নিজস্ব প্রতিবেদক
স্বামী পরিত্যক্ত মা তানিয়াকে ৪ বছরের শিশু সায়েমসহ বিয়ে করেন বাস হেলপার নয়ন। থাকতেন নগরীর চান্দগাঁও থানার সিএন্ডবি এলাকার একটি কলোনিতে। আর্থিক টানাপোড়নের সংসারে স্বামীকে সাহায্য করতে শিশু সন্তানকে বাসায় রেখে করতেন ভিক্ষাবৃত্তি। কিন্তু এরপরও সুখের হয়নি তাদের সংসার! ভিক্ষা করতে বের হওয়াটাই যেন কাল হলো তানিয়ার। একেবারে হারাতে হলো বুকের নাড়িছেঁড়া ধন ৫ বছর বয়সী শিশু পুত্র সায়েমকে।
যেই শিশু সন্তানের আশ্রয়ের জন্য বাস হেলপার নয়নের সঙ্গে জীবনে দ্বিতীয়বারের মত গাটছড়া বেঁধে ছিলেন সেই শিশু সন্তানকেই সহ্য হয়নি স্বামী নয়নের। তাইতো ৫ বছর বয়সী সেই শিশু সন্তানকে বাসা থেকে নিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে তানিয়ার দ্বিতীয় স্বামী নয়ন। শুধু হত্যা করেই থেমে থাকেনি, হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে সাজিয়েছে নানা ঘটনা। অবশেষে চান্দগাঁও থানা পুলিশ সেই রহস্যভেদ করতে সক্ষম হয়েছে। খুনি নয়ন নিজেই দিয়েছে সৎ সন্তান সায়েমকে খুনের বিস্তারিত বর্ণনা।
চান্দগাঁও থানার ওসি আতাউর রহমান খন্দকার জানান, তানিয়া চার বছরের শিশু সায়েমকে নিয়ে স্বামী পরিত্যক্তা হওয়ার পর বাস হেলপার নয়নকে বিয়ে করেন। এরপরও সন্তানের সুখের আশায় ভিক্ষা করতেন তানিয়া। এরই মাঝে তাদের সংসারে আরেকটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। তার বর্তমান বয়স ৬ মাস। তানিয়ার দ্বিতীয় সন্তান হওয়ার পর থেকেই দিন দিন হিংস্র হয়ে উঠে নয়ন। তানিয়াকে নির্যাতনের পাশাপাশি তার আগের ঘরের সন্তান সায়েমকে নানা কায়দায় নির্যাতন করতো সে। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে ২৫ অক্টোবর ঝগড়াও হয়। এরপর ২৭ অক্টোবর তানিয়া প্রতিদিনের মতো ভিক্ষা করতে বের হলে নয়ন তানিয়ার সন্তান সায়েমকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। পরে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ফেলে যায়। সেখান থেকে দ্রুত সটকে পড়ে আত্মগোপনে চলে যায় বাস হেলপার নয়ন।
পরে পুত্র সায়েমকে অনেক জায়গায় খোঁজাখুজি করে না পেয়ে থানা পুলিশের দ্বারস্থ হন মা তানিয়া। পুলিশও ঘটনার রহস্যভেদে নামে, অন্যদিকে তানিয়াও। গত ৩০ অক্টোবর বাস হেলপার নয়ন বাসায় আসলে তাকে পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে আসে। টানা দু’দিনের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদেও মুখ খুলেনি সৎ পিতা নয়ন। পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে সে একেক সময় একেক রকম তথ্য দিতে থাকে। পরে গত ৩১ অক্টোবর রাতে পুলিশকে জানিয়েছে, বোয়ালখালীর কানুনগোপাড়ায় এক বন্ধুর ২০ হাজার টাকার দেনা শোধ করতে গিয়ে সৎ শিশু পুত্র সায়েমকে বিক্রি করে দেয় সে। রাতেই তাকে নিয়ে বোয়ালখালী পুলিশের সহযোগিতায় সেখানে অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হয় পুলিশ। হদিস মেলেনি নিখোঁজ সায়েমের। পরের দিন ১ অক্টোবর টানা জিজ্ঞাসাবাদে বাস হেলপার নয়ন জানিয়েছে, সে সৎ শিশু পুত্র সায়েমকে হিংসা প্রবণ হয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে চট্টগ্রাম মেডিকেলের সামনে ফেলে চলে যায়।
এদিকে গত ২৭ অক্টোবর দুপুরে অজ্ঞাত পরিচয় শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। এরপর তারা বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে আনজুমানে মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে তার মরদেহ দাফন করে।
এ ঘটনায় শনিবার রাতে তানিয়া বাদী হয়ে একটি অপহরণ মামলা করলেও এখন সেটি হত্যা মামলায় রূপ নিবে বলে জানিয়েছেন চান্দগাঁও থানার ওসি আতাউর রহমান খন্দকার।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy