গড়ীবের ঘড়ে "করোনা"গ্রাম বাংলার প্রেক্ষাপট!
শেখর চন্দ্র সরকার বগুড়া জেলা প্রতিনিধিঃ
বিশ্বব্যাপী যখন করোনায় আক্রান্ত লাখো মানুষ, মহামারী বললেও ভুল হবে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ করোনার কারণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য বর্তমানে প্রতিষেধক হিসেবে অনেক দেশের ওষুধ কোম্পানি টিকা বের করেছেন। প্রত্যেকটি দেশের প্রতিটি জনগণ এই পরিসেবা পাওয়ার যোগ্য এবং পাবেন। আর এই টিকা শতভাগ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সরকারি আদেশ মেনে চালার জন্য বারবার প্রশাসনিক তাগিদ দেশের জনগণের ওপর নেমে এসেছে।
আমাদের দেশে চলছে লাগাতার লকডাউন।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সরকার জনগণের ভালোর জন্য করোনা মোকাবেলার দ্বিতীয় ঢেউ হিসেবে পালন করছেন প্রশাসন কে রাস্তায় নামিয়ে। তবুও
যেন কোন লাভহচ্ছেনা সরকার কয়েক লাখ লোকের করোনার টিকার চাহিদা মেটাতে পারলেও এখনো ১৬ কোটি মানুষের টিকা নিশ্চিত করতে পারেনি! তবে সরকার আগামীতে ১৬ কোটি মানুষের এই স্বাস্থসেবা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টায় আছেন বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন।
তারপরও যেন করোনা বিস্তার লাভ করতে না পারে সেই প্রচেষ্টাই সরকার ও প্রশাসন প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছেন।তবে এক্ষেত্রে জনগণ যেন পুলিশ আর প্রশাসনের সঙ্গে লুকোচুরি খেলছেন। নিজের নিজের ক্ষতি নিজেই ডেকে আনছেন বাংলার জনগণ।
ঈদ পরবর্তীতেও করোনা বেড়েই চলেছে। এবার শহরের চাইতে গ্রামাঞ্চলের করোনার আক্রান্তের হার অনেক বেশি। বিশেষ করে নওগাঁ রাজশাহী নাটোর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জয়পুরহাট দিনাজপুর ও বগুড়া ভারতের পার্শ্ববর্তী হওয়ার কারণেই জেলাগুলোতে করোনার প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দিয়েছে।
এদিকে বগুড়ার জেলার শিবগঞ্জের উপজেলার সাদুল্লাপুর গ্রামের সুমন সরকার (৪০)আমতলী বন্দর থেকে ঔষধ কিনতে দেখে তাকে জিজ্ঞেস করি,আপনি কিসের ওষুধ কিনলেন? প্রথমে থেমে গেলেও পরে তিনি বলেন,আমার বাড়িতে প্রথম আমার জ্বর হয়, পরবর্তীতে আমার সাত বছরের মেয়ের জ্বর,সেখানেই শেষ না তারপরে আমার বাড়িতে থাকা আমার শালা এবং আমার বউ সহ মোট চারজন সবারই জ্বরে আক্রান্ত হই।
তিনি আরো বলেন, এবারের মতো জ্বর কোন বছরই হয়নি। এই চল্লিশ বছরের জীবনে আমার কখনো এমন জ্বর হয়নি।
জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল, এজিথ্রোমাইসিন
