মাসুুদ রানা জয়, পার্বত্যচট্টগ্রাম ব্যুরো :
পাহাড়-অরণ্য উপত্যকার জনপদ খাগড়াছড়ি। চেঙ্গী ও মাইনী অববাহিকায় গড়ে উঠা এই জনপদে কৃষি অর্থনীতির পরিধি বাড়ছে। সমতল ভূমির পাশাপাশি মাঝারি উচ্চতার পাহাড়ে চাষাবাদে বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবন। খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ বলছে, প্রায় ৭৫ হাজার পরিবার কৃষির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। কৃষি অর্থনীতিতে বছরের লেনদেন প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। বিশেষ করে আম, লিচু, হলুদসহ মসলা জাতীয় ফসল ও ধান উৎপাদনে ঈর্ষণীয় সাফল্য এসেছে।
খাগড়াছড়িতে প্রতিবছর খাস অনাবাদী জমি কৃষি চাষের আওতায় আসছে। বিশেষত যেসব পাহাড় বছরের পর বছর অনাবাদী থাকত তা এখন আবাদের আওতায় আসছে। পাহাড়ি অঞ্চলে শিল্পাঞ্চল গড়ে না উঠায় কৃষির প্রতি ঝোঁক বাড়ছে। দুর্গম অঞ্চলের মানুষও এখন পরিকল্পিত ও বাণিজ্যিক কৃষি প্রতি আগ্রহী হচ্ছে। ফলে কৃষিতেই মানুষের সক্ষমতা আসছে। খাগড়াছড়ির ৬৯ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে এখন চাষাবাদ হচ্ছে। এর মধ্যে নিট ফসলি জমির পরিমাণ ৪৪ হাজার ৬শ হেক্টর। প্রায় ৮৪ হাজার কৃষক কৃষির সাথে জড়িত রয়েছে। পাহাড়ের অম্লীয় ভাবাপন্ন মাটি ও টিলা ভূমিতে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পাওয়ায় ফলদ বাগানের সম্প্রসারণ হয়েছে বেশি।
ফল চাষে সমৃদ্ধি :
জেলায় আম, লিচু, ড্রাগন, কলা, কাঁঠাল, আনারসসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফলের চাষ বেড়েছে। ছোট বড় আম বাগানের সংখ্যা প্রায় ৭ শতাধিক। এক সময়ের অনাবাদী পাহাড়েও এখন আম চাষ হচ্ছে। আম চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে অনেকেই। বলা হচ্ছে আম উৎপাদনের নতুন রাজধানী এখন খাগড়াছড়ি। চলতি মৌসুমে ৩ হাজার ২শ ৪৪ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২৯ হাজার ১শ ৯৬ মেট্রিক টন। প্রতি টন আমের বাজার মূল্য প্রায় ৪০ হাজার টাকা হিসেবে মৌসুমে লেনদেন ১শ ১৬ কোটি ৭৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা। লিচু বাগানের সংখ্যা প্রায় ৫শ। বছরে লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১০ হাজার ৫শ ১৫ মে. টন, কলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৮৭ হাজার ৮শ ৭৫ মে. টন, আনারস উৎপাদন হয় প্রায় ২৫ হাজার ১শ ১৬ মে. টন, কাঁঠাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৭৮ হাজার ১শ ৫৬ মে. টন, মাল্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১৮শ ৯ মে. টন। বছরে ৫২ মে. টন ড্রাগন উৎপাদিত হয় যার বাজার মূল্য এক কোটি ৫৬ লাখ টাকা। প্রতিবছরই ড্রাগন চাষ সম্প্রসারণ হচ্ছে। এছাড়া কমলা, লেবু, জাম্বুরা, আমলকি, তেঁতুল সহ বিভিন্ন ফল উৎপাদন হয়। কৃষি বিভাগ বলছে, বছরে আমসহ ফলদ অর্থনীতিতে লেনদেনের পরিমাণ প্রায় ৪শ কোটি টাকা। এর সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত প্রায় ২০ হাজার কৃষক ও বাগান উদ্যোক্তা।
সমতল ও জুমে বাড়ছে ধানের আবাদ : পাহাড়ের সমতল ও উঁচু ভূমিতে (জুমচাষ) ধান চাষ হয়। ধান জুমের প্রধান শস্য। প্রতিবছর খাগড়াছড়িতে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে জুম চাষ হয়। জুমিয়ারা মাউমসিং, চামা, চুলুরিক, নাইংচারেক, কবরক, লোবাবিনি, হরিণ বিনিসহ প্রায় ২৫ জাতে স্থানীয় ধানের আবাদ করে। এছাড়া নারিকা, বিআর ১, বি আর ২৬, ব্রি ধান ২৭ সহ কয়েকটি আধুনিক জাতের ধান চাষাবাদ করে। জুমে প্রতি হেক্টরে উৎপাদন ১.২ মে. টন। জুমের উপর পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ নির্ভরশীল। খাদ্য যোগান বাড়াতে জুম চাষের জমির ব্যবহার বাড়ছে। জেলায় আমন মৌসুমে ২৬ হাজার ৩শ ৫৬ হেক্টর জমিতে উফশী জাতের আবাদ হয়। আমন মৌসুমে চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৭৭ হাজার ৬শ ২১২১ মে. টন। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩শ ১০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এছাড়া বোরো মৌসুমে ২১ হাজার ৭শ ১২ মে. টন ধান উৎপাদন হয়।
বাড়ছে মসলা জাতীয় ফসলের চাষ : জুম চাষিদের একটি অংশ ধানের পাশাপাশি হলুদ ও আদা উৎপাদন করে। খাগড়াছড়ির উৎপাদিত হলুদের কদর সারাদেশ জুড়ে। অনুকূল আবহাওয়া ও পাহাড়ি মাটি হলুদ চাষের উপযোগী হওয়ায় প্রতি বছর ব্যাপক পরিমাণ হলুদ উৎপাদিত হয়। পাহাড়ি টিলা ভূমি ছাড়াও পাহাড়ের সমতল অংশে প্রতি বছর হলুদ চাষ করে চাষিরা। ফলন ও জাত ভালো হওয়ায় কমলা সুন্দরী ও বিন্নি জাতের হলুদ উৎপাদন করছে কৃষকরা। উৎপাদিত হলুদ চাষিদের কাছ থেকে পাইকাররা কিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করে। চলতি মৌসুমে জেলায় ৪ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে হলুদ চাষ হয়েছে। বছরে ১৬ হাজার ৫শ মেট্রিক টন শুকনা হলুদ উৎপাদিত হয়। পাহাড়ের বাজরে প্রতি টন হলুদ বিক্রি হয় ১ লাখ টাকায়। সেই হিসেবে এর বাজার মূল্য প্রায় ১শ ৬৫ কোটি টাকা। এছাড়া মসলা জাতীয় ফসল আদাও পাহাড়ে চাষাবাদ হচ্ছে। বছরে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে আদা চাষ হয়। মৌসুমে প্রায় ৪০ হাজার ১শ মে. টন আদা উৎপাদিত হয়।
জুমের উৎপাদন বাড়াতে জুম চাষকে কৃষি ঋণের আওতায় আনার দাবি দীর্ঘদিনের। খাগড়াছড়ি জেলা ফলদ বাগান মালিক সমিতির সাবেক সহ-
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy