নিরেন দাস,জয়পুরহাটঃ-
জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে চাকুরী নামক সোনার হরিণ হাতে পাওয়ার আগেই লাশ হতে হলো সাগর ইসলাম (২৫) নামের এক যুবককে।
নিহত সাগর গত ২৩শে মার্চ মঙ্গলবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রনায়ের অফিস সহায়ক পদে যোগদানের উদ্দেশ্য ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। ২৫ শে মার্চ বৃহস্প্রতিবার তার কর্মস্থলে যোগদানের কথা থাকলেও ঐদিন নারায়নগঞ্জের সোনাগাঁও উপজেলার বৈদ্যরবাজার-বারদী সড়কের খংশারদীর ব্রীজের নিচ থেকে তার লাশ উদ্ধার করে সোনাগাঁও থানা পুলিশ। নিহত ঐ যুবক উপজেলার ধরঞ্জী ইউনিয়নের নন্দইল গ্রামের আব্দুর রশিদের পুত্র বলে জানা গেছে।
নিহতের বাবা আব্দুর রশিদ সাংবাদিকদের জানান, প্রতিবেশি উচনা গ্রামের মৃত মজিবর রহমানের ছেলে আব্দুর রউফের মাধ্যমে একই উপজেলার হরেন্দা গ্রামের আফাজ উদ্দিনের পুত্র গোলাম রসুল মাস্টার, একই গ্রামের মোহাম্মদ মাস্টারের ছেলে আব্দুল আলিম ও হাসান বুক ডিপোর জননী প্রকাশনীর জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধি রবির সঙ্গে পরিচয় ঘটে। মূলত রবির বাড়ী গাইবান্ধা জেলায় বলে জানা যায়। এই পরিচয়ের সূত্র ধরে আব্দুর রশিদের ছেলে সাগরকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ে চাকুরী দিবে মর্মে ৫ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা এই চক্রটি হাতিয়ে নেয়।
গোলাম রসুল, আব্দুল আলীম ও রবি মোবাইল ফোনে রশিদকে জানান, তার ছেলের নিয়োগপত্র হয়েছে। বাঁকী টাকা নিয়ে ঢাকায় আসতে বলেন। তাদের কথায় গত ২৩শে মার্চ রশিদ ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় যান এবং ২৪/০৩/২০২১ইং ঢাকার আশুলিয়া থানার কালশি নামকস্থানে কর্নেল পরিচয় দানকারী মাসুদুর রহমান এবং সহকারী আব্দুল হালিম নামক ব্যক্তির হাতে ১লক্ষ ১০ হাজার টাকা দিলে রশিদের হাতে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাঅধিদপ্তরসহ অঙ্গ বাহিনী সংস্থা সমূহের সাংগাঠনিক কাঠামো ভূক্ত বিজ্ঞপ্তি স্বারক নং-২৩.১৭০০০০.০১.০৪.০৩৮.১৯.১৬২২, এর অনুযায়ী সুপারিশক্রমে অফিস সহায়ক পদে গত ২৫/০৩/২০২১ই তারিখ যোগদানের জন্য একটি নিয়োগ পত্র প্রদান করেন এবং বলেন, আপনার ছেলের চাকুরী হয়েছে। আপনি বাড়ীতে চলে যান।
এমতবস্থায় গত ২৫ শে মার্চ নারায়নগঞ্জের সোনাগাঁও থানা পুলিশ বৈদ্যরবাজার-বারদী সড়কের খংশারদীর ব্রীজের নিচ থেকে অজ্ঞাতনামা লাশ হিসাবে সাগরকে উদ্ধার ও লাশের ময়নাতন্ত পূর্বক দাফন করে ঐদিনই পুলিশ বাদী হয়ে সোনাগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং ২৭।
অপরদিকে লাশের সঙ্গে থাকা মোবাইল সিমের এনআইডির সূত্রে উপজেলার শ্রীমন্তপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী কামরুজ্জামন কাবুর। সোনারগাঁও থানা পুলিশ পাঁচবিবি থানায় পাঠানো এমন তথ্যের সুত্র ধরে গত ১লা এপ্রিল রাতে নিহত সাগরের পরিচয় পান পাঁচবিবি থানা পুলিশ।
এবিষয়ে শ্রীপুর থানার এস আই সাদেকুল ইসলাম জানান, গত ২৯/০৩/২১ তারিখে রংপুরের মিঠাপুকুর থানার কাঁঠালী নয়াপাড়া গ্রামের দবিরুল ইসলামের ছেলে কবির হাসান বাবু (২২) নামের একজনের লাশ সার্ফারী পার্কে পাওয়া যায়। ঐ মামলার সূত্রধরে ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার গালিমপুর গ্রামের রোস্তম আলীর ছেলে মাসুদুর রহমান (২৭) ও একই জেলার জালালপুর গ্রামের আব্দুল হাকিমের ছেলে মোঃ আব্দুল হালিম (৩৬) কে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাহারা স্বীকার করেন যে, কবির হাসান বাবু ও পাঁচবিবি সাগর ইসলাম কে হত্যা করেছে।
এ বিষয়ে সোনাগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রফিকুল ইসলাম জাতীয় সূর্যোদয়কে মুঠোফোনে জানান, ২৫ তারিখ সকাল সাড়ে ৭টায় স্থানীয় লোকদের খবরের ভিত্তিতে খংশারদীর ব্রীজের নিচ থেকে অজ্ঞাতনামা যুবকের লাশটি উদ্ধার করি। এই জঘন্যতম হত্যার সাথে ইতিমধ্যে যাহারা জড়িত তাদের দুইজনকে শ্রীপুর থানা গ্রেফতার করতে সম্ভব হয়েছে এবং এবং বাঁকীদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
পাঁচবিবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পলাশ চন্দ্র দেব জাতীয় দৈনিক সূর্যোদয়কে বলেন, সোনারগাঁও থানার হত্যা মামলার তদন্ত অগ্রগতির ক্ষেত্রে আমরা শুধু তাদের কে সহযোগিতা করছি। টাকা লেন-দেনের বিষয়ে পাঁচবিবি উপজেলার উচনা গ্রামের মৃত মজিবর রহমানের ছেলে আব্দুর রউফকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল শুক্রবার রাতে আটক করা হয়েছে। এদিকে শনিবার সকালে নিহত সাগরের লাশ সোনারগাঁও থেকে নিজ গ্রামে নিয়ে এসে দাফন সম্পূর্ণ করা হয়।