ছুটির দিনেও ঢাকায় মানুষের চাপ; রাজধানীতে উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি
আশিকুর রহমান, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
শুক্রবার (২৫ জুন) ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও রাজধানীর সড়কগুলোতে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। অপরদিকে, দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলো থেকে করোনা সংক্রমণ ধীরে ধীরে রাজধানী ঢাকার দিকে ধাবিত হচ্ছে। চলছে ঢাকার পাশ্ববর্তী ৭ জেলায় লকডাউন; কিন্ত জনসাধারণের মাঝে উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি।
শুক্রবার ঢাকার বাইপাইল থেকে আব্দুল্লাহপুর, গুলশান, মালিবাগ, কমলাপুর রেলস্টেশন হয়ে বাবুবাজার ব্রিজ পর্যন্ত সরেজমিনে পরিদর্শনকালে দেখা যায়, ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও রাজধানীর ভিতরে চলাচলকারী গণপরিবহনগুলোতে নেই স্বাস্থ্যবিধির বালাই। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, অর্থাৎ ২ সিটে একজন যাত্রী এবং তার জন্য অতিরিক্ত ৬০ শতাংশ ভাড়া; কোন কিছুই মানছেনা রাজধানী ঢাকার বেশিরভাগ গণপরিবহন। অপরদিকে, জনমনেও যেন নেই কোন ভয় বা স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, বেশিরভাগ মানুষের মুখে মাস্কটি পর্যন্ত নেই।
এদিকে, ঢাকার পার্শ্ববর্তী ৭ জেলায় চলছে লকডাউন। লকডাউন কঠোরভাবে পালন করছে স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশ। বিশেষকরে, রাজধানীর প্রবেশদ্বারগুলোতে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট; যেখানে ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ এবং র্যাব কঠোরভাবে লকডাউন প্রতিপালন করছে। সেই সাথে কিছুক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় জরিমানাও করা হচ্ছে। প্রায় প্রতিটি পয়েন্টে চেকপোস্ট থাকায় এবং তল্লাশি চালানোর ফলে, ঢাকার প্রবেশপথগুলো দিয়ে কোন গণপরিবহন ঢাকায় প্রবেশ করতে পারছেনা। শুধুমাত্র পণ্যবাহী ট্রাক, জরুরী কাজে নিয়োজিত গাড়ি এবং এম্বুল্যান্স যাতায়াত করতে পারছে।
এদিক থেকেও চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন গাজীপুর থেকে ঢাকায় কর্মস্থলে আসা জনগণ। গাজীপুর জেলায় লকডাউনের ফলে, যারা গাজীপুর থেকে ঢাকার ভিতরে এসে চাকুরী করেন, তাদেরকে কোথাও গাড়িতে বা কোথাও পায়ে হেটে ভেঙে ভেঙে কর্মস্থলে আসতে দেখা যায়। এমনকি অনেককে ছোট ট্রাক বা পিকআপ ভ্যানে করেও ঢাকাতে প্রবেশ করতে দেখা যায়। তাদের মতামত, দূরপাল্লার গণপরিবহনের পাশাপাশি দেশের রেলযোগাযোগও বন্ধ থাকায় এবং লকডাউনের কারণে যাতায়াত বন্ধ হলেও, তাদের অফিস বন্ধ হয়নি। তাই যতো কষ্টোই হোকনা কেন, জীবিকার তাগিদে তাদেরকে নিজ কর্মস্থলে সঠিক সময়ে উপস্থিত হতে হয়।
দেশের করোনা পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাওয়ায়, গত বৃহস্পতিবার করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে জাতীয় পরামর্শক কমিটি কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে লকডাউনের পরিবর্তে, ১৪ দিনের জন্য সারা দেশ ‘শাটডাউন’ করার সুপারিশ করে। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশের ৪১টি জেলাকে ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ জেলা হিসেবে চিহ্নিত করে ইতোমধ্যে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট অধিক সংক্রমক। তাই এখনই যদি করোনার লাগাম টেনে ধরা না যায় এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তবে অতি শীঘ্রই কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে দেশকে।
Leave a Reply