আব্দুল্লাহ আল মামুন:
গাজীপুরের মাওনায় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ২৭ (সেপ্টেম্বর) যমুনা টেলিভিশনের সাংবাদিক হোসাইন আলী বাবুকে পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়ার ঘটনায় সাংবাদিক মহলসহ পুরো দেশ গভীর উদ্বেগে পড়েছে। স্থানীয়ভাবে ঝুট ব্যবসায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ চলাকালীন বাবু সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সংঘর্ষরত একটি গ্রুপ তার ওপর এ আক্রমণ চালায়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বাবুর পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করা এবং তাকে ভয় দেখিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া। পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়ায় বাবুর জীবন যেমন ঝুঁকির মুখে পড়েছে, তেমনি সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ও মর্যাদা লঙ্ঘিত হয়েছে।
সাংবাদিকদের ওপর এই ধরনের আক্রমণ বা হুমকি একটি স্বাধীন সমাজের জন্য অশুভ সংকেত। সাংবাদিকরা সবসময় জনগণের সামনে সত্য তুলে ধরতে কাজ করেন, আর তাদের ওপর এ ধরনের সহিংসতা সমাজের কিছু শ্রেণির অপতৎপরতা ও অন্যায় কার্যক্রম প্রকাশ্যে আসার আশঙ্কার প্রমাণ বহন করে। বিশেষ করে গাজীপুরের মতো শিল্পাঞ্চলে, যেখানে বস্ত্র ও ঝুট ব্যবসায় বিরোধ প্রায়ই সংঘর্ষের রূপ নেয়, সেখানে সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে ঝুঁকির মুখে পড়েন। বাবুর এই ঘটনার পর, সাংবাদিক সমাজ ও নাগরিক মহল দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন ও হুমকি দিন দিন বেড়ে চলেছে, যা গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। একটি গণতান্ত্রিক দেশে স্বাধীন গণমাধ্যমের গুরুত্ব অপরিসীম। সাংবাদিকরা জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ ও প্রকাশ করেন, যা রাষ্ট্রের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে। কিন্তু সাংবাদিকদের ওপর এমন আক্রমণ রাষ্ট্রের আইন ও শৃঙ্খলা ব্যবস্থা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
এই ঘটনাটি কেবল একজন সাংবাদিকের ওপর হামলা নয়, এটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত। হোসাইন আলী বাবুর প্রতি যে হুমকি দেওয়া হয়েছে, তা শুধু তার জীবনের জন্য হুমকি নয়, বরং এটি স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে বাধা। সাংবাদিক সমাজ, নাগরিক সমাজ এবং গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট সকলেই এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং আইনের আওতায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা একটি দেশের উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার অন্যতম স্তম্ভ। সাংবাদিকদের নির্ভয়ে কাজ করার সুযোগ না থাকলে রাষ্ট্রের স্বচ্ছতা ও জনগণের আস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই রাষ্ট্র ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর উচিত সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং তাদের ওপর হামলা বা হুমকির ঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। একমাত্র এর মাধ্যমেই স্বাধীন সাংবাদিকতা সুরক্ষিত থাকবে এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা শক্তিশালী হবে।