সাথে সর্দি কাশির জন্য রুপাটাডিন, টোফেন, গ্যাসের ওষুধ নিয়মিত ৭ থেকে ১০ দিন খেয়েছি এবং পরিবারের সবাইকে ৭ থেকে ১০ দিন বয়স অনুযায়ী দিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, আমার বুঝতে বাকি রইল না যে এটা স্বাভাবিক জ্বর না। আমি পরিক্ষা না করেই হলফ করে বলতে পারি করোনা কারণ জ্বর আসে ১০২ ডিগ্রি ১০৩ ডিগ্রি তাও থামে না! জ্বর ওষুধ খেলে একটু থামে আবার যেকার সেই। শুধুতাই নয় যখন সর্দি লাগলো সর্দি লাগার পর থেকে আর নাকে কোন গন্ধ পাচ্ছি না ইতিপূর্বে অনেক জ্বর হয়েছে এমন কোন ঘটনা ঘটেনি, এখন পর্যন্ত নাকে কোন গন্ধ নেই মুখে কোন স্বাদ নেই। খাবারের কোন রুচি নেই শুধু বেঁচে থাকার তাগিদে জোর করে আমরা কিছু খাদ্য খেয়ে বেঁচে আছি। তার মধ্যে রয়েছে ডিম পুষ্টিকর কিছু ফলমূল, লেবু, মাল্টা, আনারস, শাকসবজি মুরগি মাংস।
প্রতিদিন সকালে দুপুরে এবং রাত্রে প্রতি জন একটি করে লেবু এবং এক গ্লাস গরম পানির মিশ্রণ করে গল গল করা এবং সেই পানি পান করা। এটা ছিল প্রতিদিনের রুটিন এর অন্যতম। তারপরও মাঝে মধ্যে লং, আদা, লেবু দিয়ে লাল চা করে পান করা। যখনি বুকে সমস্যা দেখা দিয়েছে তখনি আরও দুইটি ওষুধ যোগ করেছিলাম মন্টিলুকাস্ট ব্রডিল লিভো।
তিনি আরো বলেন, আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আমি সরকারের কাছ থেকে কোন অনুদান পাচ্ছিনা, করোনাকালীন কোনো সুযোগ-সুবিধা পাই নাই। তবে কি করে আমি করোনা পরীক্ষা করব? আবার ভয় লাগে করোনা পরীক্ষার পরে যদি পজেটিভ হয় তবে আমাদের বাড়ি লকডাউন করে দেবে। বাড়ি থেকে বের হওয়া যাবে না তাহলে কি করে খাব?
সেজন্য বুকে সাহস নিয়ে করোনাকে মোকাবালা করে চলেছি নিজে নিজেই নিজের আত্মবিশ্বাস এবং প্রাকৃতিক কিছু নির্যাস এবং সাধারন মেডিসিন (ঔষধ) দিয়ে।
কি বলবো দুঃখের কথা আমার মত মধ্যবিত্ত গরিব অনেক মানুষ আছে যারা চেয়ারম্যানের বা মেম্বারের কাছে যাচ্ছেন না। কোন দলের নেতা কর্মীর কাছে যেতে পারছেন না বা কাউকে ফোন দিয়ে কিছু নিতে পারছে না।
সরকারি এতো প্রণোদনার বাজেট থাকলেও তা থেকে উপেক্ষিত আমার মত অনেক সাধারন মানুষ!!
সরকার করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় যে প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন এবং গরিবের উদ্দেশ্যে যে টাকা, চাল এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাগুলো দিয়ে যাচ্ছেন তা জনগণের দৌড় গোড়ায় পৌঁছেছে কি না তা আমার জানা নেই। আমার মত গরিব বা মধ্যবিত্ত মানুষ পারছিনা লকডাউন কে উপেক্ষা করে রাস্তায় বের হতে! পারছিনা ঠিকমতো সংসারের চালাতে।
এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি দুলা মেম্বারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি আমার সাধ্যমত করোনাকালীন সময়ে সরকার থেকে যা পেয়েছি সব কিছু এলাকার গড়ীব-দুখী জনগনের মাঝে উজার করে দিয়েছি। তবে কেউ যদি সরকারি প্রণোদনা বা অনুদান থেকে বঞ্চিত হন তাহলে আমাকে সেটা জানাতে হবে। আমি অবশ্যই তার জন্য প্রয়োজনে আমার ব্যক্তিগত ভাবে সাহায্য করার চেষ্টা করব।