রেখা মনি, নিজস্ব প্রতিবেদক:
Facebook Twitter Instagram share
ফুলবাড়ীতে বাণিজ্যিকভাবে মাথার চুল দিয়ে ক্যাপ (পরচুলা) তৈরি করে সফল উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন নিভৃত পল্লীর এক নারী উদ্যোক্তা।
লাইজু খাতুন, যিনি স্নাতকোত্তর করেছেন সরকারি কলেজ থেকে। গতানুগতিক চাকরির পেছনে না ছুটে হয়ে গেছে উদ্যোক্তা। বর্তমানে তার উৎপাদিত চুলের তৈরি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও।
Surjodoy.com
জানা গেছে, গ্রামের গরীব-অসহায় পরিবারের ৩০ জন নারীসহ চুলের ক্যাপ তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন লাইজু খাতুন।
এই নারী উদ্যোক্তার উদ্যোগে ৩০ নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ হওয়ায় প্রতি মাসে ৪ থেকে ৭ হাজার টাকা আয় করে তাদের পরিবারে সচ্ছলতা ফিরেছে।
সরকারি-বেসরকারিভাবে আর্থিক সুবিধা পেলে প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে অবহেলিত এলাকার শতশত নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে জানান ঐ নারী উদ্যোক্তা।
The Daily surjodoy
লাইজু কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার চন্দ্র খানা বালাতাড়ি গ্রামের কৃষক হেছার আলী মেয়ে। হেছার আলীর তার পাঁচ মেয়ে। বড় তিন মেয়ের অভাবে কারণে পড়ালেখা করতে না পারলেও অনেক কষ্টে চতুর্থ মেয়ে লাইজু খাতুন অনার্স-মার্স্টাস সফলতার সহিত শেষ করে। ২০১৬ সালে রংপুর সরকারি কলেজে বাংলা বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স (এম.এ) প্রথম স্থান অধিকার করে।
The Daily surjodoy
২০১৫ সালে ফেব্রুয়ারিতে একই উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের সোনাইকাজী গ্রামের আজিজার রহমানের ছেলে সামিউল ইসলাম সেলিমের সঙ্গে পারিবারিক ভাবে বিবাহ সম্পূর্ণ হয়। তার স্বামী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তার আড়াই বছরের একটি কন্যা সন্তান আছে।
কর্মরত মোসলেমা বেগম (৩০) জানান, লাইজু আপার মাধ্যমে আমার মতো অনেক নারী কাজের সুযোগ পাই। মাসে ৪ থেকে ৭ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। এখন পরিবারের স্বচ্ছলতা এসেছে।
The Daily surjodoy
কাকলী খাতুন (৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী) ও আনিছা আক্তার (৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী) জানায়, তাদের স্কুল বন্ধ থাকায় ৮ থেকে ১০ জন শিক্ষার্থী লাইজুর প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করছেন। তারাও পড়ালেখার পাশাপাশি ভবিষ্যতে নিজের পায়ে দাঁড়ানো স্বপ্ন দেখছেন বলে জানান।
লাইজুর স্বামী সামিউল ইসলাম সেলিম জানান, লাইজু খুবেই মেধাবী একজন নারী। সে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার পরও কোনো চাকরি করবে না। তার ইচ্ছা সে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হয়ে নিজে সাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি গ্রামের অবহেলিত নারীদের স্বাবলম্বী করে তুলবেন।
The Daily surjodoy
বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ ও কিছু জমানো অর্থ দিয়ে ৩০ জন নারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া ও বিভিন্ন কাঁচামালসহ এ যাবদ খরচ হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।
উদ্যোক্তা লাইজু খাতুন জানান, আমার অনেক দিনের ইচ্ছা ও স্বপ্ন একজন সফল উদ্যোক্তা হয়ে গ্রামের নারীদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করবো।
The Daily surjodoy
তারই প্রেক্ষিতে ময়মসিংহে ৫ দিন ও ঢাকায় ১০ দিনসহ মোট ১৫ দিন চুল দিয়ে ক্যাপ তৈরির প্রশিক্ষণ নেই। প্রশিক্ষণ নিয়ে গ্রামের ৩০ জন নারীকে আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে ২০ থেকে ২৫ দিন ক্যাপ তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়ে বাবার বাড়িতে একটি টিনসেট ঘরে স্বল্প পরিসরে ‘সিনহা বিনতে সামিউল হেয়ার ক্যাপ নিটিং লিঃ’ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করি।
এখন আমার প্রতিষ্ঠানে গত আড়াই থেকে তিন মাস ধরে চুলের ক্যাপ উৎপাদন হচ্ছে। ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মাধ্যমে এই চুলের তৈরি ক্যাপগুলো ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করছি। তারা আমাদের তৈরিকৃত চুলের ক্যাপ চীনে রপ্তানি করছে।
The Daily surjodoy
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোছাঃ সোহেলী পারভীন জানান, দুই একদিনের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মাধ্যমে লাইজুর প্রতিষ্ঠানটি সমিতির অর্ন্তভুক্তির মাধ্যমে রেজিষ্ট্রেশনের ব্যবস্থা করা হলে উপজেলার শতাধিক নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আমার বিশ্বাস।
The Daily surjodoy
উপজেলানির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুমন দাস জানান, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই নারী উদ্যোক্তাকে সব ধরণের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হবে। যাতে লাইজুর মতো অনেকেই দেশ ও জাতির কল্যাণে এগিয়ে আসতে পারে।
Leave a Reply