জুয়েল খাঁন,সিলেট জেলা প্রতিনিধি
সিলেটে পুলিশি হেফাজতে রায়হান আহমদ (৩৪) হত্যা মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি বরখাস্ত উপপরিদর্শক (এসআই) মো. হাসান উদ্দিনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়েছে। হাসান বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সেকেন্ড-ইন-কমান্ড (টুআইসি) পদে ছিলেন। ফাঁড়ির সিসিটিভির ফুটেজ গায়েব করার অভিযোগে তাঁকে মামলার আসামি করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার ভার্চ্যুয়াল শুনানি শেষে তাঁর জামিন নামঞ্জুর করেন সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালত। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আজ জামিন আবেদন করেছিলেন। শুনানি শেষে বিচারক মো. আবদুর রহিম এক আদেশে জামিন নামঞ্জুর করেছেন।
আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জামিন আবেদনে রায়হান হত্যায় হাসান সরাসরি জড়িত নন ও মামলার এজাহারভুক্ত আসামি নন বলে উল্লেখ করে জামিন প্রার্থনা করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন।
এ ব্যাপারে মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) নওশাদ আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘আমি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে আদালতকে বলেছি যে অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি হাসান ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ নষ্ট করেছেন। সরকারি হার্ডডিস্কে যেসব তথ্য সংরক্ষিত ছিল, তা বিনষ্ট করেছেন। মামলার আলামত গায়েব করে প্রধান আসামি এসআই আকবরকে সহযোগিতা করায় হত্যা মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি হয়েছেন।
মামলাটিতে শুধু পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগ নয়, দণ্ডবিধির ৩০২ ও ৩৪ ধারায় অভিযোগ রয়েছে। বিচারপ্রক্রিয়ায় থাকা হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিকে জামিন দেওয়া হলে বিচার বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। এসব যুক্তি উপস্থাপন করায় আদালত জামিন নামঞ্জুর করেছেন।’
একই আদালতে ২ জুন মামলার প্রধান আসামি বরখাস্ত হওয়া উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়ার জামিন আবেদন করা হলে রাষ্ট্রপক্ষের বিরোধিতায় নামঞ্জুর হয়।
এরপর ১৩ জুন মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত ৩ নম্বর আসামি কনস্টেবল মো. হারুন অর রশিদের জামিন আবেদন করা হলে ভার্চ্যুয়াল শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের বিরোধিতায় জামিন নামঞ্জুর হয়। তৃতীয় পর্যায়ে প্রায় আড়াই মাসের মাথায় মো. হাসান উদ্দিনের জামিন আবেদন করা হয়।
গত বছরের ১০ অক্টোবর মধ্যরাতে সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে রায়হান আহমদকে নির্যাতন করা হয়। ১১ অক্টোবর তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে রায়হানের স্ত্রীর করা মামলার পর
মহানগর পুলিশের একটি অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত করে ফাঁড়িতে নিয়ে রায়হানকে নির্যাতনের সত্যতা পায়। ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চারজনকে ১২ অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর পুলিশি হেফাজত থেকে কনস্টেবল হারুনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
তবে প্রধান অভিযুক্ত আকবর ১৩ অক্টোবর পুলিশি হেফাজত থেকে পালিয়ে ভারতে চলে যান। ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে আকবর পালিয়ে যাওয়ার পরদিন ১৪ অক্টোবর বন্দরবাজার ফাঁড়ির টুআইসি পদে থাকা এসআই মো. হাসান উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়। পিবিআইয়ের তদন্তের সর্বশেষ পর্যায়ে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্রে তাঁকে চতুর্থ আসামি করা হয়েছে।
আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ৫ মে আলোচিত এ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় মামলার তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই। অভিযোগপত্রে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই (সাময়িক বরখাস্ত) আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে (৩২) প্রধান অভিযুক্ত করা হয়।
অন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আশেক এলাহী (৪৩), কনস্টেবল মো. হারুন অর রশিদ (৩২), টিটু চন্দ্র দাস (৩৮), ফাঁড়ির টুইআইসি পদে থাকা সাময়িক বরখাস্ত এসআই মো. হাসান উদ্দিন (৩২) ও এসআই আকবরের আত্মীয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সংবাদকর্মী আবদুল্লাহ আল নোমান (৩২)।
প্রতিষ্ঠাতা : মেজর (অব) মোঃ মোদাচ্ছের হোসাইন, সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি: বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: তৌহিদ আহমেদে রেজা, বার্তা সম্পাদক: আসমা আহমেদ কর্তৃক ৫৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সৈয়দ ভবন, ঢাকা-১২১৩ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত
© All rights reserved 2020 Daily Surjodoy