চাকরিক্ষেত্রে সমঅধিকার ও স্বচ্ছতা, সুশাসনের কথায় বিশ্বব্যাপী ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা, চাকরির ক্ষেত্রে অযাচিত বৈষম্যের বিপক্ষে উন্নত বিশ্বের অবস্থান সুস্পষ্ট। কিন্তু বাংলাদেশ নানাক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করলে সরকারি সংস্থায় সুশাসন ও সাংবিধানিক অধিকার সুরক্ষার ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে।
বিশ্বের অধিকাংশ দেশে রাস্ট্রের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েই প্রনয়ণ করা হয় আইন। এমনকি সরকারী বেসরকারি সংস্থায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের সুরক্ষা দেবার বিষয়টিও অগ্রাধিকার দেয়া হয় প্রতিটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে । কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশন 'দুদক' সংস্থাটির কর্মকর্তাদের আইনী সুরক্ষা দেবার বিষয়ে চোখে পট্টি পড়ার নীতি গ্রহন করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বিভাগে প্রায় ১৮০ টি ফেডারেল শ্রম আইন প্রয়োগ করে কর্মকর্তা কর্মচারীদের সুরক্ষা দেয়া হয়। এমনকি ফেয়ার লেবার স্ট্যান্ডার্ডস অ্যাক্ট ফেডারেল ন্যূনতম মজুরি প্রতিষ্ঠা করেছে, যা বর্তমানে $ ৭.২৫ প্রতি ঘন্টায় দাঁড়িয়েছে। এছাড়া স্বতন্ত্র রাজ্যগুলি এরচেয়ে বেশি পরিমাণ নুন্যতম মজুরি নির্ধারণ করতে পারে। এছাড়া দেশটির সরকারি বেসরকারি সংস্থায় ' কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা আইন' অকুপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হেলথ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (OSHA) দ্বারা সুরক্ষিত। সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা কর্মচারী এবং নিয়োগকর্তাদের মধ্যে ' বেতন কর' বিধিমালা অনুযায়ী সুসম্পর্ক নিশ্চিত করে। যৌথ ফেডারেল-স্টেট প্রোগ্রামের মাধ্যমে দেওয়া হয় ' বেকারত্ব বীমা' সুবিধা। শুধু তাই নয়, সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের 'সুরক্ষা এক্ট ১৯৯১' - এই শিরোনামের আইনের ২০০০ ই থেকে ১৬ ( এ) ধারাগুলির উদ্দেশ্য হল নির্দিষ্ট সরকারি কর্মচারীদের অধিকার রক্ষা করার পদ্ধতি প্রদান করা, তাদের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে জাতি, বর্ণ, ধর্ম, লিঙ্গের ভিত্তিতে বৈষম্য মুক্ত করা। সে আইনেও যেকোন সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার স্বেচ্ছাচারী, বিদ্বেষপূর্ণ সিদ্ধান্ত, বিচক্ষণতার অপব্যবহার, বা আইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এমন চাকুরিবিধি থেকে কর্মকর্তা কর্মচারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে।
শুধু আমেরিকা নয় বৃটেনসহ ইউরোপের সবদেশে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের সুরক্ষা দেবার আইনী বেষ্টনী রয়েছে। সরকারী কর্মচারী একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য (সাধারণত ছয় মাস থেকে এক বছর) চাকরিতে থাকার পরে, কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষিত রাখা হয় - যাকে সাধারণত 'স্থায়ী চাকরির অবস্থা' বলা হচ্ছে আইনে । একবার তারা এই অবস্থানে পৌঁছে গেলে, সরকার যথাযথ প্রক্রিয়া বা রাস্ট্রের তহবিল থেকে আর্থিক ক্ষতির মতো গুরুতর সমস্যা ছাড়া তাদের চাকরি শেষ করতে পারে না।
কিন্তু দেশের ২০০৮ সালের দুদক চাকরি বিধিমালার ৫৪ (২) বিধিতে বলা হয়েছে, 'এই বিধিমালায় ভিন্নরূপ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কোন কারণ না দর্শাইয়া কোন কর্মচারীকে নব্বই দিনের নোটিশ প্রদান করিয়া অথবা নব্বই দিনের বেতন নগদ পরিশোধ করিয়া তাহাকে চাকরি হইতে অপসারণ করিতে পারিবে।'
দুদকের এমন চাকুরি বিধি যে মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। যদিও সম্প্রতি উচ্চ আদালত এই বিধি বহাল রাখার পক্ষে রায় দিয়েছে। সেই বিধির বৈধতা হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ হলে , কোর্ট বিধিটি বাতিলের রায়ও দিয়েছিলো। কিন্তু সরকারের ভেতরে থাকা আমলাতন্ত্রের দুষ্ট কুশীলবরা নতি স্বীকার করেনি। সেটা তারা করেনি কারণ দুদকে এমন কালো চাকরিবিধি সংযুক্ত করেছেও সেই পক্ষটি । দুদক হাইকোর্টে মামলা লড়ে হেরেও থামে নি ;এমন একটি অসাংবিধানিক কালো চাকরিবিধি টিকিয়ে রাখতে দুর্নীতি দমন কমিশন সুপ্রিম কোর্টের বারান্দায় যতটুকু ঘুরাঘুরি করেছে তার সিকি পরিমান সংস্থাটি তার সৎ কর্মকর্তাদের চাকরির সুরক্ষা নিয়ে ভাবলে 'দুর্নীতি দমন কমিশন' প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য সফলতা পেতো।
২০০৮ সালের আর্মি সমর্থিত সরকারের শেষ সময়ে এই বিধি সংযুক্ত করে দুদক কর্মকর্তাদের চাপের মুখে রাখতে চেয়েছিলো সেই সরকার। কোন ধরনের নোটিশ ছাড়া চাকরি যাবে, এমন একটি ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিলো। কিন্তু বিগত তিনটি সরকারের আমলে এমন অসাংবিধানিক বিধি বাতিল করা হয় নি। বিধিদের সুফল নিয়েছে দুর্নীতির সাথে জড়িত আমলারাই। ভবিষ্যতে এই বিধি প্রয়োগ করে দুর্নীতি দমন কমিশনের আরও অধিক সংখ্যক কর্মকর্তা চাকুরীচ্যুতি হবেন ; সেটি সহজেই অনুমেয়। কারণ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কিংবা তার ছেলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বর্তমানে যেসব দুদক কর্মকর্তা তদন্ত করছে বা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন ভবিষ্যতে তারা বিএনপি সরকারের আমলে চাকরি ক্ষেত্রে সুরক্ষা পাবেন -এমনকি চিন্তা করাও বোকার স্বর্গে বসবাস করা। অথবা সেসব কর্মকর্তা বিএনপির বা জামাতের দূর্নীতিবাজ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তাদের কচুকাটা করতে এই বিধিটিই হাতিয়ার হতে পারে। আমলাতন্ত্রের অসাধু অংশের চাপেই এ রকম একটি কালো চাকরিবিধি দুদকে যুক্ত হয়েছে সেটি বুঝতে রকেট সায়েন্স জানার প্রয়োজন নেই।
আরেকটি বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন তার অবস্থান পরিস্কার করেনি, প্রেষনে আসা কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে এই বিধির ব্যবহার। এই চাকরিবিধি যেহেতু দুর্নীতি দমন কমিশনে অন্য সংস্থা থেকে যোগ দেয়া কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যাবে না, সেহেতু একই সংস্থায় দুই ধরনের চাকরিবিধি প্রযোজ্য হচ্ছে। এটি দুদকের চাকরিক্ষেত্র সুস্পষ্ট ' বৈষম্যের সৃষ্টি করেছে। এমন চাকরিবিধির কারণে দুদকের মতো দায়িত্বশীল সংস্থার স্বেচ্ছাচারী, বিদ্বেষপূর্ণ সিদ্ধান্ত, বিচক্ষণতার অপব্যবহার, বা আইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এমন চাকুরিচ্যুতি থেকে কর্মকর্তা কর্মচারীদের সুরক্ষার অধিকার রক্ষা করা অসম্ভব করে তুলেছে। অথচ দেশের সংবিধানের ২৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘‘মৌলিক অধিকারের সহিত অসামঞ্জস্য আইন বাতিল হইবে”। এ বিষয়ে কোন সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ উচ্চ আদালতের নেই। রাষ্ট্রের স্বার্থ ক্ষুন্ন হয় এমন আইনও নৈতিকভাবে গ্রহনযোগ্য নয়।
যদিও উচ্চ আদালতের রায় সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা সমালোচনার সুযোগ নেই। তবে মানুষের মৌলিক অধিকার ও বাক স্বাধীনতা রুদ্ধ করার মতো রায়ও পৃথিবীর কোন আদালত থেকে কখনো আসেনি। সুতরাং সেই রায় নিয়ে আলোচনার বিষয়টিও আদালত অবমাননার মতো অজুহাতকে স্পর্শ করার কথা নয়।সংবিধানই আমাদের বাক স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিয়েছে । এছাড়া ২০১৩ সালের আদালত অবমাননা আইনে আইনের ৪ ধারায় নির্দোষ প্রকাশনা বা বিতরণ আদালত অবমাননা নয়। একইভাবে ৫ ধারায় পক্ষপাতহীন ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করাও আদালত অবমাননা নয়। একই আইনের ৬ ধারার ব্যাখ্যায় অধস্তন আদালতের সভাপতিত্বকারী বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরও আদালত অবমাননা নয়। আইনটির ৭ ধারায় কিছু ক্ষেত্র ছাড়া বিচারকের খাসকামরায় বা রুদ্ধদ্বার কক্ষে অনুষ্ঠিত প্রক্রিয়া-সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ আদালত অবমাননা নয় বলে সেই আইনে ব্যাখ্যাসহ বলা হয়েছে। সংবিধানকে উপেক্ষা করে আদালতের ‘টুঁটি চেপে ধরতে’ আদালত অবমাননা আইন-২০১৩ প্রণয়ন হয়েছিলো বলে আইনটি বাতিল করে দেওয়া রায়ের পর্যবেক্ষণে এমন মন্তব্যও করেছে হাইকোর্ট।
ফিরে আসি চাকরির সুরক্ষা পাবার সাংবিধানিক অধিকারে। ' চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে সবচেয়ে আলোচিত টেন্ডার জালিয়াতি, বালিশ-কাণ্ড, পর্দা-কাণ্ডসহ বিভিন্ন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতারের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ২০১৮ সালে সরকারী কর্মকর্তা সংক্রান্ত ফৌজদারি আইনের ৫৭ অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হলেও দুদকের মতো সংস্থায় সৎ কর্মকর্তাদের চাকরি ক্ষেত্রে সুরক্ষা দিয়ে রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষার আইনী বেষ্টনী নেই।
কিছু উচ্চ-স্তরের পদ বাদ দিলে অধিকাংশ সরকারি কর্মচারীরা রাজনৈতিক চাপের ভিত্তিতে অনেক ধরনের বৈষম্য থেকে রক্ষা পাওয়া প্রায় অসম্ভব । অথচ অনেক কর্মচারী কর্মকর্তাদের সুরক্ষা অতি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অনেক লোক নির্বাচিত কর্মকর্তাদের জন্য কাজ করে (হয় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে)। ফলে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। যদি প্রতিবার নির্দিষ্ট এজেন্সির নিয়ন্ত্রণে থাকা দল পরিবর্তন করার সময় কর্মীদের চাকরিচ্যুত করা হয় । বিশেষত, সিভিল সার্ভিসের চাকরি যেমন শিক্ষক, দুদক কর্মকর্তা, পুলিশ অফিসার এবং অন্যান্য রাষ্ট্রের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট পদ যা রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের উপর ভিত্তি করে প্রভাবিত উচিত নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের আইনে যদি একজন সরকারী কর্মচারী আবিষ্কার করেন যে তাদের এজেন্সি, বা এতে থাকা কেউ রাষ্ট্র বা ফেডারেল আইন লঙ্ঘন করছে, সেক্ষেত্রে তাদের নিজ নিজ কর্মসংস্থানকে ঝুঁকির মধ্যে না ফেলেই এই বিষয়ে রিপোর্ট করার অধিকার রয়েছে। হুইসেল ব্লোয়ার আইন- জালিয়াতি, স্বার্থের দ্বন্দ্ব এবং অন্যান্য অনেক ধরনের সমস্যা অনুসন্ধান বা তদন্ত করা কর্মকর্তাদের সুরক্ষা দিচ্ছে ।
প্রতিটি বৃটিশ ও আমেরিকান নাগরিকের স্বল্প পরিচিত অধিকারগুলির মধ্যে রয়েছে যথাযথ প্রক্রিয়ার অধিকার। এই অধিকারটির কারণে সরকার তার কর্মচারী বা একজন নাগরিকের জীবন, স্বাধীনতা বা সম্পত্তির স্বার্থ হরণ করতে পারে না ; তাদেরকে নোটিশ এবং ন্যায্য শুনানির সুযোগ না দিয়ে।'যথাযথ প্রক্রিয়া'র অধিকার মার্কিন সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যথাযথ প্রক্রিয়ার অধিকার প্রায়ই উঠে আসে যখন সরকার জনসাধারণের ব্যবহারের সম্পত্তি হস্তগত করে, কিংবা চাকরির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাবকে ব্যবহার করে। আইনের শাসন নিশ্চিত করতে সময়ে সময়ে, সরকারি কর্মচারীদের তাদের চাকরিতে বৈষম্যবিহীন পরিবেশ নিশ্চিতকরনের আগ্রহ থাকে। এবং যে কোন কারণে তাদের বরখাস্ত করার আগে 'যথাযথ প্রক্রিয়া' নিশ্চিত করতে হয়। এটি সাধারণত কার্যকর হয় যখন কোনও সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় বা তার চাকরির শর্তাদি চুক্তির ভিত্তিতে পর্যালোচনা করা হয়।
দুদকের ৫৪(২) বিধির ক্ষমতাবলে গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়। এরপর ৫৪(২) বিধি ও এই বিধির ক্ষমতাবলে চাকরিচ্যুতির বৈধতা নিয়ে আলোচিত দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন গত বছর হাইকোর্টে রিট করেন। আত্মপক্ষ সমর্থন ছাড়া এভাবে কর্মচারী অপসারণ সংবিধানের ২৭, ২৯, ৩১ ও ১৩৫ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন হলেও পিছু হটেনি দুদক ৷ এরআগে হাইকোর্ট এমন বিধি বাতিলও করেছিলেন৷ পরে দুদক লিভ টু আপিলের পর আপিল বিভাগ খারিজ করে দিয়েছিলেন৷ এরপর রিভিউ করে আবারও আপিলের সুযোগ নেয় দুদক৷ বহাল রাখে এমন অসাংবিধানিক চাকরিবিধিটি।
অথচ বাংলাদেশের সংবিধানের ১৩৫(২) অনুচ্ছেদে অনুযায়ী , ‘অনুরূপ পদে (প্রজাতন্ত্রের অসামরিক পদে) নিযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে তাহার সম্পর্কে প্রস্তাবিত কোনো ব্যবস্থাগ্রহণের বিরুদ্ধে কারণ দর্শাইবার যুক্তিসঙ্গত সুযোগ দান না করা পর্যন্ত তাহাকে বরখাস্ত, অপসারিত বা পদাবনমিত করা যাইবে না।’
অন্ধের দেশে আয়না বিক্রির মতোই ঠেকেছে রাষ্ট্রের স্বার্থে কাজ করা একজন কর্মকর্তার চাকরির দেবার বিষয়টি। এমন কালো চাকরিবিধি ব্যবহার করে চাকরিচ্যুত দুদক কর্মকর্তা সংস্থাটির ৫৪ বিধি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্ট বিভাগে ( রিট পিটিশন নং-১৪২৪/২০১১) পিটিশন দায়ের করেছিলেন। ২০১১ সালের ১৭ অক্টোবর হাইকোর্ট বিভাগ দুদকের চাকরি বিধিমালার ৫৪ বিধিকে অসাংবিধানিক হিসেবে ঘোষণা করেন। এতটুকুতেই শেষ হতে পারতো অগণতান্ত্রিক সরকারের আমলে করা এই চাকরিবিধির ; কিন্তু হয় নি। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয় দুদকের পক্ষ থেকে। আদালত ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর আপিল খারিজ করে হাইকোর্ট বিভাগের ' ৫৪ বিধি অসংবিধানিক' ঘোষণাটি বহাল রাখেন। এখানেও থামেন নিয়ে দুদক। আপিল বিভাগের ওই সিদ্ধান্তের বিপরীতে (৩২/ ২০১৭) সিভিল রিভিশন করলে একতরফা (রিটকারীর প্রতিনিধির অনুপস্থিতিতে) শুনানি করে ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর হাইকোর্টের আদেশটি স্থগিত করেন। পরে অংশটুকু সবারই জানা। রাষ্ট্রের স্বার্থে কাজ করা দুদকের মতো একটি সংস্থা অসাংবিধানিক এই কালোবিধির পেছনে যথেষ্ট সময় অপচয় করেছেন। এমন বিধি বহাল রাখার কারণে কর্মকর্তা কর্মচারীদের চাকরির সুরক্ষা বিঘ্নিত হওয়া ছাড়া রাষ্ট্রের কোন অর্জন নেই ; তবুও দুর্নীতি দমন কমিশন পিছু হটেন নি। শেষ পর্যন্ত আইনের দীর্ঘ পথ হেঁটে জয় হয়েছে দুদকের, হেরেছে জনগণ। এখন সরকারী সকল সংস্থায় এমন কালোচাকরিবিধি যুক্ত করে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের গনতন্ত্র ও সুশাসনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার অপচেষ্টা করা হবে না ; সেই নিশ্চয়তা কেউই দিতে পারবেন না।
লেখক - ওয়াহিদ জামান, সাংবাদিক
ফেলো, নাইট সেন্টার ফর জার্নালিজম