প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২৪, ২০২৪, ৮:২৪ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুলাই ৬, ২০২২, ১২:১৪ এ.এম
জবি প্রতিনিধি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) নাট্যকলা বিভাগের প্রযোজনায় মঞ্চস্থ হয়েছে ইউরোপিয়ান নাটক উইলিয়াম শেক্সপিয়ার রচিত ‘এ মিডসামার নাইট’স ড্রিম’।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে শুক্রবার ও শনিবার এ দুই দিন ব্যাপী নাটকটি মঞ্চস্থ হয়েছে। নাট্যকলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষ ষষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা প্রযোজনাটি নির্দেশনা দিয়েছেন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সঞ্জীব কুমার দে।
শেক্সপিয়রের রচিত অন্যতম জনপ্রিয় ও সারা বিশ্বে অভিনীত কমেডি নাটক এটি। এথেন্সের ডিউক থিসিয়াস ও আমাজনদের রানি হিপ্পোলিটার বিবাহের পারিপার্শ্বিক ঘটনা অবলম্বনে এই নাটক রচিত। নাটকে দুই প্রণয়ীযুগল ও একদল শখের অভিনেতার অ্যাডভেঞ্চার প্রদর্শিত হয়েছে।
নাটকটিতে অভিনয় করেছেন- শফিকুল, আরিফ, মৌমিতা, সাবরিনা, পরমা, অনামিকা, মৃত্তিকা, বৃষ্টি, সাবিহা, প্রিয়া, শাকিল, নিবিড়, জিন্নাত, নাফিস, মিল্টন, রিয়াজ, জান্নাতুল, লামিয়া, স্বর্ণা, উম্মেহানি, রিমি, বিথী, ফারজানা, সায়লা, সুজানা, আশরাফুল, উচ্ছ্বাস, হৃদয়, ইব্রাহিম, আলিমুল, আবেশ ও এলিন।
নাটকটিতে দেখা যায়, হার্মিয়া নামের এক যুবতীকে তার পিতা দিমেত্রিয়াস নামের এক যুবকের সাথে বিয়ে দিতে চায়। কিন্তু হার্মিয়া ভালোবাসে লাইস্যান্ডারকে। লাইসেন্ডার ও হার্মিয়া সিদ্ধান্ত নেয় দূরে কোথাও পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করবে। কিন্তু সে সিদ্ধান্ত ফাঁস হয়ে যায়।
অন্যদিকে পরী রাজ্যের রাজা ওবেরন ও রাণী টিটানিয়া একটি ভারতীয় বালককে কেন্দ্র করে ঝগড়ায় মত্ত হয়। ওবেরন রাণী টিটানিয়ার কথায় ক্ষুব্ধ হয় এবং রাণীকে উপযুক্ত জবাব দেওয়ার পরিকল্পনা করে। ওবেরন তার অনুচর পাককে একটি শ্বেতশুভ্র ফুল এনে দিতে বলে।
যে ফুলের নির্যাস ঘুমন্ত কারো চোখে এক ফোঁটা ঢেলে দিলেই ঘুম হতে জেগে ওঠে সে যাকে দেখবে তারই প্রেমে পড়ে যাবে। শ্রমিকদল জঙ্গলে নাটকের মহড়া দিতে এসেছে। পাক ইতিপূর্বে জাদুবলে বটমের মাথাকে গাধার মাথাতে পরিণত করে দেয়। টিটানিয়া গাধারূপী বটমকে দেখেই ভালোবেসে ফেলে।
এদিকে লাইসেন্ডার ঘুম হতে জেগে হার্মিয়াকে ভুলে হেলেনাকে প্রেম নিবেদন করে। পরী রাজা ওবেরনের নির্দেশে পাক সবার দৃষ্টি হতে মোহজাল সরিয়ে দেয়। অবশেষে মোহভঙ্গ ঘটে সবার। রাজা থিসিয়াস ও রাণী হিপোলিটার বিবাহ অনুষ্ঠানে যোগ দেয় এবং একসাথে সবাই শ্রমিক দলের নাটক উপভোগ করে। এমন ত্রিমুখী প্রেমের সংঘর্ষে সৃষ্টি হয় দারুণ এক হাস্যরসাত্মক পরিস্থিতি। যা নাটকটির মূল দিক।
নাটকটির মঞ্চ আলোক পরিকল্পনা করেন বিভাগীয় চেয়ারম্যান শামস্ শাহরিয়ার কবি। পোষাক পরিকল্পনা ও অঙ্গরচনা তত্ত্বাবধায়ন করেন বিভাগীয় শিক্ষক আফরিন হুদা তোড়া। দেহবিন্যাস তত্ত্বাবধায়নে ছিলেন বিভাগীয় শিক্ষক রুবাইয়া জাবীন প্রিয়তা ও কৃপাকণা তালুকদার।
নাটকটির আলোক প্রক্ষেপণে ছিলেন মাহাবুবুর রহমান এবং মিউজিকে ইব্রাহীম এলিন ও হোসেন হৃদয়। এছাড়াও বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা নেপথ্যে রয়েছেন। মঞ্চবিন্যাসে ছিলেন অনামিকা, মৌমিতা, শাকিল, দিনা, আরিফ, আলিম, নিবিড়, শাহিনুল, জান্নাতুল, সায়লা, লামিয়া, মিল্টন ও মুস্তাকিন।
নাটক প্রসঙ্গে নির্দেশক সঞ্জীব কুমার দে বলেন, শিক্ষায়তনে নাট্য প্রযোজনা সিলেবাসের আবর্তে চলমান। তারই ধারাবাহিকতায় জবি নাট্যকলা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের প্রযোজনা উইলিয়াম শেক্সপিয়ার রচিত ‘এ মিডসামার নাইট’স ড্রিম’ এই নাট্য নির্মাণের ক্ষেত্রে ক্লাসিকের গুরুত্ব অক্ষুন্ন রেখে সমসাময়িক বিষয়কে যুক্ত করার চেষ্টা হয়েছে।
কমেডি’ খুব সহজভাবে হাস্যরসের মধ্য দিয়ে জীবনের অসঙ্গতিগুলোকে সমাজের সামনে প্রকাশ করে। নাটকের কল্পকাহিনীর মূল বিষয় হলো হাস্যরস এবং প্রেম। প্রেম যেন একটা শৃঙ্খলাবিহীন হাস্যকর বিষয়। প্রেমে পড়া মানুষ অতি সহজেই জীবনের ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে পরিণত হয়।
তিনি আরও বলেন, এই নাটকের প্রতিটি চরিত্রই যেন স্বপ্নের ঘোরের মাঝে বসবাস করে। এ যেন জগৎ নয়, স্বপ্নে দর্শন করা কোনো পরী রাজ্যের বিচরণ। বটমের ভাষায়- ‘Love and reason can’t live together’ অর্থাৎ প্রেম আর যুক্তির সহাবস্থানের ক্ষেত্রে যে প্রশ্ন উত্থাপিত হয় এই নাটকে তার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে কলাকুশলীবৃন্দ। এই সংকটময় জটিল জীবনে প্রেমের জটিলতা যে হাস্যরস তৈরী করে তা দর্শকমনকে প্রফুল্ল করবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।