গভীর রাতে চা বাগানে শ্রমিক
ফারহানা বি হেনা নিজস্ব প্রতিবেদক: | ১৫ জুন ২০২১ | ৪:২১ অপরাহ্ণ
গভীর রাতে চা বাগানে শ্রমিক
FacebookTwitterShare
ঘড়ির কাঁটায় রাত ২টা বেজে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরব হয়ে উঠে পঞ্চগড়ে চা বাগানগুলো। বাগান জুড়ে চলছে আলোর খেলা। রাতের আঁধারের মাঝে ছোট ছোট বাতি নড়াচড়া করছে। দূর থেকে হঠাৎ কেউ দেখলে ভূত পেতনি ভেবে ভয় পেয়ে যেতে পারেন। কল্পনায় যাদের ভূত পেতনি ভাবছেন এরা মূলত পঞ্চগড়ের রাতের চা শ্রমিক
Surjodoy.com
মাথায় টর্চ লাইট বেঁধে চা পাতা তোলার কাজ করছেন তারা। এক সময়ে দিনের বেলাতে সূর্যের কড়া তাপ সয়েই তারা চা পাতা তোলার কষ্টসাধ কাজ করেছেন। এতে যেমন ভোগান্তি পোহাতে হতো তাদের তেমনি শুকিয়ে যেতো পাতা। কারখানা মালিকরাও নিতে চাইতেন না শুকনো পাচাইপাতা
The Daily surjodoy
গত দু’বছর ধরে শ্রমিকরা মধ্যরাত থেকে পাতা তোলার কাজ শুরু করেন। দিন দিন বাড়তে থাকে রাতের শ্রমিকদের সংখ্যা। প্রতিটি দলে শ্রমিক থাকেন ১০ থেকে ১৫ জন। প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতা তোলার বিনিময়ে বাগান মালিকরা শ্রমিকদের মজুরি দেন ৩ টাকা। একজন রাতের শ্রমিক প্রতিদিন পাতা তুলতে পারেন ২০০ থেকে ২৫০ কেজি। সেই হিসেবে তাদের দৈনিক আয় হয় ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত।
The Daily surjodoy
শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাত ৯ টা থেকে ১০ টার মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েন তারা। রাত ২ টার সঙ্গে সঙ্গে উঠে পড়েন। তারপর হাতে চা পাতা কাটার চাকু আর মাথায় টর্চ লাইট বা মোবাইলের লাইট বেঁধে নেমে পড়েন চা বাগানে। রাতের নীরব শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশে চলতে থাকে চা পাতা তোলার কাজ। সকাল ১০ টার মধ্যেই পাতা তুলে তা কারখানায় পাঠানোর পর বাড়ি ফেরেন তারা। দিনের বেলায় করেন অন্য কাজ।
The Daily surjodoy
এদিকে রাতে চা পাতা তোলার কাজ করে দিনের বেলা পরিবার কিংবা অন্য কাজ করতে পারেন এই শ্রমিকরা। এতে রোদের তাপ থেকে যেমন তারা রক্ষা পাচ্ছেন তেমনি কারখানায় সতেজ পাতা সরবরাহ করতে পারছেন তারা। দ্বৈত আয়ে সুন্দরভাবে চলছে তাদের সংসার। অর্থকষ্টে থাকা এই শ্রমিকদের এখন স্বচ্ছলতা এসেছে।
The Daily surjodoy
শ্রমিকরা জানান, শুরুতে রাতে চা পাতা তুলতে পোকা মাকড়ের ভয় হলেও দলবেঁধে পাতা তোলায় কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির শিকার হতে হয় নি। এছাড়া রাতে পাতা তোলায় দুর্ভোগ কমে আসার পাশাপাশি আয় বেড়েছে দ্বিগুণ।
The Daily surjodoy
পঞ্চগড় সদর উপজেলার রাতের চা শ্রমিক বাবুল হোসেন বলেন, দুই বছর ধরে রাতে চা পাতা তোলার কাজ করছি। রাত ২ টা থেকে সকাল ১০ টা পর্যন্ত কাজ করি। এতে জনপ্রতি ৬০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা মজুরি পাই। আবার দিনের বেলায় অন্য কাজ করতে পারি। এই দুইভাবে কাজ করে সংসার ভাল চলছে।
চা শ্রমিক রাজু ইসলাম বলেন, রাতে চা পাতা তোলার কাজ করি, আর দিনে কৃষি কাজ করি। সব মিলে যা আয় হয় তা দিয়ে সুন্দরভাবে সংসার চলে যায়।
The Daily surjodoy
ফারুক ইসলাম বলেন, আগে দিনে চা পাতা তোলার কাজ করতাম। কিন্তু প্রচণ্ড রোদের কারণে বেশিক্ষণ তোলা যেতো না। বেশি পাতা তোলতেও পারতাম না। রাতে পরিবেশ শান্ত থাকে, রোদের ভয় নাই তাই রাতে চা পাতা তোলা শুরু করি। মাথায় লাইট বেঁধে কাজ শুরু করি। রাতে দ্রুত ও আরামে কাজ করা যায়।
মহিদুল ইসলাম বলেন, দল বেঁধে রাতে চা পাতা তোলার কাজ করি। প্রতিটি দলে থাকে ১০ থেকে ১৫ জন। চা মৌসুমে প্রতিদিন রাতে মাত্র ৮ ঘণ্টা কাজ করে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা আসে।
The Daily surjodoy
মোমিনুর রহমান বলেন, প্রথম দিকে ভয় ভয় লাগতো। পোকামাকড় ভয় পেতাম। কিন্তু সবাই এক সঙ্গে কাজ করায় ভয় কেটে গেছে। এছাড়া সবার সঙ্গে টর্চ লাইট থাকায় পোকামাকড় থাকলেও চলে যায়। এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে নি।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার অমরখানা এলাকার চা চাষি আবু সায়েদ বলেন, রাতে চা পাতা তোলায় শ্রমিকদের যেমন কষ্ট কম হচ্ছে তেমনি সতেজ পাতা কারখানায় দিতে পারছি।
The Daily surjodoy
বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক অফিসের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন বলেন, পঞ্চগড়ের চা শিল্পে চাষিদের পাশাপাশি ২০ থেকে ২৫ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। তারা আগে অলস সময় কাটাতেন। তাদের কোনো কাজ ছিলো না। এখন চা বাগানে কাজ করে তারা স্বচ্ছলতা পেয়েছে। বিশেষ করে যারা রাতে চা পাতা তোলার কাজ করছেন তারা বেশি লাভবান হচ্ছেন। তারা রাতে চা বাগানে পাতা তোলার কাজ করছেন এবং দিনের বেলায় অন্য কাজ করছেন। এই দ্বৈত্য আয়ে সংসার ভাল চলছে।
Leave a Reply