লেখক সায়মা জাহান সরকার
ছোটবেলায় পড়েছিলাম, 'শিক্ষা অমূল্য সম্পদ'এখানে 'অমূল্য'কথাটি দিয়ে বোঝানো হতো যার মূল্য সর্বাধিক এবং তা টাকায় কেনা সম্ভব নয়।অথচ একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে মূল্যবান ও টাকায় বেচাকেনা হয় 'শিক্ষা'।গতকাল প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশের প্রাচীন মাধ্যমিক শিক্ষালয় তথা ',জিলা স্কুল' ও মাধ্যমিক সরকারি স্কুল গুলোর লটারির মাধ্যমে তৃতীয় শ্রেণির ফলাফল।আগে এসবে ভর্তি পরীক্ষা হতো এবং কীভাবে খাতা দেখা হতো,কারা খাতা দেখতো কীভাবে পরীক্ষায় পাশ দেখিয়ে চান্স দেখাতো সে সমপর্কে গণিত অলিম্পিয়াডের সাধারণ সম্পাদক (সাবেক শিক্ষক বুয়েট)চমৎকার বর্ণনা দিয়েছিলেন ২০১৮ সালের 'প্রথম আলো'কলামে।যায়হোক, গত কয়েকদিন আগে আমার পিচ্চি কাজিনরা স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য বগুড়া শহরের নামকরা প্রাইভেট স্কুলগুলোতে গেল,ফরম কেনার আগে সকল স্কুলের প্রশ্ন বাবা কি করেন এবং মাসিক ইনকাম কত?আমিতো রীতিমতো বিস্মিত এবং হতভম্ব। তারমানে মাসিক ইনকাম না থাকলে এসব স্কুলে সন্তানদের পড়ানো যাবেনা!কি বিভৎস্য!! এরপর তুলনামূলক বেশি নামি এক স্কুলে গেলাম, সেখানেও একই ঘটনা, আমি জানার জন্য বল্লাম কেন এমনটি?তিনি তখন বিস্তারিত বল্লেন।আমি তো রীতিমতো টাস্কি খেয়ে গেলাম। এবার লটারি হলো,সকল স্কুল (বেসরকারি নামি)লটারিতে কেবল তাদের নামই রাখে যাদের মাসিক ইনকাম তাদের অভ্যন্তরে বেঁধে দেওয়া লিমিটের মধ্যে। যার মানে যারা ধনিক শ্রেণী এবং প্রতিমাসে বিভিন্ন বাবদ যে টাকা দাবি করবে তা দিতে সক্ষম হবে।প্রথম আলো পত্রিকায় দেখলাম বিশ্ববিদ্যালয় বিক্রি হচ্ছে, কারণ হিসেবে অনেক কিছুই দেখিয়েছে।গতবছর একটি জাতীয় দৈনিকে দেখলাম টাকায় বিক্রি হচ্ছে 'বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ' এত টাকার খেলায় যখন 'শিক্ষা'নামক পন্য বিক্রি হচ্ছে তখন কর্মসংস্থানের অবস্থা নাজুক কেন?বাংলাদেশে যে বেকারের পরিসংখ্যান দৈনিক যুগান্তরের ২০১৮ তে যা প্রায় ৪ কোটি ৮৬ লক্ষ্য আরও বিস্ময়কর হলো যার ৬৫ শতাংশই তরুন,আরও বিস্মিত হওয়ার বিষয় হলো যাদের ৪৭ শতাংশই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করা।এত বেকার তবুও চাকরি নেই,নেই কর্মসংস্থান।অথচ ভারতের প্রায় লক্ষাধীক ব্যক্তির কর্মসংস্থান বাংলাদেশে,প্রায় বিশোর্ধ প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ভারতীয়রা।চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠাগুলোকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে বলে আমাদের দেশে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যায়না।কি মজার উত্তর!!! টাকার বিনিময়ে লটারির বক্সে নাম ঢুকে,টাকা দিয়ে শিক্ষা ক্রয়-বিক্রয় হলো,তবুও এমন কেন?বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হচ্ছে জেলায় জেলায় কিন্তু শিক্ষার মান এত নিচে কেনো যে চাকরির জন্য দেশে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যায়না আনতে হয় ভারত থেকে।গত বাজেটে শিক্ষা মন্ত্রী বলেছেন বিদেশ থেকে শিক্ষক আনা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগ যতটা ত্রুটিপূর্ণ তা পৃথিবীর কোথাও নেই।দল না দেখে যোগ্যদের নিয়োগ দিলেই আর শতকোটি টাকা দিয়ে বিদেশি শিক্ষকের প্রয়োজন হবেনা।প্রতিটি দেশ শিক্ষাক্ষেত্রে দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে, আর আমরা যাচ্ছি পিছিয়ে। ভূত নাকি সামনে এগিয়ে যেতে চাইলেও পিছিয়ে যায়।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy