সৌমেন সরকার
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সরিষার আড়ালে ৪২ টন নিষিদ্ধ পপি বীজ আমদানির মামলায় মূল হোতা আকবর হোসেন ওরফে ঢাকাইয়া আকবর এবং তাঁর সহযোগী আলী আহছান টিপু এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে! মামলার অন্য আসামিরা তাঁদের জবানবন্দিতে এই চোরাচালানের সঙ্গে আকবর ও টিপু সরাসরি জড়িত বলে স্বীকার করলেও এখনও তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
২০২১ সালের ২১ এপ্রিল পপি বীজের চালান ধরা পড়ার পর থেকেই আকবর ও টিপু আত্মগোপনে আছেন বলে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র বলছে, আকবর বর্তমানে ঢাকার বকশীবাজার বোর্ড অফিসের পাশে আয়েশা টাওয়ারের একটি ফ্ল্যাটে থাকেন।
অন্যদিকে আকবরের সহযোগী টিপুকে কয়েকবার গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়েও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যর্থ হয়েছে। তার বাড়ি চট্টগ্রামের মিরসরাইতে। টিপু বর্তমানে আত্মগোপনে আছেন বলে জানিয়েছে সিআইডি। সংস্থাটি মনে করছে, আকবর ও টিপুকে ধরা গেলেই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আনা পপি বীজের গন্থব্যস্থল কোথায় ছিল, তা জানা যাবে।
আফিমসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক তৈরিতে পপি বীজ ব্যবহার হয়। তাই দেশে এ বীজ আমদানি নিষিদ্ধ। ২০২১ সালের এপ্রিলে পুরান ঢাকার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আজমিন ট্রেড সেন্টার সরিষা বীজ ঘোষণায় মালয়েশিয়া থেকে দুই কনটেইনার পপি বীজ আমদানি করে। তাদের মনোনীত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট হটলাইন কার্গো ইন্টারন্যাশনাল চালানটি খালাসের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ১৮ এপ্রিল নিয়ম অনুযায়ী জমা দেয় বিল অব এন্ট্রি। ঘোষিত পণ্য সরিষা বীজের শুল্ক বাবদ ১ লাখ ৪২ হাজার ৪৯৭ টাকা পরিশোধ করে চালানটি খালাসের কার্যক্রম শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খালাস প্রক্রিয়া স্থগিত করে কাস্টম হাউসের অডিট, ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখা। পরে শতভাগ কায়িক পরীক্ষায় আমদানিকারকের ঘোষিত ৫৪ টন সরিষা বীজের স্থলে ১২ টন সরিষা বীজ এবং ৪২ টন পপি বীজ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় ওই বছরের ১ জুন চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আজমাইন ট্রেড সেন্টারের বিরুদ্ধে বন্দর থানায় মামলা করে।
সে সময় অভিযান চালিয়ে মামলার ২ নম্বর আসামি অখিল চন্দ্র মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করেছিল সিআইডি।মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম সিআইডির ইন্সপেক্টর মো. জাহেদ বলেন, আমি তদন্তভার নিয়েছি বেশিদিন হয়নি। মামলার পূর্ণাঙ্গ নথি পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এখনও আকবর ও টিপুকে গ্রেপ্তার সম্ভব হয়নি।সিআইডির তদন্ত ও আদালতে দেওয়া আসামিদের জবানবন্দি অনুযায়ী জানা যায়, ঢাকায় একটি কয়েলের দোকানে চাকরি করতেন সৈয়দ রাজু আহমেদ। ব্যবসার সূত্রে তাঁর সঙ্গে আকবরের পরিচয় হয়।
আকবর ২০২১ সালের জানুয়ারিতে রাজুর নামে ইসলামী ব্যাংকের ঢাকার মোগলটুলী শাখায় অ্যাকাউন্ট খোলেন এবং আজমাইন ট্রেড সেন্টার নামে একটি আমদানি লাইসেন্স বানিয়ে দেন। ওই আজমান ট্রেড সেন্টারের নামেই আকবর সরিষা বীজ আমদানির জন্য ২৬ হাজার ৩০০ মার্কিন ডলার জমা দেন। আকবর রোজার ঈদের পর রাজুকে জানান, সরিষার চালান বন্দরে এসেছে। যেদিন চালান ধরা পড়ে সেদিন আকবর জানায়, মালে কিছু ভেজাল পাওয়া গেছে। তবে চিন্তার কারণ নেই, তিনি সব ম্যানেজ করবেন। রাজুর নামে যে মোবাইল ফোনের সিম চালু রয়েছে, তা নদীতে ফেলে কিছুদিন পালিয়ে থাকতেও পরামর্শ দেন। কিন্তু কেরানীগঞ্জে পালিয়ে থাকা অবস্থায় সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হন রাজু। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে রাজু স্বীকার করেন, পপি বীজ আমদানির মূল হোতা আকবর।
এ মামলায় রাজু ছাড়াও এখন পর্যন্ত সিআইডি যে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে তাঁরা হলেন– অখিল চন্দ্র মণ্ডল, ফিলিপ রিবেরু, উত্তর দত্ত ও নজরুল ইসলাম ওরফে আল আমিন।