সোমেন সরকার
সাংবাদিক পরিচয়ে প্রতারণাই এদের পেশা।তাদের টার্গেট দূরের কোনো মফস্বল শহর কিংবা গ্রামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ভূঁইফোড় পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে খোঁজে বের করে ‘অনিয়ম’।
এরপর পত্রিকায় খবর চাপিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে দাবি করে মোটা অংকের চাঁদা। পরিকল্পিত চিত্রনাট্যটিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে সঙ্গে রাখা হয় সুন্দরী নারী সদস্যকেও। চলনেবলনে সাধারণ ব্যবসায়ীরা কোনোভাবেই বুঝতে পারেন না যে, এরা ভুয়া।
রফাদফায় কিছু দিয়ে এদের বিদায় করতে পারলেই যেন বাঁচেন!চট্টগ্রাম ফটিকছড়ির দাঁতমারা ইউনিয়নের শান্তিরহাট বাজারে সোমবার (২৬ এপ্রিল) রাতে এমনই এক প্রতারণার চেষ্টাকালে দুই নারীসহ চার ভুয়া সাংবাদিককে আটক করেছে পুলিশ। যারা কিনা এসেছিলেন সদূর ময়মনসিংহ, জামালপুর ও গাজীপুর থেকে।
তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্টো-গ ২৮-৯৮২০), তিনটি ক্যামেরা, ১২টি মোবাইল ফোন, দুটি পাওয়ার ব্যাংক, নগদ টাকাসহ ‘বর্তমানের কথা’ ও ‘রুদ্র বাংলাদেশ’ নামে নামসর্বস্ব দুটি পত্রিকার তিনটি আইডিকার্ড জব্দ করা হয়।আটককৃতদের মধ্যে পারভীন আকতার লিমার (৩২) গ্রামের বাড়ি জামালপুরের মাধারগণ্ডা থানার নয়াপাড়া এলাকায়।
বাবা মৃত রহমত উল্যাহ প্রকাশ তাঁরা মিয়া। গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার নাউরুর এলাকার সুরুজ মাতবরের মেয়ে বিলকিস আকতার রুবিও (২৫) ছিলেন তার সঙ্গে। তবে তাদের নেতৃত্ব দেন ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার ধোপঘাট এলাকার মৃত ওয়াজ উদ্দিন সরকারের ছেলে জয়নাল আবেদিন জয় (৪০)।
তাদের সঙ্গে ফটোসাংবাদিক পরিচয়ে ছিলেন গাজীপুরের পূবাইল থানাধীন ভাধুন এলাকার মিজান সরকারের ছেলে এয়াছিন সরকার প্রকাশ ওরফে হৃদয় (২৬)।
পুলিশ জানায়, দামি প্রাইভেটকারে চড়ে শান্তিরহাট বাজারে আসে এই চারজন। গলায় আইডিকার্ড, হাতে ক্যামেরা নিয়ে জয় ও হৃদয় সেখানকার একটি বেকারীতে প্রবেশ করে। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে তারা বেকারী মালিকের কাছে কাগজপত্র দেখতে চায়। এ সময় তারা গাড়িতে বসা অপর দুই নারী প্রতারককে দেখিয়ে ‘সিনিয়র সাংবাদিক’ বলে পরিচয় দেয়।
একপর্যায়ে তারা অনিয়মের খবর পত্রিকায় প্রকাশ করার হুমকী দিয়ে বেকারীর মালিকের কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে। কিন্তু তাদের কথাবার্তা অসংলগ্ন ও আচার-আচারণ সন্দেহজনক মনে হলে স্থানীয় জনতা পুলিশকে খবর দেয়। পরে দাঁতমারা তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ সদস্যরা এসে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এই চারজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যান।
দাঁতমারা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আতাউল হক চৌধুরী বলেন, ‘এরা মূলত সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। সাংবাদিক বেশে তারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে অভিনব কায়দায় প্রতারণা করে।’
তিনি বলেন, ‘এদের বিরুদ্ধে ভূজপুর থানায় মামলা দায়ের শেষে সকালে জেলহাজতে প্রেরণ করা হবে।’
Leave a Reply