কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামে কমতে শুরু করেছে ধরলা নদীর পানি। এছাড়াও কমে যাচ্ছে ব্রহ্মপূত্র নদের পানিও। ধরলা নদী অববাহিকার পানিবন্দী পরিবারগুলোর মধ্যে অনেকেই বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছেন। বন্যার্তরা সাময়িক জলবন্দী অবস্থা থেকে কিছুটা মুক্তি পেলেও এখন ভাঙা বাড়িঘর ও সার্বিক ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে আশংকায় রয়েছে। এছাড়াও আসন্ন ঈদের এই সময়টাতে তারা পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কিনা এনিয়ে সন্দেহ রয়েছে। সোমবার বিকেল পর্যন্ত ব্রহ্মপূত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৬৩ ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ৪১ এবং ধরলা নদীর পানি ব্রীজ পয়েন্টে ২২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বানভাসী কৃষকরা আমনের বীজতলা নিয়ে বিপাকে রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে জেলার বন্যা ও করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে জেলার সার্বিক বন্যা ও করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি ও জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকান্ড নিয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম। এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) হাফিজুর রহমান, জেনারেল হাসপতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: আবু মো: জাকিরুল ইসলাম, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম,জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শায়হান আলী, কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবরে সভাপতি অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব নীলু, সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান বিপ্লব, সিনিয়র সাংবাদিক সফি খান প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত কয়েক সপ্তাহ যাবৎ কুড়িগ্রামে কোভিড ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঈদ ও কোরবানীর হাটসহ জনসমাগম কমাতে সংবাদ সম্মেলনে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে দোকানপাট বন্ধ রাখা, জনসামাগম কমাতে আইন শৃংখলা বাহিনীর টহল জোড়দারকরণ এবং ম্যাজিস্ট্রেসি মোবাইল টিম দেকভাল করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। এখন পর্যন্ত কুড়িগ্রামে ৩ হাজার ৮৮৭জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরমধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৩৭জন। আরোগ্যলাভকারী ২২৪জন। মারা গেছে ৬জন এবং আইসোলেশনে রয়েছে ২০৭জন।
এদিকে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় দুর্গতরা যাতে কষ্ট না পায় এজন্য গণমাধ্যমকর্মীসহ সকলের সহযোগিতা চাওয়া হয়। প্রথমদফা বন্যায় ৯টি উপজেলার ২২টি ইউনিয়নের মোট ১৬ হাজার ১শ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত এবং ১১জন পানিতে ডুবে মারা যায়। দ্বিতীয় দফা বন্যায় ৫৬টি ইউনিয়নে ৬৩ হাজার ১৩০টি পরিবার পানিবন্দী হয়েছে বলে জানানো হয়। বন্যায় পানিতে ডুবে মারা যায় ৮জন। সর্বগ্রাসি বন্যায় ৩২টি পয়েন্টে ৭ কিলোমিটার নদী ভাঙন হয়েছে। বন্যায় বীজতলা, আউশ, পাট, মরিচ ও শাকসবজীর ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৭ হাজার ৭৬৭ হেক্টর জমিতে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বন্যার্তদের সহযোগিতায় রেসকিউ টিম, ৪৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র, ৩৬টি গুচ্ছগ্রাম ২৪টি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ব্যারাক প্রস্তুত করা হয়। স্বাস্থ্যবিভাগ থেকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ১০টি এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ৭৫টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য থেকে ২টি মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, ১৬০টি নলকুপ পরিদর্শন, ২টি নলকুপ স্থাপন, ৪ হাজার ২৭০টি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও ৬৮টি জেরিকেন সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে ১৩২টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৩ হাজার ৮৫৬টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। সৃষ্ট বন্যায় এখন পর্যন্ত ৫৬ হাজার পরিবারকে ত্রান সামগ্রি বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও ঈদ উপলক্ষে ৪ লক্ষ ২৮ হাজার ৫২৫টি পরিবারের মাছে ১০ কেজি করে ভিজিএফ চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
Like this:
Like Loading...
Related
এ জাতীয় আরো খবর..