জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) মান রক্ষা ও স্বকীয়তা ফিরিয়ে আনতে গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে স্বতন্ত্র ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতির দাবিতে মানবন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এসময় গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ৫ দিনের আল্টিমেটাম দেয়া হয়। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নিকট স্বারকলিপিও প্রদান করা হয়।
বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এই মানবন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে।
মানবন্ধনে বক্তারা বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের পর স্বল্প সময়ের মধ্যে শিক্ষা, গবেষণাসহ সকল ক্ষেত্রেই অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। যা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ঈর্ষণীয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ই সর্বপ্রথম পুরোপুরি লিখিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম চালু করে। এতে করে মানসম্মত ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায়। গুচ্ছ পদ্ধতিতে যাওয়ার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টি তার স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলেছে। ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি পুরোপুরি পরিবর্তিত হয়ে গেছে। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
বক্তারা আরও বলেন, গুচ্ছ পদ্ধতির ফলে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আমাদের নির্ভর করতে হচ্ছে। গণ বিজ্ঞপ্তি দিয়েও ফাঁকা আসন পুরণ হচ্ছেনা। এতে ভর্তি প্রক্রিয়ার সময় আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে। ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় যখন একই সেশনে একটি সেমিস্টার শেষ করে ফেলছে তখনও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাসই শুরু করতে পারছে না। এতে সেশনজটের সৃষ্টি হচ্ছে। যা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ণ করছে।
মানবন্ধনে বক্তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে পাঁচ দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশসনকে গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে নিজস্ব পদ্ধতিতে স্বতন্ত্র ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা না হলে আমরা পরবর্তীতে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবো।
মানবন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, ‘গুচ্ছ পদ্ধতির ফলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় তার স্বকীয়তা হারিয়েছে। আমরা শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য নিচের সারির বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে এখন তাকিয়ে থাকি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার শেষ হয়ে যায়, আর এখানে গণ বিজ্ঞপ্তি দিয়েও শিক্ষার্থী পাওয়া যায়না। গুচ্ছ থেকে বের হয়ে আমাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। ২৭ ফেব্রুয়ারি মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে গুচ্ছ থেকে বের হয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা না হলে আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবো।’
মানবন্ধন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নিকট স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কথায়তো কিছু হবে না, এটা একাডেমিক কাউন্সিলের বিষয়। সবকিছু সিদ্ধান্ত হবে একাডেমিক কাউন্সিলে।’
এদিকে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বের হয়ে আসবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বুধবার বিশেষ একাডেমিক সভা ডেকেছিলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে হটাৎই অনিবার্য কারণ দেখিয়ে তা পিছিয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি করা হয়েছে।
এদিকে গুচ্ছ পদ্ধতিতে থাকা নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে দেখা যায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে দীর্ঘসময়, সেশনজটে শঙ্কা, স্বায়ত্তশাসনে বাঁধা, মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভর্তি না হওয়ার অভিযোগ করছেন তারা। গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভোগান্তি না কমে উল্টো বেড়েছে বলে এ পদ্ধতির উপর আস্থা হারিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে নিজস্ব পরীক্ষা পদ্ধতিতে ফেরার দাবি জানিয়ে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা বলছেন, গুচ্ছ পদ্ধতি একটি মহৎ উদ্দেশ্যে শুরু হলেও এর খারাপ দিকটাই বেশি ফুটে উঠেছে। এতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ক্ষুন্ন হচ্ছে এবং তূলনামূলক কম মেধাবী শিক্ষার্থীরাই এখানে ভর্তি হচ্ছে। এছাড়াও একটি দেশে দুই ধরনের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ঢাবি, জাবি নিজস্ব পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিয়ে ক্লাস শুরু করতে পেরেছে। কিন্তু ঢাবি, জাবির মতো জবি ঢাকার মধ্যে থেকেও এক সেমিস্টার পিছনে পড়ে গেছে। এতে শিক্ষার্থীদের জীবন থেকেও ঝরে যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ সময়।
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম বলেন, ‘গুচ্ছ পদ্ধতিতে যাওয়ার ফলে আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মানের শিক্ষার্থীদের পাচ্ছিনা। দিনে দিনে অপেক্ষাকৃত দুর্বল মেধার শিক্ষার্থীরা ভর্তি হচ্ছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ক্ষুন্ন হচ্ছে। আমাদের নিজস্বতা বলতে কিছুই থাকছেনা।’
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ.কে.এম. লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমরা দশটি শর্ত দিয়ে বলেছিলাম এগুলো পূরণ হলে গুচ্ছে থাকা যাবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় সেই দশটি শর্তের একটিও পূরণ হয়নি। তাই আমরা চাইনা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতি ভর্তি প্রক্রিয়ায় থাকুক।’
তিনি আরও বলেন, ‘গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় থেকে জবি ভালো শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। জবি বর্তমান সব ক্ষেত্রেই ঢাবির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। কিন্তু শিক্ষার্থী ভর্তির সময়ে আমাদের একবারে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে ভর্তি নিতে হচ্ছে।’