ইমরান শেখ
চট্টগ্রাম পশ্চিম ষোলশহর এলাকার কমপক্ষে ১৪ হাজার লোকের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এক নারী। প্রতারক নারীর নাম জান্নাতুল নাঈমা পুষন (৩৫)। শত শত লোক প্রতারক পুষনের বাড়ি ঘেরাও করে মারধরের চেষ্টাকালে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে গেছে। সরকারি অর্থ সহায়তা প্রদানের লোভ দেখানোসহ নানা প্রতারণার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে ক্ষুব্ধ জনতা গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে প্রতারক পুষনের বাড়ি ঘেরাও করে। এক পর্যায়ে তাকে ঘর থেকে বের করে এনে মারধর করার চেষ্টাকালে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ এসে তাকে জনতার রোষ থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। প্রতারিত শতাধিক লোকও পুষনের সাথে থানায় গিয়ে অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
স্থানীয় পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোবারক আলীসহ বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, জান্নাতুল নাঈমা পুষন হামজারবাগ কলোনির কুয়ারপাড়ের মৃত আবদুল করিমের কন্যা। কুয়ার পাড়ের নিজস্ব দু’তলা ভবনের মালিক প্রতারক পুষনের একাধিক বিয়ে হয়েছে। তিনি “সে-ই’ নামে একটি সমবায় কো-অপারেটিভ সোসাইটির রেজিেেস্ট্রশন নিয়ে এই প্রতারণা শুরু করেন। গত এপ্রিল ও মে মাসে করোনাকালীন সময়ে ৫ হাজার টাকা করে সরকারি ত্রাণ সহায়তা দেয়ার কথা বলে তিনি নিম্ন আয়ের লোকের কাছ থেকে রেজিট্রেশন ফি হিসাবে জনপ্রতি সর্বনিম্ন নগদ দুইশ টাকা, কারো কারো কাছ থেকে পাঁচশ ও এক হাজার টাকা নেন। এছাড়া বিদেশে নেয়ার কথা বলেও বহু লোকের কাছ থেকে তিনি বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। পশ্চিম ষোলশহর ওয়র্ডের হামজারবাগ, বিবিরহাট ও নাজিরপাড়া এলাকার বেশিরভাগ নিম্ন আয়ের লোক এই প্রতারণার শিকার হয়েছেন। প্রতারণা শিকার কান্তা ইসলাম মিশু নামের এক মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী জানান, জান্নাতুল নাঈমা পুষন সমবায় অধিদপ্তর থেকে ‘সে-ই’ নামে একটি সমবায় সমিতির রেজ্রিস্ট্রেশন নিয়ে সঞ্চয়ের বিপরীতে ঋণ দেয়ার কার্যক্রম শুরু করেন। এক পর্যায়ে তিনি সমিতির প্রধান নির্বাহী পরিচালক নিয়োগ দেয়ার কথা বলে মাহবুবুর রহমান দুর্জয় নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৪ লক্ষ টাকা এবং তাকে পরিচালক মাঠ হিসাবে নিয়োগের কথা বলে তিন লক্ষ টাকা নেন। কিন্তু তারা দু’জনের কাউকে নিয়োগ না দেয়ায় মিশু আদালতে মামলা করেছেন বলে উল্লেখ করেন। মিশু আরো বলেন, পুষন মূলত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সৈয়দা মেহেরুন্নেছা কবিরের স্বাক্ষর জাল করে এক কোটি টাকা ঋণ অনুমোদনের একটি জাল চিঠি তৈরি করেন। আর এখান থেকে করোনাকালীন ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়ার কথা বলে রেজ্রিস্ট্রেশন বাবদ শত শত লোকের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন। এরইমধ্যে পুষন সুইডেনও ঘুরে এসেছেন। প্রতারক পুষন বিদেশে লোক পাঠানোর কথা বলে বহু লোকের কাছ থেকে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া তিনি মাদক ব্যবসার সাথেও জড়িত।
এব্যাপারে স্থানীয় পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোবারক আলী জানান, ওয়ার্ড এলাকায় সকল এনজিও কার্যক্রম, সরকারি বা এনজিওর মাধ্যমে ত্রাণ বা অর্থ বিতরণ স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে অবহিত করার আইনগত বাধ্যবাদকতা রয়েছে। নিম্ন আয়ের লোকদের অর্থ সহায়তা দেয়ার কথা বলে টাকা নেয়ার খবর পেয়ে আমি জেলা প্রশাসন, থানা পুলিশ এবং বিভিন্ন সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাকে বিষয়টি অবহিত করেছি। কিন্তু কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এই পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। তিনি নিম্ন আয়ের প্রতারিত শতশত লোকের অর্থ উদ্ধার করে দেয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।
এব্যাপারে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহেদুল কবির জানান, অনুমোদনবিহীন এনজিও’র নাম দিয়ে সরকারি অর্থ সহায়তার কথা বলে গৃহকর্মী, গার্মেন্টস কর্মী, এমনকি ভিক্ষুকসহ ১৪ /১৫ হাজার নিম্ন আয়ের লোকের কাছ থেকে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে প্রতারক জান্নতুল নাঈমা পুষনকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি।