
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
দিনের পর দিন কুড়িগ্রামে অফিসে রাত্রিযাপন করে বাড়িভাড়া উত্তোলন করছেন জেলা সমবায় কর্মকর্তা এসএম শহীদুল আলম। ভুয়া বিল ভাউচারসহ অধিক মূল্যে অফিসের আসবাবপত্র ক্রয় এবং বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে কর্মকর্তার রোশানলে পড়েন স্থানীয় সাংবাদিকরা।
সংগৃহীত মোবাইল ভিডিওতে দেখা যায়, জেলা সমবায় কার্যালয়ের কক্ষে রয়েছে লাল চাদর বিছানো একটি খাট, টেবিল-টিভি, চেয়ার। অন্য কক্ষে র্যাকের উপর সাজানো অফিসের জরুরি ফাইল পত্র। আর নিচে চাল ভর্তি কন্টেইনার, রাইস কুকার, লবণ, হলুদ, আলু-পিয়াজ-রসুন, সবজিসহ রান্নার সরঞ্জামাদী। এই দৃশ্য দেখে যে কারোই মনে হবে এটা অফিস নয় মানুষের থাকার ঘর। খোদ কুড়িগ্রাম জেলা সমবায় কর্মকর্তা এসএম শহীদুল আলম সরকারি অফিসকে বানিয়েছেন আবাসিক। গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেবার পর থেকেই তিনি অফিস কার্যালয়েই রাত্রিযাপন করাসহ খাওয়ার সুব্যবস্থা করছেন। আবাসিক কিংবা বেসরকারি ভাড়া বাসাতে না উঠেও মিথ্যা তথ্য দিয়ে সরকারের কাছ থেকে ২৫ শতাংশ বাড়ি ভাড়া উত্তোলন করছেন এই অসাধু কর্মকর্তা।প্রধান কর্মকর্তার এমন কর্মকাণ্ডে বিব্রতকর পরিস্থিতেই দীর্ঘদিন ধরে অফিস করতে হচ্ছে অন্যান্য স্টাফদের। বদলী আর শাস্তির ভয়ে সাহস পায়নি জেলা সমবায় কর্মকর্তার কান্ডের প্রতিবাদ করতে।
গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর জেলা সমবায় কার্যালয়ে রাত্রি যাপন না করতে সমবায় কর্মকর্তাদের রংপুর বিভাগীয় সমবায় কার্যালয়ের যুগ্ম নিবন্ধক মোহাম্মদ আবুল বাশার স্বাক্ষরিত একটি নির্দেশনা দেয়া হয়। সরকারের এই নিদের্শনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জেলা সমবায় কর্মকর্তা এসএম শহীদুল আলম অফিস কার্যালয়ে রাত্রিযাপন করছেন দীর্ঘদিন ধরে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে সমবায় সমিতি অনুমোদনে উৎকোচ গ্রহণ, ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি, অধিক মূল্যে অফিসের আসবাবপত্র ক্রয়, প্রশিক্ষণার্থীদের ভাতা না দেয়াসহ লক্ষ-লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগ সম্পর্কে কোন ধরনের মন্তব্য করতে কিংবা তথ্য প্রদানে রাজি নন এই কর্মকর্তা। উল্টো সংবাদকর্মীদের সাথে দুর্ব্যবহার করে তার কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন।জেলা সমবায় কর্মকর্তা এসএম শহীদুল আলমের কাছে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে তার কক্ষে প্রবেশ করতেই তিনি ক্যামেরা, মোবাইল দেখে তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন। বলতে শুরু করেন আমার ছবি তুলবেন না। গেট আউট, গেট আউট বলতে বলতে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ান তিনি। এ সময় বেল টিপে অফিসের অন্যান্য স্টাফদের ডাকতে থাকেন। এ সময় প্রশ্নের জবাবে বলেন,আমি কোন কথা বলব না। সমবায় সম্পর্কে তথ্য জানতে চাইলে তথ্য অধিকারে আবেদন দেন।বদলী এবং শাস্তির ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অফিসের একাধিক স্টাফ জানান, স্যার এখানে যোগদানের পর থেকে অফিসেই রাত্রিযাপন করছেন। এখানেই তার থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। অফিসের কেউ ছুটি নিতে চাইলে স্যারকে সাবান, শ্যাম্পুসহ তরিকারীসহ প্রসাধনী উপহার দিতে হয়। না দিলে তার ছুটি হয় না। এছাড়াও অফিসের আসবাব ক্রয়, বিভিন্ন ট্রেনিংয়ে ভাতা, খাবার টাকা না দিয়েই তিনি নিজেই পকেটস্থ করতেন। তিনি যে রুমটিতে থাকেন বের হয়ে আসার পর তালাবদ্ধ করে রাখেন সবসময়। অফিসের কোন স্টাফ সেখানে যেতে পারে না। শুধু বেটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে। অথচ অফিসের এই কক্ষটি সহকারি জেলা সমবায় অফিসারের কক্ষ। এই পদে কেউ না থাকায় তিনি তার বাসস্থান করেছেন যা সরকারি বিধি বহির্ভূত।
প্রায় ১৭ বছর ধরে আয়ার কাজ করা মেহরে বানু জানান, স্যার অফিসে থাকেন। মুই মাঝে মধ্যে ধোওয়া মোচা করি দেন বাহে। স্যারের জন্য রান্নাবান্না করিও দেন। বেশির ভাগ সময় আরেকজন দেয়।
ভূরুঙ্গামারীর সূর্যোদয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লি. সভাপতি মমিনুল ইসলাম বলেন, জেলা সমবায় কর্মকর্তা এসএম শহীদুল আলম সমবায় সমিতি অনুমোদন নিতে বিভিন্ন জনের নিকট হতে ৫ হাজার হতে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত উৎকোচ নেন। পরিচিত হলেও ফ্রি কাজ করেও দেন। যার কাছে যেমন পান তেমন টাকা নেন।একই সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান বলেন,সমিতি অনুমোদন নিতে সরকারের ফি সম্পর্কে আমাদেরকে অবহিত করেনি। সমিতির ব্যাংক ড্রাফট কত টাকা এবং এর কোন রশিদ আমাদেরকে দেয়নি। উপজেলা সমবায় অফিসের এক লোকের মাধ্যমে সমিতির অনুমোদন নিতে জেলা-উপজেলা সমবায় অফিসে খরচ গেছে প্রায় ১৩ হাজার টাকা।
কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাব সভাপতি অ্যাড. আহসান হাবীব নীলু জানান, জেলা সমবায় কর্মকর্তার দুর্নীতি এখন ওপেন বিষয়। সে ট্রেজারি চালানে মিথ্যা তথ্য দিয়ে দিনের পর দিন সরকারের কাছ থেকে বাড়ি ভাড়া উত্তোলন করছেন। অফিসে থাকার সুযোগে প্রায় সময় লুঙ্গি-গেঞ্জি পড়ে অফিস করেন। সরকারি নিয়মনীতি ভঙ্গ করে অফিসের অন্যান্য স্টাফদের ভয়ভীতি দেখিয়ে দিনের পর দিন অনিয়ম আর দুর্নীতি করে যাচ্ছেন জেলা সমবায় কর্মকর্তা।
জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ হারন উর রশীদ বলেন,সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে কর্মস্থলে কর্মকর্তাদের রাত্রিযাপন করা নিন্দনীয় বিষয়। এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের বিষয়টি ধিক্কার জানাই। এর সঠিক তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
রংপুর বিভাগীয় সমবায় কার্যালয়ের যুগ্ম নিবন্ধক মোহাম্মদ আবুল বাশার তার স্বাক্ষরিত চিঠির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অফিসে রাত্রিযাপন করার কোন নিয়ম নেই। তারপরেও কেউ থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ জাতীয় আরো খবর..
Leave a Reply