ইব্রাহিম হোসেন,খাগড়াছড়িঃ
ভোরে খাগড়াছড়ির চেঙ্গী, ফেনী ও মাইনী নদীতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর প্রাণের উৎসব বৈসাবি ।এবার উৎসবের প্রধানতম প্রার্থনা ছিল করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তিলাভ করা। এছাড়া পুরোনো বছরের দুঃখ গ্লানি ভুলে নতুন বছরে ভালো কিছু প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন পাহাড়িরা।
করোনার মহামারির কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পাহাড়ের পাড়া-মহল্লায় উৎসবের আমেজ নেই। নেই ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার আয়োজনও। গত বছরও একই কারণে কোন উৎসব হয়নি।
পাহাড়ি সম্প্রদায়ের তরুন-তরুনী, কিশোরী-ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা হল্লা করে ফুল তুলে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে নদী-খালে ভাসিয়ে পুরাতন বছরের গ্লানি মুছে নতুন বছরের শুভ কামনায় নিজেদের পবিত্রতা কামনা করে। এছাড়া ফুল দিয়ে ঘরের প্রতিটি দরজার মাঝখানে মালা গেঁথে সাজানো হয়।
ত্রিপুরা ও চাকমা সম্প্রদায় সোমবার (১২ এপ্রিল) ফুল বিজু পালন করছে। আগামীকাল মঙ্গলবার চাকমা জনগোষ্ঠীন মূল বিঝু। ঐদিন ঘরে ঘরে চলবে অতিথি আপ্যায়ন। আর পরের দিন পহেলা বৈশাখ বা গজ্জাপয্যা।
ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের হারিবৈসু, বিযুমা, বিচিকাতাল। ফুল বিজু, মূলবিজু ও বিচিকাতাল নামে নিজস্ব বৈশিষ্টতায় এ উৎসবে আনন্দের আমেজ ছড়ায়। ত্রিপুরা ভাষায় এ উৎসবকে বৈসু ও চাকমা ভাষায় বিঝু বলা হয়। তবে এবার ভিন্ন আমেজে বৈসাবি উৎসব পালিত হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে চললেও গত বছরের মতো এবছরও করোনার থাবায় ধূসর হয়ে গেছে পাহাড়ের এ প্রাণের উৎসব।
এ বছর মারমা সম্প্রদায় সাংগ্রাইং উৎসবে ঐতিহ্যবাহী জলকেলি বা পানি খেলা ও বর্ষ বরণের র্যালি হচ্ছে না। তেমনী হচ্ছে না ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী গড়িয়া নৃত্য। তবে ঘরে ঘরে সীমিত আকারে অতিথি আপ্যায়নের ব্যবস্থা থাকবে।
খাগড়াছড়িসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত তিন সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের সম্মিলিত উদ্যোগে ‘বৈসাবি’ নামে এ উসব পালন করে আসছে। যা সময়ের ব্যবধানে নিজ নিজ সম্প্রদায়ের লোকদের কাছে ‘বৈসাবি’ শব্দটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমা সম্প্রদায় তাদের নিজস্ব নামে ‘ত্রিপুরা ভাষায় বৈসু, মারমা ভাষায় সাংগ্রাই এবং চাকমা ভাষায় বিজু’ নামে এ উৎসব পালন হয়ে থাকে। এ তিন সম্প্রদায়ের নিজস্ব ভাষার নামের প্রথম অক্ষর নিয়ে ‘বৈসাবি’ নামকরণ করা হয়। কিন্তু করোনায় খাগড়াছড়িতে এবার বৈসাবি উৎসবে রং নেই।
চাকমা, ত্রিপুরা ও মারমা সম্প্রদায়ের পাশাপাশি তঞ্চঙ্গ্যা, বম, খিয়াং, লুসাই, পাংখোয়া, ম্রো, খুমি, আসাম, চাক ও রাখাইনসহ ১৩ ক্ষুদ্র নৃ-জনগোষ্ঠী তাদের ভাষা-সংস্কুতি ও অবস্থানকে বৈচিত্রময় করে করে তুলতে প্রতি বছর চৈত্রের শেষ দিন থেকে ‘বৈসাবি’ উৎসব পালন করে থাকে।
তবে এবার কারো মনে রং নেই। জেলা পরিষদের বর্ণাঢ্য র্যালি ও জেলা প্রশাসনের মঙ্গল শোভাযাত্রাও এবার হচ্ছে না।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy