অনলাইন ডেস্কঃ
নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে জিনজিয়াংয়ে উইঘুর মুসলিমদের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মুসলিম নারীদের দেহে জোর করে জন্মনিয়ন্ত্রণকারী যন্ত্র বাসনো বা বন্ধ্যা করানোর কার্যক্রম পরিচালনা করছে চীন। চীনা গবেষক আদ্রিয়ান জেনজের লেখা এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর এই ঘটনার তদন্ত করতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক নানা মহল। চীন অবশ্য এই রিপোর্টের দাবিগুলোকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। উইঘুরদের ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখার কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই চীনের সমালোচনা হচ্ছে। ধারণা করা হয়, চীনে প্রায় ১০ লাখ উইঘুর ও অন্যান্য জাতির মুসলিম সংখ্যালঘুদের ‘নতুন করে শিক্ষা’ দেয়ার উদ্দেশ্যে ক্যাম্পে বন্দি করে রাখা হয়েছে। শুরুতে চীন এসব ক্যাম্পের অস্তিত্ব অস্বীকার করলেও পরে তারা দাবি করে যে সন্ত্রাসবাদ দমনের লক্ষ্যে এই ধরনের ক্যাম্প পরিচালনা করা জরুরি পদক্ষেপ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উইঘুরদের বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপের কারণে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়ে চীন। ২০১৯ সালে বিবিসি’র করা এক তদন্তে উঠে আসে যে, জিনজিয়াংয়ের মুসলিম শিশুদের তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে যেন তারা মুসলিম সম্প্রদায়ের থেকে আলাদা হয়ে বড় হয়। কী উঠে এসেছে রিপোর্টে? ওই অঞ্চলের আনুষ্ঠানিক তথ্য, আইনি কাগজপত্র এবং জিনজিয়াংয়ের নৃতাত্ত্বিকভাবে সংখ্যালঘু নারীদের বক্তব্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয় আদ্রিয়ান জেনজের রিপোর্টটি। রিপোর্টে অভিযোগ তোলা হয় যে সরকারি নির্ধারিত সংখ্যার চেয়ে বেশি সংখ্যায় সন্তান জন্ম দেওয়ায় উইঘুর ও অন্যান্য সংখ্যালঘু নারীদের ক্যাম্পে বন্দি করে রাখার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। রিপোর্টে আরো দাবি করা হচ্ছে, যেসব নারী দুটির চেয়ে কম সন্তান জন্ম দিতে আইনিভাবে বৈধ, তাদের জরায়ুতে আইইউডি (ইন্ট্রা-ইউটেরিন ডিভাইস যেটি সাধারণত ৫ থেকে ১০ বছরের জন্য নারীদের গর্ভধারণ করা থেকে বিরত রাখে) প্রবেশ করানো হচ্ছে এবং অন্যদের বন্ধ্যা করানোর উদ্দেশ্যে জোর করে সার্জারি করানো হচ্ছে। জেনজের বিশ্লেষণ অনুযায়ী জিনজিয়াংয়ের জনসংখ্যার স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধির হারে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে।সংবাদ সংস্থা এপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেনজ বলেন, জনসংখ্যার বৃদ্ধিতে এই ধরনের পতন অভূতপূর্ব, এখানে নির্মম একটা বিষয় রয়েছে। এটি উইঘুরদের বশে আনার জন্য বিস্তৃত একটি পরিকল্পনার অংশ। জিনজিয়াংয়ের বন্দিশিবিরে থাকা সাবেক সদস্যদের বক্তব্যে উঠে আসে, সেখানে থাকা নারীদের গর্ভ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে তাদের মাসিক বন্ধ করতে বিভিন্ন রকম ওষুধ প্রয়োগ করা হতো তাদের ওপর। রিপোর্টে বলা হয়, সামগ্রিকভাবে দেখলে মনে হয়, তিন বা তার চেয়ে বেশি সংখ্যক সন্তান আছে যেসব নারীর, তাদের ঢালাওভাবে বন্ধ্যা করার লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ।চীনের গোপন ক্যাম্প সোমবার প্রকাশিত হওয়া অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের রিপোর্ট অনুযায়ী জিনজিয়াংয়ের নারীরা আইনিভাবে বৈধ সংখ্যার চেয়ে বেশি সংখ্যায় সন্তান জন্ম দেওয়ার কারণে বড় অঙ্কের জরিমানা ও ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার হুমকির মুখে পড়ছে। এপি’র একটি খবর অনুযায়ী, চীনে জন্ম নেওয়া কাজাখ নারী গুলনার ওমিরজাখ তার তৃতীয় সন্তান জন্ম দেওয়ার পর তার জরায়ুতে আইইউডি প্রবেশ করাতে নির্দেশ দেওয়া হয়। দুই বছর পর, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে, সেনাবাহিনীর ছদ্মবেশে চারজন কর্মকর্তা তিনদিনের মধ্যে ১৭,৫০০ আরএমবি (২ হাজার পাউন্ড) জরিমানা দিতে নির্দেশ দেয় ওমিরজাখকে। দুটির বেশি সন্তান থাকাকে ওমিরজাখের অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে তারা। কর্তৃপক্ষের হেফাজতে থাকা এক সকজি বিক্রেতার কপর্দকহীন স্ত্রী ও মিরজাখকে হুমকি দেওয়া হয় যে জরিমানার টাকা না দিলে তাকেও তার স্বামীর মত বন্দিশিবিরে নেয়া হবে। সোমবার প্রকাশিত হওয়া রিপোর্টের দাবিগুলোকে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘ভিত্তিহীন’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে এবং এই রিপোর্টের পেছনে ‘প্রচ্ছন্ন কারণ’ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছে। গণমাধ্যমগুলো ‘জিনজিয়াং সম্পর্কিত বিষয়ে মিথ্যা তথ্য বানাচ্ছে’ অভিযোগ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান মন্তব্য করেছেন। চীনের এক সন্তান নীতি অনুযায়ী কয়েক দশক ধরে শহরে থাকা সংখ্যালঘুদের সর্বোচ্চ দুটি সন্তান জন্ম দেয়ার অনুমতি দেওয়া হয় আসছে, যেখানে গ্রামে বাস করা সংখ্যালঘুদের জন্য এই সংখ্যা ছিল তিনটি। ২০১৭ সালে শি জিনপিংয়ের অধীনে হওয়া নীতিগত পরিবর্তনে জাতিগত প্রভেদটি বাদ দেয়া হয় এবং হান বংশদ্ভূত চীনাদের সংখ্যালঘুদের সমান সন্তান নেয়ার অনুমতি দেয়া হয়। জেনজের রিপোর্টে জিনজিয়াংয়ে জোরপূর্বক জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে উগরদের ‘গণহত্যার উদ্দেশ্যে জনতাত্বিক ক্যাম্পেইন’ হিসেবে বিবৃত করা হয়েছে।