
টি আহমেদ নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
করোনা লক্ষণ নিয়ে মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছিলেন সাতকানিয়ার নুরুল ইসলাম (৭৫)। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় একদিন পর তাকে স্থানান্তর করা হয় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)।
কিন্তু সেখানে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা খালি না থাকায় বিপাকে পড়েন রোগীর স্বজনরা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে তার অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকে। রাত ১টায় তাকে চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরমধ্যে তার করোনা পরীক্ষার ফলাফল আসে নেগেটিভ।
এরপর তাকে সাধারণ ওয়ার্ডের হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা সম্বলিত বেডে ভর্তি করা হয়। তবে শুক্রবার দুপুরেই মা ও শিশু হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, বৃহস্পতিবার রাতে রোগীর ক্ষতি যা হওয়ার, তা হয়ে গেছে।
অক্সিজেনের মাত্রা ৪০-এ নেমে গিয়েছিল। মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর সেই অক্সিজেনের মাত্রা ৯০ পর্যন্ত উঠলেও রোগী ২৪ ঘণ্টা পর মারা যান।ঘটনাটি সাম্প্রতিক। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো- ঘটনাটি নগরীর এক বছর আগের চিত্র মনে করিয়ে দিচ্ছে।
আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে চট্টগ্রামে প্রথম করোনা শনাক্তের ঘোষণা আসার পরবর্তী চিত্রটা অনেকটা এমনই ছিল। সে সময় ছিল না পর্যাপ্ত আইসিইউ বেড, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা ও পর্যাপ্ত আইসোলেশনের ব্যবস্থা।
এক বছর পার হয়েছে। দ্বিতীয় ঢেউ আসার আগে প্রস্তুতির জন্য তাই যথেষ্ট সময় পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু এখনও নগরীতে নেই পর্যাপ্তসংখ্যক আইসিইউ শয্যা। রয়ে গেছে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের সংকট।
সবমিলিয়ে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে শঙ্কার বিষয় হয়ে থাকছে চট্টগ্রামের করোনা প্রস্তুতি। তাই চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণ যত বাড়ছে, প্রশাসন থেকে শুরু করে দায়িত্বশীল মহলে উদ্বেগ তত বাড়ছে।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়,
চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তদের জন্য শয্যা বরাদ্দ আছে মাত্র ৮০০টির মতো। এরমধ্যে হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল ও রেলওয়ে হাসপাতাল প্রস্তুত রাখার কথা বলা হলেও তা এখনও পুরোদমে চালু হয়নি।
সে হিসেবে নগরীতে শয্যা আছে ৬০০টির বেশি। অন্যদিকে আইসিইউ শয্যা আছে ৫৬টি। কিন্তু শুক্রবার খোঁজ নিয়ে কোনো আইসিইউ শয্যা খালি পাওয়া যায়নি। সাধারণ শয্যার প্রায় অধিকাংশই এখন রোগীতে পূর্ণ।এ বিষয়ে শুক্রবার রাত ৯টায় কথা হয়
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনালের এসএম হুয়ায়ুন কবিরের সঙ্গে। তিনি মহানগর নিউজকে বলেন, চট্টগ্রামে সংক্রমণের হার বাড়ায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য বরাদ্দ ১৮০টি শয্যার মধ্যে ১৬৪ শয্যায় রোগী ভর্তি আছেন।
আইসিইউ বেডগুলোও পরিপূর্ণ। শনিবার (৩ এপ্রিল) চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আব্দুর রব মাসুম বলেন, জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ বেড খালি নেই।
আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে দুই-তিন দিন ধরে আইসিইউতে আসার জন্য অপেক্ষমান রোগী আছেন। বাইরে কোথাও যে শিফট করব, সে অবস্থাও কোথাও নেই। সব জায়গা রোগীতে পরিপূর্ণ।
এভাবে সংক্রমণ বাড়লে পরিস্থিতি কী হবে তা সহজেই অনুমেয়।তবে আশার কথা শুনিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির।
তিনি বলেন, রোগীর চাপ বাড়ার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে রেলওয়ে হাসপাতাল এবং হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল প্রস্তুত আছে। জেনারেল হাসপাতালে আরও আটটি আইসিইউ বেড বাড়ানো যাবে।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, বেসরকারি পর্যায়ে করোনাকালে সবচেয়ে বেশি রোগীর চিকিৎসা দিয়েছে পার্কভিউ হাসপাতাল। ইমপেরিয়াল হাসপাতালেও অনেক রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।
এরমধ্যে পার্কভিউ হাসপাতালের দুই ফ্লোরে আইসোলেশনের পাশাপাশি ১০টি আইসিইউ বেডে করোনা রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই হাসপাতালেও এখন আইসিইউ বেড খালি নেই।
আইসোলেশন ওয়ার্ডে শনিবার ৬৪ জন করোনা রোগী ভর্তি ছিলেন বলে জানান হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এটিএম রেজাউল করিম।
অন্যদিকে ১০টি আইসিইউ বেড ও ৩৫টি জেনারেল বেডের ইমপেরিয়াল হাসপাতালের করোনা ইউনিটও এখন রোগীতে পরিপূর্ণ।
এছাড়া ৪৩টি আইসোলেশন বেডের আল মানাহিল নার্চার জেনারেল হাসপাতালও এখন রোগীতে পূর্ণ জানিয়ে হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত অহীদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন জানান, আমাদের এখানে আইসোলেশন ওয়ার্ডে সিট বাড়ানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।
এদিকে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই বিশেষজ্ঞরা বারবার জোর দিচ্ছেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে জনসাধারণের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
সর্বশেষ ক্রমবর্ধমান করোনা সংক্রমণের কারণে ৫ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য সারাদেশ লকডাউনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ১৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী মৃত্যুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে।
৩ এপ্রিল চট্টগ্রামের দামপাড়ায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের খবর জানায় চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়।
এ জাতীয় আরো খবর..
Leave a Reply