রাজশাহী ব্যুরোঃ
কখনো এমপি, কখনো বা সিটি মেয়রের ভাতিজা পরিচয় দিয়ে চাকরির নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন রাজশাহী নিউমার্কেট সংলগ্ন থিম ওমর প্লাজার এ্যাডমিন অফিসার নাহিদুজ্জামান পাপ্পু নামের এক প্রতারক। তবে প্রতারণার মুল হোতা রাজশাহী - ১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের এমপি ফারুক চৌধুরী, এমন ভিডিও বক্তব্য দিয়েছেন পাপ্পুর দ্বিতীয় স্ত্রী বাঁধন জামান।
দেশের যেকোন দপ্তরের সরকারি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিসহ উত্তরবঙ্গের মাদক পাচারের বড় গড ফাদার এমপি ফারুক চৌধুরী এমন অভিযোগ তুলেছেন বাঁধন।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারী (মঙ্গলবার) দুপুর থেকে পাপ্পুর ভাড়া বাসা বাড়িতে ভীড় জামাতে থাকে প্রতারণার শিকার হওয়া অসংখ্য ভুক্তভোগী। পরবর্তীতে টাকা ফেরত চেয়ে আন্দলন করে তারা। এসময় ভুক্তভোগী গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট এলাকার নুরসাদ আলীর ছেলে জনি -(২১) এর সাথে কথা বললে জানাযায়, পুলিশের চাকরির আশায় জমি বিক্রি করে ১০ লক্ষ টাকা দিয়েছেন তিনি। তবে টাকার গ্যারান্টি হিসেবে এনআরবিসি ব্যাংকের একটি চেক দিয়েছে পাপ্পু। এরকম আরেক ভুক্তভোগী বাগমারা উপজেলার দামনাশ এলাকার ফজলুল হকের ছেলে মিলন রহমান (২৯) রেলওয়ের এ্যাসিষ্ট্যান্ট লোকমেটিক পদের জমি ও এনজিও'র ঋন করে পাঁচ ধাপে ৮ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। টাকার গ্যারান্টি হিসেবে তিন শত টাকার ননজুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে লিখিত দেয় পাপ্পু। চাকররি আরেক প্রার্থী ইমন আলী জানান, রেলে চাকরি দেয়ার নামে তার কাছে থেকে ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় পাপ্পু। গত বছর তাকে রেলের চাকরি দেয়ার কথা ছিল। রেলে চাকরি দেয়ার কথা বলে ইমনসহ আরও ১০ জনের কাছ থেকে এক কোটি টাকার বেশী হাতিয়ে নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের ভুয়া নিয়োগপত্রও দেয়া হয়েছে। পাপ্পু আমাদের বলে তোমাদের ট্রেনিংয়ের জন্য চট্টগ্রাম যেতে হবে। আমরা পাপ্পুর কথা মত ১০ জন তার দেওয়া নিয়োগপত্র নিয়ে চট্টগ্রাম রেলের দপ্তরে যাই যোগদান করতে। সেখানে গিয়ে জানতে পারি আমাদের ভুয়া নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে। পরে তারা ফিরে এসে পাপ্পুকে বিষয়টি জানালে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে যান। তারা টাকা ফেরত চাইলে গড়িমশি শুরু করেন পাপ্পু। এক পর্যায়ে টাকা ফেরত দিবে বলে সময় নেন। কিন্তু সময় গড়ালেও তিনি আর টাকা ফেরত দেননি।
এরকম ৩০-৪০ জন ভুক্তভোগী ২৮ ফেব্রুয়ারি দুপুর থেকে পাপ্পুর বাসার সামনে ভীড় জমালে, সে নিজে ৯৯৯ ফোন করে সহযোগিতায় চাই। এরপর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় বোয়ালিয়া থানা পুলিশের এসআই সোহেল রানা ও তার সঙ্গীয় ফোর্স। এরপর সকলের বক্তব্য ও প্রমানপত্র দেখে বাধ্য হয়ে আসামী পাপ্পুকে গ্রেফতার করে নিয়ে থানায় নিয়ে আসে। কিন্তু গ্রেফতারের সময় পাপ্পুর স্ত্রী বাঁধন জামান পুলিশ ও মিডিয়ার সামনে আসল তথ্য ফাঁস করেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, আমার স্বামী এক টাকাও খাইনি। সব টাকা নিয়েছেন এমপি ফারুক চৌধুরী। শুধু তাই নয়, আমার স্বামীকে দিয়ে এমপি ফারুক চৌধুরী মাদকের ব্যবসাসহ বিভিন্ন ক্লাইন্ড নিয়ে আসাতেন। এসকল ব্যবসার জন্য ফারুক চৌধুরী ৭০% ও আমার স্বামীকে দিতে চেয়েছে ৩০ %। তবে এই চক্রের সাথে জড়িত প্রধানমন্ত্রীর পার্সোনার সেক্রেটারি (পিএস) ও মাগুরা -১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শেখর। আপনারা তাদেরকে ধরেন। এরপর পুলিশ পাপ্পুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় এবং ভুক্তভোগীদের থানায় এসে বাদী হয়ে মামলা করতে বলেন। পরে রাত ১২.০০ টা পর্যন্ত জনি আহমেদ (২১) নামের একজনকে বাদী করে ৪০৬,৪২০ ধারায় মামলা হিসেবে এজাহার ভুক্ত করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এদিকে পাপ্পুর দ্বিতীয় স্ত্রীর বিষয়ে মুখ খুলেছেন পাপ্পুর বাবা মা। তারা বলছেন, এই বাঁধন জাহান পরিচয় ধারি এই মেয়ে পাপ্পুর বউ নয়। আমরা আপাতত মুখ খুলছি না। আপনাদের সাথে পরে কথা বলবো।
পরে এব্যাপারে রাজশাহী -১ আসনের এমপি ফারুক চৌধুরীর সাথে মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগ করেও তিনি ফোন রিনিভ করেন নি। তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এবিষয়ে বোয়ালিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ সোহরাওয়ার্দী হোসেনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, পাপ্পু নামের একজনকে আটক করা হয়ে। এখানে টাকা দেওয়া অনেক ভুক্তভোগী এসেছে। তাদের দেওয়া ভাষ্যমতে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়েছে এই পাপ্পু। এই পাপ্পু এমপি ফারুক চৌধুরীর ভাতিজা কিনা জানতে চাইলে উত্তরে জানান, না এটা আপাতত বলা যাচ্ছে না। তবে তদন্ত সাপেক্ষে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy