জিয়াউল ইসলাম বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান খুলনাঃ
খুলনা জেলার তেরখাদা উপজেলার ছাগলাদহ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে কারাগারে থেকেও বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আনারস প্রতীকের এসএম দীন ইসলাম। তিনি জোড়া হত্যা মামলায় দীর্ঘদিন ধরে খুলনা জেলা কারাগারে রয়েছেন।
রোববার (২৮ নভেম্বর) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবিদা সুলতানা তাকে বেসরকারী ভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন । তিনি ৬০০১ভোট পেয়েছেন, তার নিকটতম প্রতিনদন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী পেয়েছেন ৩৫০০ ভোট।
বেসরকারি ফলাফলে জানা গেছে, ১নং আজগড়া ইউনিয়নে আ’লীগের সভাপতি নৌকা প্রতীক নিয়ে কৃষ্ণ মেনন রায়, ২নং বারাসাত ইউনিয়নে উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক কেএম আলমগীর হোসেন, ৩নং ছাগলাদহ ইউনিয়নে আ’লীগের সভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী (কারাবন্দী) এসএম দ্বীন ইসলাম, ৪নং সাচিয়াদহ ইউনিয়নে উপজেলা আ’লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক বুলবুল আহমেদ, ৫নং তেরখাদা সদর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে উপজেলা আ’লীগের সভাপতি এফএম অহিদুজ্জামান এবং ৬নং মধুপুর ইউনিয়নে উপজেলা আ’লীগের শেখ মহসিন বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন ।
তেরখাদা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে রোববার (২৮ নভেম্বর) তৃতীয়ধাপে ভোট গ্রহণ হয়েছে । এগুলো হল তেরখাদা উপজেলার মধুপুর, আজগড়া, সাচিয়াদাহ, ছাগলাদাহ, তেরখাদা সদর ও বারাসাত ইউনিয়ন এবং রূপসা উপজেলার ঘাটভোগ ইউনিয়ন। ছাগলাদাহ ইউনিয়নের চারজন চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন, তারা হলেন আ’লীগের প্রার্থী আঃ শুকুর শেখ (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম দীন ইসলাম (আনারস), মনজুরুল আলম (মোটর সাইকেল) ও শেখ কামরুজ্জামান অলিচ (ঘোড়া)।
২০১৯ সালের ৭ আগস্ট রাত সাড়ে ৩টার দিকে খুলনার তেরখাদা উপজেলার ছাগলাদাহ ইউনিয়নের পহরডাঙ্গা গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে নাঈম শেখ নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় গুরুতর আহত হন নাঈমের বাবা হিরু শেখ (৫৫)। পরে তিনিও চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
এ ঘটনায় পরদিন ৮ আগস্ট নিহতের মা মাফুজা বেগম বাদী হয়ে ১৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০ থেকে ১২ জনের বিরুদ্ধে তেরখাদা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই বছর ২০ আগস্ট নাঈম হত্যায় মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থ জোগানের অভিযোগে ছাগলাদাহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম দ্বীন ইসলামকে গ্রেফতার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
তাকে গ্রেফতারের পর ওই ইউনিয়নের মানুষ পক্ষে-বিপক্ষে আন্দোলন শুরু করে। এক পর্যায়ে ২০২১ সালের ১১ জানুয়ারি মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. আবু জাফর রিপন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাকে বহিস্কার করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, তেরখাদা উপজেলার ছাগলাদহ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এসএম দ্বীন ইসলাম জোড়া হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেলহাজতে রয়েছেন। ফলে জেলা প্রশাসক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছেন। প্রজ্ঞাপনে আরও উল্লেখ করা হয়, চেয়ারম্যান এসএম দ্বীন ইসলাম জেলহাজতে থাকায় জনস্বার্থে তার দ্বারা ইউনিয়ন পরিষদে ক্ষমতা প্রয়োগ প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমীচীন নয় বলে সরকার মনে করে। তার অপরাধমূলক কার্যক্রম ইউপিসহ জনস্বার্থের পরিপন্থি বিবেচনায় স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯-এর ধারা ৩(১) অনুযায়ী তার পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। কিছুদিন পর চেয়ারম্যান পদ আবার ফিরে পান।