নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনার প্রভাবে বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ পণ্যের ক্রয়াদেশ স্থগিত ও বাতিল করেছেন বৈশ্বিক ক্রেতারা। এসব বাতিল করা পণ্য নেওয়া ও দাম পরিশোধে ওই সব ক্রেতাকে নিয়ম মানতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সহযোগিতা চেয়েছেন বাংলাদেশের শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান।
গতকাল বৃহস্পতিবার করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ইস্যুতে আয়োজিত আইএলওর বৈশ্বিক সম্মেলনে বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান। বুধবার শুরু হওয়া দুই দিনের ওই সম্মেলন অনলাইনে আয়োজন করা হয়। প্রথম দিন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য দেন। আর গতকাল শেষ দিন বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যায় একটি সেশনে বক্তব্য দেন বেগম মন্নুজান সুফিয়ান।
প্রতিমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে আরো বলেন, বিদেশ থেকে ফেরত আসা শ্রমিকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে আইএলওকে এগিয়ে আসতে হবে। একই সঙ্গে এই করোনা মহামারিকালে বাংলাদেশের মতো অপেক্ষাকৃত দুর্বল অর্থনীতির দেশগুলোর জন্য বাজার সুবিধা সহজ করারও তাগিদ দেন তিনি।
দুঃখজনকভাবে ক্রয়াদেশ বাতিল হওয়ায় গত অর্থবছরে রপ্তানি ব্যাপকভাবে কমে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক কারখানা উত্পাদন বন্ধ করা কিংবা কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই বিদেশে কাজ করা বাংলাদেশিরাও কাজ হারিয়ে দেশে ফিরছেন।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকায় গত মার্চ থেকেই দেশের রপ্তানির ওপর খড়্গ নেমে আসে। একের পর এক বাতিল হতে থাকে রপ্তানি আদেশ। যেসব পণ্য তৈরি হয়ে গেছে, কিংবা জাহাজীকরণের অপেক্ষায় বন্দর পর্যন্ত পৌঁছে গেছে, ওই সব পণ্যও নেননি ক্রেতারা। বাংলাদেশের রপ্তানির ৮৪ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এ খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর হিসাব অনুযায়ী প্রায় সোয়া ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ রপ্তানি আদেশ বাতিল বা স্থগিত হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় সাড়ে ২৭ হাজার কোটি টাকা। অবশ্য উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, স্থগিত হওয়া ক্রয়াদেশের মধ্যে পরবর্তীতে কিছু ফেরত এসেছে। জানা গেছে, কোনো কোনো ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এই সুযোগে দেউলিয়ার আবেদন করেছে, যাদের কাছে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মোটা অঙ্কের টাকা পাওনা।
সব মিলিয়ে এ পরিস্থিতিতে বেকায়দায় পড়েন রপ্তানিকারকরা। এরই মধ্যে শুধু গার্মেন্ট খাতেই ২৫ হাজারের উপরে শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে বলে শ্রম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) তথ্য বলছে। তবে শ্রমিক প্রতিনিধিরা বলছেন, এরই মধ্যে ছাঁটাই হয়েছে ৭০ হাজারের উপরে। শুধু তাই নয়, সদ্যঃসমাপ্ত অর্থবছরে রপ্তানি কমে গেছে প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ।
এদিকে অপেক্ষাকৃত ছোট ও মাঝারি আকারের কিছু কারখানা বন্ধ হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে শ্রমিক ছাঁটাই ছাড়া আর কোনো পথ থাকবে না উদ্যোক্তাদের। যদিও রপ্তানিমুখী শিল্পের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধের লক্ষ্যে সরকার এরই মধ্যে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছে। আরো আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার ঘোষণাও পাওয়া গেছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসসহ প্রায় ৮০টি দেশের প্রতিনিধিরা অনলাইনে অংশ নেন।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy