মোহাম্মদ জুবাইর
দুইটি ডার্বি সিগারেটেরের সূত্র ধরে ঢাকার আশুলিয়ায় চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস বিমলচন্দ্র হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন সহ ঘটনার সাথে জড়িত আসামী হাফেজ (৪০) কে গ্রেফতার করেছে পিবিআই ঢাকা জেলা। গত ইং ২২ জুন ২০২৩ তারিখ বিকাল অনুমান ৫.১০ টার সময় তাকে আশুলিয়ার জিরানী বাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
ভিকটিম বিমল চন্দ্র মন্ডল (৫৫) স্ব-পরিবারে আশুলিয়ার জামগড়া মনির মার্কেট এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় ভিকটিম বিমল চন্দ্র বাসায় অবস্থান করে এবং জীবিকার তাগিয়ে তার স্ত্রী এবং কন্যা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে চাকুরী করতেন। গত ১৬ এপ্রিল ২০২৩ তারিখ প্রতিদিনের ন্যায় ভিকটিম বিমলের স্ত্রী এবং কন্যা কাজের তাগিদে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে চলে যায়। ভিকটিম বিমল চন্দ্র একাই বাসায় অবস্থান করে। ঐ দিন ডিউটি শেষে অফিস ছুটি হওয়ার পর বিকাল অনুমান ৪.৩০ টার সময় ভিকটিম বিমলের কন্যা পূর্ণিমা রানী মন্ডল বাসায় গিয়ে তার পিতাকে কাপড় কাটার কেচি (সিজার) মুখে ঢুকানো অবস্থায় দেখতে পান। তার চিৎকার চেঁচামেতিতে আশ-পাশের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিকটিমকে মৃত অবস্থায় দেখতে পায়। তখন সে বিষয়টি মোবাইল ফোনে তার মাকে জানায়। অজ্ঞাতনামা আসামীরা গত ১৬ এপ্রিল ২০২৩ তারিখ সকাল অনুমান ৬.৩০ টার পর থেকে বিকাল অনুমার ৪.৩০ ঘটিকার মধ্যে যে কোন সময় ভিকটিম বিমল চন্দ্রকে নৃসংসভাবে হত্যা করে পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় ভিকটিমের স্ত্রী পারুল (৪০), পিতা- নিরাপদ বিশ্বাস, মাতা-দেবরানী বিশ্বাস, বর্তামান সাং-জামগড়া (মনির মার্কেট আবুল হোসেন ভূইয়ার ভাড়া বাসা), থানা-আশুলিয়া, জেলা-ঢাকা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানার মামলা নং-৪৪, তারিখ-১৭/০৪/২০২৩ ইং, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড আইনে হত্যা মামলা দায়ের করেন। আশুলিয়া থানা পুলিশ ১৭ এপ্রিল ২০২৩ থেকে ৪ জুন ২০২৩ পর্যন্ত মামলাটি তদন্ত করেন। গত ৪ জুন ২০২৩ তারিখ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের নির্দেশে পিবিআই ঢাকা জেলা মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে।
পিবিআই প্রধান অ্যাডিশনাল আইজিপি জনাব বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম মহোদয়ের তত্ত্বাবধানে এবং পিবিআই ঢাকা জেলার ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার জনাব মোঃ কুদরত-ই-খুদা এর সার্বিক সহযোগিতায় তদন্তভার গ্রহণ করার ২০ দিনের মধ্যে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আনোয়ার হোসেন এর নেতৃত্বে এসআই মোঃ সালে ইমরান বিপিএম-সেবা এবং এসআই বিশ্বজিত বিশ্বাস সহ পিবিআই ঢাকার একটি চৌকষ টীম হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে তদন্তে নামেন। ভিকটিমের পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, এ হত্যাকান্ড ঘটনার অনুমান ৬ মাস পূর্বে ডিসিস্ট বিমল চন্দ্র মন্ডল স্ট্রোক করেন। তখন থেকে তিনি ধুমপান ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু হত্যাকান্ড ঘটনার দিন ডিসিস্টের বাসায় ডার্বি সিগারেটের দুটির অবশিষ্ট অংশ পাওয়া যায়। আর এ সিগারেটের শেষাংশের সূত্র ধরেই তদন্ত অগ্রসর হতে থাকে এবং বেশ কয়েকজনকে সন্দেহের তালিকায় আনা হয়। তার মধ্যে মোঃ হাফেজকে সন্দেহের তালিকায় ১ নম্বরে রেখে তার বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া শুরু হয়। তদন্তের এক পর্যায়ে পিবিআই ঢাকার তদন্ত টীম তথ্য প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ইং ২২ জুন ২০২৩ তারিখ বিকাল অনুমান ৫.১০ টার সময় তাকে আশুলিয়ার জিরানী বাজার এলাকা থেকে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে আসামী মোঃ হাফেজ (৪০), পিতা-মৃত ছাত্তার মন্ডল, সাং-দড়িসাড়া, থানা-গোপালপুর, জেলা-টাঙ্গাইল, এ/পি-জামগড়া মনির মার্কেট (ইউনুছ হাজীর বাড়ীর ভাড়াটিয়া) কে বিকাল অনুমান ৫.১০ টার সময় আশুলিয়ার জিরানী বাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী হাফিজ জানায় যে, ভিকটিম ও আসামি মোঃ হাফেজ এর স্ত্রী একই গার্মেন্টেসে চাকুরি করেন। একই গার্মেন্টেস্ এ চাকুরি করার সুবাদে এবং একই এলাকায় পাশাপাশি বসবাস করায় আসামি হাফেজ মাঝে মধ্যেই ভিকটিমের বাসায় যাতায়াত করতেন। ঘটনার দিন অর্থাৎ ১৬ এপ্রিল ২০২৩ ইং তারিখ সকাল ০৭:৩০ ঘটিকায় সে ভিকটিমের বাসায় যান। ঐ বাসার লোকজন সকলে গামেন্টসে চলে যাওয়ায় বাসা ফাঁকা ছিলো। আসামী হাফেজ ও ভিকটিম বিমল চন্দ্র এক সাথে টিভি দেখে এবং খাওয়া-দাওয়া করে। পরে আসামী ভিকটিম বিমলকে দিয়ে ডার্বি সিগারেট নিয়ে আসার জন্য বাসার নিচে দোকানে পাঠান। ঐ সময়ে আসামী হাফেজ ভিকটিমের বউয়ের অলংকার/গহনা ও টাকা পয়সা খোঁজাখুজি করতে থাকে। ভিকটিম সিগারেট নিয়ে বাসায় চলে এসে দেখেন যে, উক্ত হাফেজ ঘর অগোছালো করে কি যেন খোঁজাখুজি করছে। চুরির বিষয়টি ভিকটিম দেখে ফেলায় আসামী হাফেজ টেবিলে থাকা কাপড় কাটার কেঁচি/সিজার দিয়ে প্রথমে ভিকটিমের গলায় ডান পাশে পোঁচ দেয় এবং পরে কেঁচি/সিজার ভিকটিমের মুখে ঢুকিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে বাসা থেকে একজোড়া স্বর্ণের বাঁধানো শাখা, দুই জোড়া কানের দুল এবং দুই জোড়া চুড়িসহ আলমারীতে থাকা নগদ ৯,৫২০/- নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। মূলত আসামী হাফেজ বিদেশে যাওয়ার টাকা জোগাড় করতেই ভিকটিম বিমল চন্দ্রকে নৃসংসভাবে হত্যা করে নগদ টাকা সহ স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যায়। তাকে বিধি মোতাবেক বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হলে সে বিজ্ঞ আদালতে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে স্বেচ্ছায় ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় নিজেকে জড়িয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে।