ওয়াকিল আহমেদ, ক্ষেতলাল প্রতিনিধি
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল সরকারি ছাঈদ আলতাফুন্নেছা কলেজ মাঠে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু শিক্ষক ক্যাম্প-২০২৩ এর আজ শনিবার সমাপনী দিন। গতকাল শুক্রবার বেলা তিনটায় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্যাম্পের উদ্বোধন করেন।
জয়পুরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক সালেহীন তানভীর গাজী, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আরিফুর রহমান রকেট, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক, কালাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান মিলন, ক্ষেতলাল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাকিম মন্ডল, আক্কেলপুর উপজেলার পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম আকন্দ, ক্ষেতলাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত জাহান বন্যা, কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জান্নাত আরা তিথি, আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দ।
সভাপতির বক্তব্যে হুইপ স্বপন বলেন, আজকের এ সমাবেশ কোন দলীয় সমাবেশ নয়, এ সমাবেশ শিক্ষকদের সঙ্গে সেতুবন্ধন তৈরি করার এ সমাবেশ। বঙ্গবন্ধু শিক্ষার জন্য যা করেছেন তা আর কেউ করতে পারে নাই। করোনায় গোটা পৃথিবী থমকে গেছে। আবার ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে গোটা পৃথিবী থমকে গেছে। আজ গোটা পৃথিবী টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো ১০ বছর আগে যেটা ছিল সেটা এখন নেই, এখন অবকাঠামো অনেক উন্নয়ন হয়েছে। তবে, সম্পদ সীমিত হওয়ায় আমি তিন উপজেলা এবং উপজেলার জনপদকে ব্যালেন্স করে কাজ করি।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পক্ষ থেকে সমস্যা তুলে ধরেন ক্ষেতলালের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহবুবর রহমান চঞ্চল। তিনি বলেন, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অফিস কাম কম্পিউটার শিক্ষক থাকলেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অফিস কাম কম্পিউটার শিক্ষক নেই। এজন্য অনেক সময় দাপ্তরিক কাজের প্রয়োজনে তাদেরকে বাহিরে যেতে হয়। এতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি হয়।
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পক্ষ থেকে সমস্যা তুলে ধরেন ক্ষেতলাল আটিদাশড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোজাম্মেল হক রতন। তিনি বলেন, বিষয় ভিত্তিক দক্ষ শিক্ষকের অভাব, মাধ্যমিক পর্যায়ে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না থাকা, বেতন ভাতার বৈষম্যের কারণে মানসিক চাপ তৈরি হয়। এতে ভালোভাবে শিক্ষার ওপরে মনোনিবেশ দিতে পারে না। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা হলে শিক্ষার মানোন্নয়ন ঘটবে।
মাদ্রাসা শিক্ষকদের পক্ষ থেকে সমস্যা তুলে ধরেন কালাই থুপসাড়া সেলিমিয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক নাজমুল হক। তিনি বলেন, ঘন ঘন ক্যারিকুলাম পরিবর্তন, বিষয় ভিত্তিক দক্ষ শিক্ষকের অভাব, এবতেদায়ী পর্যায়ে উপবৃত্তি না দেওয়া, তদারকির অভাব, ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার ওপরে গুরুত্ব দেওয়া। এগুলো নিরসন করা হলে শিক্ষার মান উন্নয়ন ঘটবে।
কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পক্ষ থেকে সমস্যা তুলে ধরেন ক্ষেতলাল ইটাখোলা টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ জি এম কিবরিয়া। তিনি বলেন, দুর্বল ভৌত অবকাঠামো, ব্যবহারিক যন্ত্রপাতির অভাব, সীমিত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার, কারিগরি (বিএম) শাখায় উপবৃত্তি না থাকা, কারিগরি শিক্ষা সম্পর্কে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা এগুলো নিরসন করা হলে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান উন্নয়ন ঘটবে।
কলেজ পর্যায়ের পক্ষ থেকে সমস্যা তুলে ধরেন ক্ষেতলাল সরকারি ছাঈদ আলতাফুন্নেছা কলেজের প্রভাষক ও জীব বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান কে এম ফেরদৌস হোসেন। তিনি বলেন, সিলেবাস ও ক্যারিকুলাম ঘন ঘন পরিবর্তন, বেতন ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার বৈষম্য, পদোন্নতির সুযোগ কম, গভর্নিং বডির দ্বন্দ্ব, ব্যবহারিক ক্লাসের গুরুত্ব, প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সঙ্গে সমন্বয়হীনতা এগুলো নিরসন করা হলে শিক্ষার মান উন্নয়ন ঘটবে।
বঙ্গবন্ধু শিক্ষক ক্যাম্পের আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক হুইপের একান্ত সচিব তোফাজ্জল হোসেন বলেন, হুইপ অনেক আগেই বঙ্গবন্ধু শিক্ষক ক্যাম্প অনুষ্ঠান করার কথা ভেবেছিলেন। করোনার কারণে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করতে দেরি হয়েছে। শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা তারা এতো সুন্দরভাবে আয়োজনটি সফল করার জন্য।