মোঃশাহজাহান খন্দকার :
কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার বাসিন্দা সেই ৭৪’র আলোচিত ব্রহ্মপুত্রপাড়ের জেলেকন্যা বাসন্তী দাসের পাশে দাঁড়িয়েছে উপজেলা প্রশাসন চিলমারী। ভরনপোষণের জন্য বাসন্তীকে প্রতিমাসে চার হাজার ৫০০ টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা করছে উপজেলা প্রশাসন। চলতি বছর জানুয়ারী মাস থেকে শুরু হওয়া বাসন্তীর জন্য এ আর্থিক সহযোগিতা তার মৃত্যুর আগ পযর্ন্ত চলমান থাকবে । এছাড়া বসবাসের জন্য বাসন্তী দাসকে দেওয়া হয়েছে একটি পাকা ঘর। তার বিনোদনের জন্য দেওয়া হয়েছে একটি টেলিভিশন। জেলেকন্যা বাসন্তী দাস বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। এছাড়া তিনি প্রতিমাসে সরকারের প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন।
আলোচিত সেই বাসন্তী দাস উপজেলার রমনা ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে জেলেপাড়া গ্রামের মৃত কান্দুরা রাম দাস ও মৃত শুটকী বালা দাসের মেয়ে। চার ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয় তিনি। তার ছোট ভাই বিষু চন্দ্র দাস ও ছোট বোন দূর্গা রানী দাস মারা গেছেন। বেঁচে আছেন তার বড় ভাই আশু চন্দ্র দাস (৮০)। বাসন্তী দাস মৃত বিষু চন্দ্র দাসের স্ত্রী নিরোবালা দাসের সাথে বসবাস করছেন।
নিরোবালা দাস বলেন, আগে খুব কষ্টে বাঁচতে হতো বাসন্তীকে। প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা আর মাঝে মাঝে ত্রাণ সহযোগিতায় কোনরকমে চলতো তার জীবিকা। “আমাদের নিজস্ব কোন জমি নেই। দিনমজুরি করে প্রতিদিন ১২০-১৩০ টাকা রোজগার করছি। উপজেলা থেকে বাসন্তীকে প্রতিমাসে ভরনপোষণের জন্য টাকা দিচ্ছে। তাকে একটি ঘর ও টেলিভিশন দিয়েছে বলে জানান তিনি।
বাসন্তীর বড় ভাই আশু চন্দ্র দাস (৮০) বলেন, বাসন্তী তার চেয়ে ১১-১২ বছরের ছোট। সে জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। স্থানীয়দের আর্থিক সহযোগিতায় তারা বাসন্তীকে বিয়ে দিয়েছিলেন ১৯৮০ সালে, সে প্রতিবন্ধী হওয়ায় তার সংসার একমাসও টিকেনি। “আমার বোন বাসন্তী’র দারিদ্রতার গল্প অনেকের ভাগ্য পরিবর্তন ঘটালেও আমাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। এখনো দারিদ্রতার সাথে লড়াই করে আমাদেরকে বেঁচে থাকতে হচ্ছে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুকুনুজ্জামান শাহীন জানান, তিনি উপনির্বাচনে গেল বছর নভেম্বর মাসে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। “আগের জনপ্রতিনিধিরা কেন বাসন্তীর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি সেটা আমি বলতে পারবো না। আমি নির্বাচিত হওয়ার পরই বাসন্তীর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
রুকুনুজ্জামান শাহীন বলেন, “এটা সত্য বাসন্তীর দারিদ্রতার গল্প চিলমারীতে অনেকের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে”।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাহবুবুর রহমান বলেন, তিনি ছাত্রজীবেনে ব্রহ্মপুত্রপাড়ের বাসন্তী দাসের গল্প অনেকে শুনেছেন কিন্তু বাস্তবে বাসন্তীতে দেখতে পারেননি। চিলমারীতে ইউএনও হিসেবে যোগদানের পর তিনি বাসন্তীর খোঁজখবর নেন। মৃত্যুর আগ পযর্ন্ত বাসন্তী উপজেলা প্রশাসন থেকে আর্থিক সহযোগিতা পাবেন বলে ইউএনও নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে জেলেকন্যা বাসন্তীর খোঁজ রাখবো,’।
উল্লেখ্য, ১৯৭৪ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের শিরোনামে মাছ ধরার জাল পরিহিতা বাংলাদেশি এক নারীর ছবি প্রকাশিত হলে সারা বিশ্বের বিবেককে নাড়া দেয়।