোগ।
Surjodoy.com
প্রায় দু’বছর আগে বিদ্যুতের খুঁটিসহ কারেন্টের লাইন থাকলেও এখনো সংযোগ দেয়া হয়নি গুচ্ছগ্রামে। ফলে সরকারের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এসব পরিবারের সদস্যরা।
The Daily surjodoy
ফলে গুচ্ছগ্রাম (আবাসন) প্রকল্পে ৬০ টি পরিবার বছরের পর বছর কুপি, হ্যারিকেনের আলো দিয়ে দুর্বিসহ জীবনযাপন করছে। অনেকেই এই অসহনীয় দূর্ভোগ সহ্য করতে না পেরে গত পাঁচ বছর আগেই ২০ টি পরিবার অন্য জায়গায় ঠাঁই নিয়েছেন।
The Daily surjodoy
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দুরে সীমান্তঘেষা নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চরগোরকমন্ডল এলাকায় গুচ্ছগ্রাম (আবাসন) ২০১০ সালে নির্মাণ করা হয়।
নির্মাণ শেষে উপজেলায় ৬০টি দরিদ্র ভূমিহীন পরিবারের আশ্রয় নেয় গুচ্ছগ্রামে। পরিবার-পরিজন নিয়ে বাসস্থানের সুযোগ পেলেও শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলায় তাদের ভাগ্যে জোটেনি পল্লী বিদ্যুতের সুফল।
ফলে দীর্ঘ প্রায় এক যুগ ধরে ল্যাম্প বা কুপি, হ্যারিকেনের আলো দিয়ে দুর্বিসহ জীবনযাপন করতে হচ্ছে এখনো।
The Daily surjodoy
পর্যাপ্ত গাছগাছালি না থাকায় গরমে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাদের। বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেও বিদ্যুতের মুখ দেখতে পাচ্ছে না গুচ্ছগ্রামবাসী। এতে করে অন্ধকারেই অর্ধ-শতাধিক স্কুল পড়ুয়া সন্তান নিয়ে ভোগান্তি পড়েছেন।
গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা মালেকা বেগম ও আঞ্জু বেগম বলেন, আমরা ১১/১২ বছর ধরে গুচ্ছগ্রামে অন্ধকারেই বসবাস করছি।
The Daily surjodoy
সব জায়গায় বিদ্যুৎ গেছে। শুধু গুচ্ছগ্রামে নাই। আমরা গুচ্ছগ্রামের নারীরা রাতের বেলা কুপির আলো দিয়েই অনেক কষ্ট করে রান্না-বান্না করি। সেই সাথে প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই কুপির আলো দিয়েই আমাদের সন্তানরা পড়াশুনা করছে। যেন দেখার কেউ নেই।
আবাসনের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাসুদ রানা, মাইদুল ইসলাম, আছমা খাতুন ও আম্বিয়া খাতুনসহ অনেকেই জানান, কারেন্ট নেই প্রচণ্ড গরমে আমরা ঠিক মতো পড়াশুনা করতে পারছি না।
The Daily surjodoy
প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই আমরা কুপি ও হ্যারিকেনের আলো দিয়ে কোন রকমেই পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু গরমের দিনে কুপি ও হ্যারিকেনের আলো দিয়ে বেশিক্ষণ পড়াশুনা করতে পারি না।
বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলে আমরা বিদ্যুতের আলো ও ফ্যানের বাতাসে মনের আনন্দে পড়াশুনা করতে পারতাম। তাই গুচ্ছগ্রামে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগের জোড়দাবী জানান কমলমতি শিক্ষার্থীরা।
চরগোরকমন্ডল গুচ্ছগ্রামের সভাপতি আব্দুল মালেক জানান, কি বলবো ভাই। আমাদের মাথা গোঁজার ঠাই না থাকায় সরকার আমাদের ঠাই দিয়েছে।
The Daily surjodoy
শুনেছি শতভাগ বিদ্যুতায়িত ফুলবাড়ী উপজেলা ঘোষণা করেছেন। অথচ আমরা গুচ্ছগ্রামবাসী বসবাসের প্রায় এক যুগ পেড়িয়ে গেলেও এখন বিদ্যুৎ সংযোগ মেলেনি। অনেক কষ্টে গুচ্ছগ্রামের নারীরাসহ প্রায় ৫০ জন স্কুল পড়ুয়া ছেলে-মেয়ে আছে।
রাত হলেই আমাদের মহাবিপদ। নারীরা কুপির আলো দিয়ে রান্না-বান্নাসহ ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনা করছে। এক কথাই অনেক কষ্টে পরিবার নিয়ে কোনো রকমেই বেঁচে আছি।
The Daily surjodoy
নাওডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান মুসাব্বের আলী মুসা জানান, গুচ্ছগ্রামসহ এলাকার খোকার চরে এখনো পাঁচটি অসহায় পরিবার বিদ্যুৎ সংযোগ পাইনি। গুচ্ছগ্রামসহ ঐ এলাকার পাঁচ পরিবারে বিদ্যুৎ সংযোগের এব্যাপারে বার বার পল্লীবিদ্যুত অফিসে যোগাযোগ করা হলেও কোন কাজ হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
কুড়িগ্রামস্থ লালমনিহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ফুলবাড়ী জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোস্তফা কামাল জানান, চরগোরকমন্ডল গুচ্ছগ্রাম (আবাসন) ও খোকার চরে পাঁচটি পরিবারে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। কিন্তু গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা ঐ পাঁচটি পরিবার এখনো জামানত, সদস্য ফি ও ওয়ারিং না থাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি। যত দ্রুত জামানত, সদস্য ফি ও ওয়ারিং করবে, ঠিক ততো দ্রুত তারা বিদ্যুৎ সংযোগ পাবে।