কাজী মোতাহার হোসেন নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
চট্টগ্রাম রাঙ্গুনিয়ায় ট্রাকচালককে অপহরণের পর হত্যা ও লাশ গুমের ঘটনার রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। দীর্ঘ একমাস অনুসন্ধানের পর হত্যাকাণ্ড নিয়ে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর কাহিনী। এই ঘটনায় শনিবার (২৪ এপ্রিল) রাত ১২টার দিকে নিহত ট্রাকচালক আজিজুলের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রবিবার (২৫ এপ্রিল) সকালে হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা মো. নেজাম ওরফে মিজানকে (২৬) সন্দ্বীপ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মিজানের দাবি বন্ধু আজিজুল তার স্ত্রীর সাথে পরকীয়া সর্ম্পকে লিপ্ত ছিল। এই ঘটনা মিজান কোনোভাবে মেনে নিতে পারছিল না। তাই বন্ধুকে হত্যার পরিকল্পনা করে সে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আজিজুলকে বালু বহনের ভাড়ার কথা বলে রাঙামাটির বেতবুনিয়া এলাকার একটি নির্জন জায়গায় ডেকে নেয়। পরে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সেখানে ট্রাকের রেঞ্জ দিয়ে মাথায় আঘাত এবং ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।
লাশ একদিন পাহাড়ে লুকিয়ে রাখার পর আজিজুলের জানাযা ও দাফনের চিন্তা করে মিজান। ওই রাতেই লাশ কাঁধে করে রাঙ্গুনিয়া থানার চৌধুরীখিলের নাজিম প্রফেসরের পাহাড়ের পাদদেশে একটি ডোবার সামনে নিয়ে আসে। সেখানে মিজান একাই মৃতের জানাযা পড়ে এবং কবর দেওয়ার মতো করে ডোবার তলদেশে লাশটি গুম করে।গত ২৫ মার্চ রাতে রাঙ্গুনিয়ার ইসলামপুর ইউনিয়নের আল আমিন পাড়া থেকে নিখোঁজ হন আজিজুল (২৭)। পরদিন সকালে আজিজুলের বাবা আব্দুল হাকিম রাঙ্গুনিয়া মডেল থানায় এ বিষয়ে একটি জিডি করেন।তদন্তে আজিজুলের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি প্রযুক্তির সাহায্যে কক্সবাজারে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ। ঘটনার ১৫ দিন পর কক্সবাজার সদর এলাকা থেকে মোবাইল ফোন এবং রামু এলাকা থেকে ট্রাক জব্দ করা হয়। অপহরণকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ওই এলাকা থেকে আরো দু’জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তারা মিজানের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে। এরপর পুলিশ মিজানের অবস্থান সন্দ্বীপে শনাক্ত করে তাকেও গ্রেপ্তার করে। মিজানকে রবিবার চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম আঞ্জুমান আরার আদালতে তোলা হলে তিনি ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে আজিজুলকে হত্যা ও গুমের ঘটনার রোমহষর্ক বর্ণনা তুলে ধরেন। পাশাপাশি তিনি স্ত্রীর সাথে আজিজুলের পরকীয়ার সন্দেহ থেকেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পরিকল্পনা করে মর্মেও জবানবন্দিতে উল্লেখ করে। আসামি মিজান রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা হাজীপাড়া এলাকার নুরুল আলমের ছেলে।এ বিষয়ে রাউজান-রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, গ্রেপ্তার এড়াতে মিজান নানা কৌশল অবলম্বন করে। একপর্যায়ে পুলিশি জিজ্ঞাসায় সত্যতা স্বীকার করে এবং আদালতেও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এটি সম্পূর্ণ ক্লু-লেস মার্ডার ছিল। প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে আমরা মূল হোতা মিজানকে গ্রেপ্তার করি।
Leave a Reply