কাজী মোতাহার হোসেন নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া অনেক দর্শকের
বাংলাদেশে ভারতীয় যেসব চ্যানেলের নাটক-সিরিয়ালে নাটক-সিরিয়ালে পারিবারিক বিরোধ, সামাজিক কূটচাল, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, স্বামী-স্ত্রী, বউ-শাশুড়ির কলহ, অশ্লিলতা প্রদর্শন করতো সেসব চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধের দাবি দীর্ঘ দিনের। বাংলাদেশের সামাজিক বন্ধন, পারিবারিক সম্পর্ক-সম্প্রীতি, শ্রদ্ধা-ভালবাসা নষ্টের মূলে দায়ী করা হয় এসব চ্যানেলের অনুষ্ঠানকেই। দেরিতে হলেও এসব চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। গত ৩০ সেপ্টেম্বর মধ্যরাত অর্থ্যাৎ ১ অক্টোবর থেকে আর দেখা যাচ্ছে না এসব চ্যানেলের কোন সম্প্রচার। একইসাথে খেলাধুলা, সংবাদ, কার্টুন, জিওগ্রাফির মতো চ্যানেলও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ভারতীয় নাটক-সিরিয়ালের চ্যানেল বন্ধে যেমন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাধুবাদ জানাচ্ছেন নেটিজেনরা অন্যদিকে সংবাদ, খেলা ও কার্টুন চ্যানেলগুলো বন্ধ করে দেয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অনেক দর্শক।
তারা বলছেন, ভারতীয় নাটক-সিরিয়ালের চ্যানেল আর বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা কিংবা খেলার চ্যানেলগুলো এক নয়। এদেশে প্রচুর দর্শক আছে যারা আন্তর্জাতিক খবর, খেলাধুলা দেখে থাকেন এসব চ্যানেলে। যা কোনভাবেই সমাজ কিংবা পরিবারের জন্য ক্ষতিকর নয়। আর বিজ্ঞাপনের কথা বন্ধ করা হলেও বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা তো বিজ্ঞাপন ছাড়াই সম্প্রচার করে থাকে। বিষয়টি নিয়ে গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় তোলেন দর্শকরা।
তারেক হোসাইন নামে একজন লিখেছেন, ভারতীয় টিভি সিরিয়ালগুলো কারণে বাংলাদেশের পারিবারিক বন্ধন নষ্ট হয়েছে, স্বামী-স্ত্রী, বউ-শাশুড়ীদের মধ্যে সন্দেহ, অবিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে। অনেক পরিবার ভেঙে গেছে, স্বামী-স্ত্রীর সংসার ভেঙেছে। এসব চ্যানেল বন্ধ করে দেয়ার জন্য তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন। একইসাথে সংবাদভিত্তিক চ্যানেল বন্ধের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এর মধ্যে বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরার মতো চ্যানেল বিজ্ঞাপন প্রচার না করলেও সেগুলো বন্ধ করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তারেক।
শেহরিন আবেদের পছন্দ সব ধরণের খেলা। বিনোদন বলতে তিনি খেলার চ্যানেলগুলোই দেখেন। বাংলাদেশ সময় গভীর রাতে লা লিগা বা প্রিমিয়ার লীগের খেলা মিস করেন না তিনি। তিনি বলেন, লা লিগার ফ্যান আমি। কিন্তু অন্য খেলা গুলো দেখি, টপ ফাইভ লীগের খেলার খোঁজখবর রাখি। সেক্ষেত্রে আমাদের জন্য অনেক দুর্ভাগ্যজনক যে চ্যানেলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। ফেসবুকে ফুটবল ফ্যানদের কয়েকটা গ্রুপ আছে। সেখানে অনেকে হতাশা প্রকাশ করছে। যারা খেলা দেখেন তাদের জন্য ব্যাপারটা সমস্যা হয়ে গেছে। সেখানে অনেকেই ভারতীয় সিরিয়ালের চ্যানেল ও খেলার চ্যানেলকে এক কাতারে বিবেচনা না করার অনুরোধ জানান।
এদিকে সরকার কোন চ্যানেল বন্ধ করেনি জানিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সরকার কোনো চ্যানেল বন্ধ করেনি। বিজ্ঞাপনমুক্তভাবে যেহেতু তারা ফিড দিচ্ছে না, তাই এসব চ্যানেলের যারা বাংলাদেশে অপারেটর, তারাই সম্প্রচার বন্ধ করেছেন। বাংলাদেশে বিজ্ঞাপনসহ অনুষ্ঠান প্রচার করে- এমন সব বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার বাংলাদেশে বন্ধ করে দিয়েছে কেবল অপারেটররা।
বাংলাদেশে বিজ্ঞাপনসহ অনুষ্ঠান প্রচার করে- এমন সব বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার ১ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশে বন্ধ করে দিয়েছে ক্যাবল অপারেটররা। বিজ্ঞাপনসহ বিদেশি চ্যানেল বাংলাদেশে সম্প্রচার করা যাবে না – তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল এসব চ্যানেলের দেশীয় পরিবেশকদের। বাংলাদেশে বিদেশি টিভি চ্যানেল সম্প্রচার সংক্রান্ত আইনে বলা আছে, যেসব বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দেখানো হয়, সেসব চ্যানেল বাংলাদেশে প্রদর্শন করা যাবে না। সরকার বলছে যাদের মাধ্যমে দর্শক বিদেশি চ্যানেল দেখতে পাচ্ছেন, তারাই ওই বিদেশি চ্যানেলগুলো বিজ্ঞাপন ছাড়া সম্প্রচার করবে। বিজ্ঞাপন ছাড়া বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচারের ক্ষেত্রে সরকারের কিছু করার নেই। সরকারের নির্দেশনা যারা মানবে না তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া ঘোষণাও আগেই ছিল। শুক্রবার থেকে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠে কাজ করছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। সম্প্রচার আইন বাস্তবায়ন গিয়ে গত বৃহস্পতিবার মধ্য রাত থেকে প্রথমে ক্যাবল অপারেটরেরা, এরপর ডিটিএইচ সংযোগ প্রদানকারীরা সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়। ফলে বিবিসি, সিএনএনসহ সব আন্তর্জাতিক সংবাদের চ্যানেল, খেলার চ্যানেল, কার্টুন চ্যানেল এবং ভারতীয় নাটক-সিরিয়ালের চ্যানেলগুলো বন্ধ হয়ে যায়। যা এখন পর্যন্ত বন্ধই আছে। এতে বিপাকে পড়েছেন দর্শকেরা। তারা এখন বাংলাদেশি টেলিভিশন ছাড়া বিদেশি কোনো চ্যানেল দেখতে পাচ্ছেন না। বিনোদনভিত্তিক, শিক্ষামূলক বা সংবাদভিত্তিক সব ধরনের বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ হয়ে আছে।
এদিকে চ্যানেল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এই নিয়ে নানা মন্তব্য করছেন নেটিজেনরা। অনেকে স্বাগত জানালেও, বাংলাদেশের চ্যানেলের অনুষ্ঠানের মান এবং বিষয়বস্তু যে তাদের বিনোদনের চাহিদা মেটাতে পারে না সেটাও উল্লেখ করছেন। অনেকে আবার বিজ্ঞাপন বিহীন চ্যানেলগুলোও বন্ধ করায় ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন।
দিপ্ত চক্রবর্তী নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, বিদেশি চ্যানেলে অনেক ভালো কিছু দেখাতো। সেখানে খেলা, মুভি দেখা যেতো। এখন আর দেখা যাবে না। বাংলাদেশের চ্যানেলগুলোতে কি আছে? কিছু নাটক, এগুলোতো ইউটিউিবেই দেখা যায়। তাহলে শুধু শুধু কেন ডিস রাখবো? আর বিল দিবো?
সৈয়দ আহমেদ নামে আরেকজন লিখেছেন, সউদী আরবের একটি চ্যানেলে দেখা যেতো যেখানে সব সময় পবিত্র মক্কা শরীফে হজের কার্যকলাপ ও কুরআন তেলাওয়াত করা হতো। সেই চ্যানেলের কি দোষ? সেখানে তো বিজ্ঞাপন ছিল না! তাদের চ্যানেলে কোনদিন বিজ্ঞাপন দিয়েছে দেখিনি। ওই চ্যানেলটি কেন বন্ধ করা হলো?
যদিও তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, কেউ যদি উদ্দেশ্যমূলকভাবে জনগণকে বিক্ষুদ্ধ করার জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত আসা চ্যানেল বন্ধ রাখেন, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, বিজ্ঞাপনসহ অন্যান্য আয়োজন চালানোর পরিপ্রেক্ষিতে ব
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy