রাসেল চৌধুরী :
চট্টগ্রাম নগর জুড়ে দীর্ঘদিনের সক্রিয় থাকা কিশোর গ্যাং হঠাৎ উর্ধাও। যে কিশোর গ্যাংদের অত্যাচারে এতদিন চট্টগ্রাম নগর তটস্থ ছিল তাদের এখন চোখে মেলা ভার।
সূত্র বলছে, বিগত আওয়ামী সরকারের শাসনামলে এলাকা ভিত্তিক আধিপত্য বিস্তার, চাঁদা আদায়, চুরি, হত্যা ও মাদক ব্যবসা নিজেদের কব্জায় দিতে কতিপয় আওয়ামী দাপুটে বড় ও মাঝারি নেতা ও নামসর্বস্ব বড় ভাইদের ছত্রছায়ার গড়ে উঠেছিল প্রায় ২৫০ টির মত কিশোর গ্যাং । মূলত এই সমস্ত নেতা আর বড় ভাযরা বস্তি ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে উঠতি ১২ থেকে ১৮ বছরের টার্গেট করে ঘুচাত কিশোর গ্যাং গ্রুপ। আবার অনেক নেতা ও বড় ভাইয়েরা গ্রুপে বেড়াতেন
স্কুল কলেজ পড়ুয়া কিশোরদের।
অনুসন্ধান বলছে, কিশোর গ্যাং গড়ার কারিগর সাবেক চকবাজান এলাকার কাউন্সিলর নুর মোস্তফা ওরফে টিনু, চসিকের ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও নগর যুবলীগের সহসভাপতি ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী, ৪ নম্বর চান্দগাঁও ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এসরারুর হক, ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জহুরুল আলম ওরফে জসিম ও ১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি আবুল হাসনাত ওরফে বেলালসহ ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের করা তালিকায় কিশোর গ্যাংয়ের ৪৮ বড় ভাই এরিসাথে ২০১৯ সালের পর পুলিশের নতুন তালিকা না থাকলেও বিভিন্ন ঘটনা ও মামলার হিসেব অনুযায়ী নতুন ১৬ জন ‘বড় ভাইসহ মোট ৬৪ বড় ভাই শুরুতে নিজ নিজ এলাকায় নিজেদের অবস্থান জানান দিতে ও আধিপত্য বজায় রাখতে গড়ে তোলে কিশোর গ্যাংগুলো। কিশোর গ্যাংগ্রুপগুলো পর্যায়ক্রমে হত্যা, জায়গা দখল, অপহরণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মারামারি, অস্ত্রবাজিসহ নানা অপরাধ সংগঠিত করত। আবার কিশোর গ্যাং গুলোর সদস্যদের নানা অপকর্মে অতিষ্ট থাকত নগরবাসী।
অনুসন্ধান আরো বলছে, আওয়ামী সককারের শাসন আমলের শুরু থেকে সরকার পতনের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত নগরীর কাউন্সিলর নুর মোস্তফার প্রশ্রয়ে ছিল ১৪টি কিশোর গ্যাং এছাড়াও চকবাজার এলাকায় সক্রিয় ছিল আরও ৮টি গ্রুপ। চসিকের ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও নগর যুবলীগের সহসভাপতি ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী প্রশ্রয়ে নগরের জিইসি, পাহাড়তলী, খুলশী এলাকায় ছিল ব্ল্যাক শামীম, সোলেমান বাদশা, সাহেদ ও কাইয়ুম নামে চারটি কিশোর গ্যাং। নুর মোস্তাফা, ওয়াসিম উদ্দিন ছাড়াও চসিক ৪ নম্বর চান্দগাঁও ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এসরারুর হক লালন করত ধামা জুয়েল, লম্বা দিদার, সোহেল ও রিফাত গ্রুপ নামে চারটি কিশোর গ্যাং। অন্যদিকে ১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি আবুল হাসনাত বেলালের হাসনাত প্রশ্রয় ডিশ সালাউদ্দিন, জাহিদ, নাহিদ ও তানজিদ গ্রুপ চারটি গ্রুপ। চসিক ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের পৃষ্ঠপোষকতার বিল্লাল, সালাউদ্দিন, শাকিল ও আনিস গ্রুপ নামে চারটি কিশোর গ্রুপ। এছাড়াও দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার ও ডাকাতি মামলার আসামি মো. ফিরোজ যিনি কিছুদিন নিজেকে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিতেন। এই ফিরোজ নগরের মুরাদপুর, নাসিরাবাদ, ষোলশহর ও পাঁচলাইশ এলাকায়
'রিচ কিডস' গ্যাং নামর অর্ধশতাধিক কিশোর ও তরুণ নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন কিশোর গ্যাং । এছাড়া নগরের দুই নাম্বার গেট, জিইসি, জাকির হোসেন রোড, আল ফালাহ গলি ও নাসিরাবাদ এলাকায় সক্রিয় শুলকবহর ওয়ার্ডের কথিত যুবলীগ নেতা সোলাইমান বাদশার ডিএক্স বয়েজ' নামে একটি ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপ। নগরীর কোতোয়ালি ও বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকায় সবচেয়ে বেশী কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য ছিল এর মধ্যে কোতোয়ালিতে ২৩টি ও বায়েজিদে সক্রিয় ছিল ১৯টি গ্রুপ।
সূত্র অনুযায়ী, আওয়ামী সককারের শাসন আমলের শুরু থেকে সরকার পতনের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত নগরীর ১৬ থানায সক্রিয় ছিল অন্তত ২৫০ কিশোর গ্যাং গ্রুপের অগনিত সদস্য। যাদের দাপটে ঘুম হারাম হত অনেকের।
৫ আগষ্টে আওয়ামী সরকারের ক্ষমতার পটপরিবর্তনে নিমিষেই উধাও এসকল কিশোর গ্যাং গ্রুপের সকল সদস্য। এরিসাথে কিশোর গ্যাংকে পৃষ্ঠপোষক ও প্রশ্রয় দাতা চকবাজান এলাকার কাউন্সিলর নুর মোস্তফা টিনু, চসিকের ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও নগর যুবলীগের সহসভাপতি ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী, ৪ নম্বর চান্দগাঁও ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এসরারুর হক, ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম ও ১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি আবুল হাসনাত বেলাল বেলাল গাঁ ঢাকা দিয়েছেন ৫ অক্টোবরে পর থেকে। বিশেষ করে এই ৫ কাউন্সিলরের কাউকে ৫ অক্টোবরে পর আর প্রকাশে দেখা যায়নি। মূলত তারা নিজেকে জনরোষারোল ও গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে রয়েছেন।
এছাড়াও হদিস নেই টিনুর ১৪টি কিশোর গ্যাংসহ চকবাজার এলাকায় ৮ গ্রুপের, ব্ল্যাক শামীম, সোলেমান বাদশা, সাহেদ ও কাইয়ুম, জুয়েল, লম্বা দিদার, সোহেল, রিফাত, ডিশ সালাউদ্দিন, জাহিদ, নাহিদ ও তানজিদ বিল্লাল, সালাউদ্দিন, শাকিল, আনিস নামের কিশোর গ্রুপের। এছাড়াও দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার ও ডাকাতি মামলার আসামি মো. ফিরোজ
'রিচ কিডস', যুবলীগ নেতা সোলাইমান বাদশার ফেসবুকভিত্তিক ডিএক্স বয়েজ' ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপ। নগরীর কোতোয়ালিসহ নগরের কোতোয়ালিতে ২৩, বায়েজিদে ১৯ গ্রুপসহ সকল কিশোর গ্যং ও গ্যাংসদস্যদের কোন হদিস নেই। তাদের মধ্যেই বেশীর ভাগ ঘাঁ ঢাকা দিয়েছেন আবকর কয়েকজন গৃহকোণে আবদ্ধ করে রেখেছেন নিজেদের।
উল্লেখ্য ২০১৮ সালে নগরের জামাল খান এলাকায় স্কুলছাত্র আদনান ইসফারকে গুলি করে খুনের ঘটনার পর আলোচনায় আসে কিশোর গ্যাং। এর পর পুলিশের হিসাব অনুযায়ী গত ছয় বছরে ৫৪৮ অপরাধের ঘটনায় কিশোর গ্যাং সদস্যারা। এর মধ্যে খুনের ঘটনা ঘটেছে ৩৪টি। বর্তমানে কিশোর গ্যাংদের বিরুদ্ধে ২ হাজার ২৩২টি মামলা বিচারাধীন। যা তিন বছর আগে ২০২১ সালে কিশোর অপরাধের মামলা ছিল ১ হাজার ৮৮টি।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy