কুড়িগ্রামে নির্বাচনের বিধি নিষেধ না মেনেই অবৈধ ছাপাখানা থেকে নির্বাচনী সামগ্রী ছাপানোর কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে প্রেস মালিকরা। এতে করে আচরণ বিধি ভংগ হবার পাশাপাশি রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
সারাদেশের ন্যায় কুড়িগ্রামেও জমে উঠেছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের নির্বাচনী পোষ্টার, ফেস্টুন, লিফলেটে ছেয়ে গেছে পাড়া-মহল্লাসহ হাট বাজার। প্রচার-প্রচারণায় প্রার্থীরা নিয়ম না মানায় এর প্রভাব পড়ছে নির্বাচনী প্রচারণায়। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বিধি না মেনে অনুমোদনহীন প্রেস থেকে নির্বাচনী সামগ্রী ছাপানোর কারণে বৈধ প্রেস মালিকরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। পাশাপাশি বিপুল পরিমাণে রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। করোনার দুর্যোগে বৈধ প্রেস মালিকরা সরকারি অনুদান না পাওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেবার স্বম্ভাবনা ছিল। কিন্তু প্রশাসনের নজরদারী না থাকায় অবৈধ ব্যবসায়ীদের কারণে সেটিও স্বম্ভব হচ্ছে না বৈধ ব্যবসায়ীদের। ছাপাখানা ও প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধন) ১৯৭৩সাল আইন অনুযায়ী ডিক্লারেশন প্রাপ্তি ব্যতিরেকে যে কোন প্রতিষ্ঠানের মুদ্রণ কাজ করা দন্ডনীয় অপরাধ। অথচ প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কুড়িগ্রামে বিভিন্ন কম্পিউটার প্রিন্টের দোকান,স্ক্রিন প্রিন্টের দোকানে পোস্টার, লিফলেটসহ অন্যান্য নির্বাচনী প্রচার সামগ্রী ছাপানো হচ্ছে। ছাপানোকৃত প্রচারণা সামগ্রীতে মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের বদলে নিজেদের নাম ব্যবহার করছে যা আইন বর্হিভূত। নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশ এর বিধি অনুযায়ী সকল নির্বাচনী পোস্টার, লিফলেটে ছাপার ক্ষেত্রে মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা এবং মুদ্রণের তারিখ থাকতে হবে। এছাড়াও ২০১৬সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালার প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে-কোন প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী বা তাহার পক্ষে অন্য কোন ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা ও মুদ্রণের তারিখ বিহীন কোন পোস্টার লাগাইতে পারিবেন না। বিধি অনুযায়ী একজন প্রার্থীও ৬০×৪৫সেন্টিমিটার সাদা-কালো রঙ্গের পোষ্টার হতে হবে। প্রার্থীর ছবি ৬০×৪৫ সেন্টিমিটার এবং ভোটার স্লিপ ১২×৮সেন্টিমিটার আয়তনের হতে হবে এবং নির্বাচনী প্রতিক আকার,দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা ৩মিটারের বেশি হতে পারবে না। কিন্তু কুড়িগ্রামে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীরা বিধি নিষেধ না মেনে তাদের মনগড়া নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে নির্বাচনী প্রচারণা প্রভাবিত হচ্ছেও বলে অভিযোগ প্রার্থীদের।
চর ভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী এনামুল ইসলাম রোকন বলেন,নির্বাচনী বিধি না মেনে অনেক প্রার্থীরা পোষ্টার ছাপিয়েছে। আমার পোষ্টার ছোট ওনাদের পোষ্টার বড়। এতে করে নির্বাচনে প্রভাব পড়বে।
জয়মনিরহাট-ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী গোলাম রব্বানী তালুকদার বাদল বলেন,আমি পোষ্টার পাচ্ছি বিভিন্ন মাধ্যম থেকে। আমি নিজে কোন পোষ্টার ছাপাচ্ছি না। পোষ্টার জনগণ দিচ্ছে কোথা থেকে দিচ্ছে আমি সঠিক জানি না।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পোস্টার ছাপানো ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন,আমি একজন চেয়ারম্যান ও ৭/৮জন মেম্বারের পোষ্টার ছাপানো কাজ পেয়েছি। আমিতো পোষ্টার রংপুর থেকে ছাপিয়ে আনছি। পোষ্টারের ডিজাইন করে দেবার কারণে তারা আমাদের নাম ব্যবহার করছে। তবে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে স্বীকার করেন তিনি।
একই উপজেলার ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম ছাপাখানা ও প্রকাশনা নিয়ে সরকারের অনুমোদন না থাকলেও শুধুমাত্র ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে নির্বাচনী প্রচার সামগ্রী ছাপানো হচ্ছে বলে জানান তিনি। সরকারকে রাজস্ব দিচ্ছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,আমি নির্বাচন শেষে রাজস্ব দেবো।
নির্বাচনী বিধি নিষেধ সম্পর্কে ধারণা না থাকলেও এই বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কিছু জানানো হয়নি বলে পোষ্টার ছাপানো একই স্থানে হাফিজুর রহমান হাফিজ নামে এক ব্যবসায়ী।
কুড়িগ্রাম প্রেস মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মাহফুজার রহমান বলেন,বৈধভাবে কুড়িগ্রাম সদরে ১২টি এবং নাগেশ্বরী উপজেলায় একটি ছাপাখানা ও প্রকাশনা রয়েছে। নিয়মিতভাবে সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে আসছেন জেলার প্রেস মালিকগণ। করোনা দুর্যোগে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়লেও সরকারি কোন অনুদান জোটেনি তাদের ভাগ্যে। এবারের নির্বাচনের ছাপানোর কাজের স্বপ্ন দেখলেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে সেটিও হচ্ছে না। এতে মারাত্বকভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলার রিটার্ণি কর্মকর্তা ও ইউএনও দীপক কুমার দেব শর্মা বলেন,বৈধ ছাপাখানে থেকে প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী সামগ্রী ছাপাবেন এমনটাই প্রত্যাশা করেন তিনি। তবে কোন প্রার্থী নির্বাচনী আচরণ বিধি ভংগ এবং বৈধ ছাপাখানা থেকে নির্বাচনী প্রচার সামগ্রী না ছাপলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবার আশ্বাস দেন তিনি।